Advertisement
Advertisement

Breaking News

Domestic Animals

তীব্র দহনে বাড়ছে অসুস্থতার আশঙ্কা, জেনে নিন গবাদি প্রাণীর সুরক্ষার দাওয়াই

প্রাণীদের সুস্থ রাখতে এই পদক্ষেপ নিতে ভুলবেন না।

How to take care of domestic animals during summer
Published by: Sayani Sen
  • Posted:May 1, 2024 6:09 pm
  • Updated:May 1, 2024 6:09 pm  

ভারতীয় উপমহাদেশে মার্চ-মে মাস পর্যন্ত হিটওয়েভ বা তাপপ্রবাহের দাপট দেখা যায়। অত্যধিক গরমে গবাদি পশু-সহ বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে হিটস্ট্রোক, ডায়েরিয়া, ফুড পয়জনিং, ডিহাইড্রেশন, পেশিতে খিঁচুনি প্রভৃতি শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে প্রাণীদের সুস্থ রাখতে পদক্ষেপ জরুরি। লিখেছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুবিজ্ঞান বিভাগের গবেষক সুমনকুমার সূত্রধর ও ডঃ পার্থসারথি চক্রবর্তী।

প্রখর রোদ, সঙ্গে তাপপ্রবাহ এই নিয়েই গ্রীষ্মকাল। ক্রমশ পরিবর্তিত জলবায়ুর সাথে দোসর হয়ে বাড়ছে তাপমাত্রা। যার প্রাধান কারণগুলি হল যথেচ্ছ ভাবে গাছ কাটা বা বনভূমি সাফ করে দেওয়া, নতুন বৃক্ষরোপণ না করা, পরিবেশবিদদের কথা অগ্রাহ্য করে কলকারখানার বাড়বাড়ান্ত এবং দূষিত বর্জ্য পদার্থ পরিবেশেই ছড়িয়ে দেওয়া, ইট-কাঠ-পাথরের সাম্রাজ্য বিস্তার করা। এছাড়া অত্যধিক যানবাহন, এসি প্রভৃতির ব্যবহার পরিবেশে গ্রিন হাউস গ্যাসের আধিক্য বাড়িয়েছে। যার ফলে উষ্ণতার পারদ ক্রমশ উপরের দিকেই উঠে চলেছে। এতদিন শহরের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেশি থাকলেও গ্রামের আবহাওয়া কিছুটা ঠাণ্ডা ছিল। কিন্তু বর্তমানে শহরের সাথে পাল্লা দিয়ে গ্রামের উষ্ণতা সার্বিক ভাবে যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃক্ষ ছেদনের ফলে বাতাসও ভীষণভাবে দূষিত হচ্ছে। কৃষি জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে এবং জমিতে থাকা উপকারী জীবাণুগুলিও মারা যাচ্ছে।

Advertisement

বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তীব্র ‘লু’ বা তাপপ্রবাহের (heat wave) দাবদাহ বাড়তে শুরু করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশে মার্চ থেকে মে মাস অবধি হিট-ওয়েভের দাপট দেখা যায়। যেসব এলাকায় হিট-ওয়েভ প্রবাহিত হয়, সেসব এলাকার ফসল এবং গাছ ঝলসে উৎপাদন কমে যায়। আবার জনজীবন এবং পশু পালনেও এর ক্ষতিকর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। অত্যধিক গরমে প্রাণীর মধ্যে হিটস্ট্রোক, ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিং, ডিহাইড্রেশন, পেশীতে খিঁচুনি প্রভৃতি শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে প্রাণীদের সুস্থ রাখতে আমাদের কী কী করা উচিৎ বা আক্রান্ত প্রাণীর প্রাথমিক চিকিৎসা কি হওয়া উচিৎ তা আমাদের প্রত্যেকেরই জেনে রাখা প্রয়োজন।

কী করবেন
* প্রাণীদের বাইরে বের করতে হলে বা চরাতে নিয়ে গেলে তা সকাল ৬ টা থেকে ১১ টার মধ্যে অথবা বিকাল ৪ টের পর করা উচিৎ।
* প্রাণীকে ছায়ার মধ্যে রাখুন। পশুগুলিকে যেখানে রাখা হয় সেখানে পাখার ব্যবস্থা করা গেলে অতি উত্তম।
* তৃষ্ণার্তবোধ না করলেও নির্দিষ্ট সময় অন্তর ঠাণ্ডা জল পান করান। সম্ভব হলে বড় প্রাণীদের (গরু, মহিষ, ছাগল প্রভৃতিকে) গুড় গোলা জলে লবণ মিশিয়ে পান করান। আবার ছোট প্রাণী (কুকুর, বিড়াল) বা পাখিদের গ্লুকোজ বা ওআরএস গোলা জল পান করান।
* প্রয়োজনের থেকে কম এবং সহজপাচ্য খাবার খেতে দিন। জলীয় অংশ বেশি আছে এমন ফল যেমন তরমুজ, শসা ইত্যাদি খেতে দিন।
* প্রাণীদের নিয়মিত ঠাণ্ডা জলে স্নান করিয়ে দিন।
* প্রাণীর ঘর ঠাণ্ডা করতে পর্দা, চটের বস্তা, খসখস প্রভৃতি ভিজিয়ে ব্যবহার করুন। ঘরের চাল যদি টিন বা অ্যাসবেস্টারের হয় তাহলে তার উপর খড় বিছিয়ে দিন।
* পোষ্য নয় এমন বাইরের পশু-পাখিদের জন্য বিভিন্ন স্থানে ঠাণ্ডা পানীয় জল এবং খাবারের ব্যবস্থা রাখুন।
* পাখিরা যাতে স্নান করতে পারে তেমন পাত্রে জল রাখুন।
* প্রাণী অসুস্থ হলে, দেরী না করে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

[আরও পড়ুন: সবুজ বিপ্লব! ২৫০ টাকার সুগন্ধী ধান ফলাচ্ছে সুন্দরবন]

কী করবেন না
* সকাল ১১ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত প্রখর সূর্যালোকে প্রাণীকে রাখবেন না।
* দিনের বেলার তীব্র রোদে প্রাণীদের দিয়ে বেশি পরিশ্রমসাধ্য কাজ করাবেন না।
* থামিয়ে রাখা গাড়িতে অথবা গৃহবন্দি অবস্থায় পশুপাখিদের রেখে যাবেন না।
* বেশি প্রোটিনযুক্ত ও মশলাদার খাবার খাওয়াবেন না।
* খাঁচার পশুপাখিদের রোদে রাখবেন না।
তাপপ্রবাহের প্রভাবে গ্রীষ্মকালে যেসব রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, সেই রোগগুলির লক্ষণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
হিটস্ট্রোক
গ্রীষ্মকালে তীব্র গরম এবং অসহ্য আর্দ্রতার ফলে প্রাণীর হিটস্ট্রোক হতে পারে। গ্রীষ্মের রোদে শারীরিক পরিশ্রম করলে বা ছোটাছুটি করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হিটস্ট্রোক হয়। অনেকসময় বদ্ধ ঘর বা গাড়ির মধ্যে দীর্ঘসময় প্রাণী আবদ্ধ থাকলে অথবা রক্তচাপের হেরফেরে হিটস্ট্রোক হতে পারে। হিটস্ট্রোকের অপর নাম সানস্ট্রোক বা হাইপার্থার্মিয়া। হিটস্ট্রোকে প্রাণীটি অত্যধিক পরিমাণে হাঁপাতে থাকে। শরীর টলমল করতে থাকে। হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যায়। হঠাৎ করে শরীরের তাপমাত্রা খুব বেড়ে যায়। শরীরে তীব্র জলাভাব অর্থাৎ ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। ছোট প্রাণীদের যেমন কুকুর, বিড়ালের বমি হতে পারে। কখনও আবার বমির সাথে রক্তও আসতে থাকে। মাড়ি লাল বর্ণ ধারণ করে। অনেকসময় খিঁচুনি হতে পারে বা অচৈতন্য হয়ে পড়ে।
চিকিৎসা
আক্রান্ত প্রাণীটিকে ছায়াযুক্ত অপেক্ষাকৃত শীতল স্থানে নিয়ে যেতে হবে। সারা শরীরে ঠাণ্ডা জল ঢালতে হবে। পাখার ব্যবস্থা করতে পারলে ভাল। ফ্লুইড থেরাপি অর্থাৎ গ্লুকোজ, স্যালাইন, প্লাজমা, নুন-চিনির জল, গুড় গোলা জল, ওআরএস, ঠাণ্ডা জল প্রভৃতি খাওয়াতে হবে। পোষ্যকে আইসক্রিম খাওয়ানো যেতে পারে। অথবা পথ্য হিসাবে দই বা ঘোল মেখে ভাত খাওয়ানো যেতে পারে। অবস্থার উন্নতি না হলে বা প্রাণী অজ্ঞান হয়ে গেলে দ্রুত নিকটবর্তী প্রাণী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
ডায়েরিয়া বা উদরাময়
যে কোনও বয়সের প্রাণীই এই রোগে আক্রান্ত হলেও বাচ্চাদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব সবথেকে বেশি। আবার সব ঋতুতেই এর প্রভাব থাকলেও, গ্রীষ্মকালের অত্যধিক গরমে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। প্রথমে পেটের যন্ত্রণা হতে থাকে। শুরুর দিকে শক্ত পায়খানা হলেও, তারপর জলের মতো পাতলা পায়খানা হতে থাকে। কখনও আবার পাতলা পায়খানার সাথে আমাশা বা রক্ত আসতে দেখা যায়। কিছুক্ষেত্রে বমিও হতে পারে। ডায়েরিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করলে শরীরে জলের পরিমাণ খুব দ্রুত কমতে থাকে। তখন মূত্রের পরিমাণ কমতে থাকে, অনেকসময় মূত্র সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। প্রাণীটি ক্রমশ দুর্বল হতে হতে শিথিল হয়ে পড়ে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে, অতিরিক্ত ডিহাইড্রেশনের প্রভাবে প্রাণীটি মারা যেতে পারে।
চিকিৎসা
এই অবস্থা হলে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা কোনও খাবার না দেওয়াই ভাল। তখন শুধু বরফ জল খাওয়ানো উচিৎ। শরীরে জলের অভাব মেটানোর জন্য ঠাণ্ডা জল, নুন-চিনির জল বা Oral Rehydration Solution (ORS) পান করাতে হবে। প্রয়োজনে স্যালাইন দিতে হবে। পাতলা পায়খানার জন্য ডায়েরিয়ারোধক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
ডিহাইড্রেশন
অত্যধিক গরমে শরীরে তীব্র জল সঙ্কট দেখা দেয় তাকেই ডিহাইড্রেশন বলে। প্রাণীটি ক্রমশ দুর্বল হতে হতে শিথিল হয়ে পড়ে। দীর্ঘক্ষণ শরীরে জল সঙ্কট থাকলে মস্তিষ্ক তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে, অতিরিক্ত ডিহাইড্রেশনের প্রভাবে প্রাণীটি মারা যেতে পারে।
চিকিৎসা
যত বেশি সম্ভব ঠাণ্ডা জল পান করাতে হবে; সাথে ওআরএস, গ্লুকোজ, স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে। খাদ্য হিসাবে সবুজ শাকসবজি যাতে জলের পরিমাণ বেশি আছে তা খাওয়াতে হবে।

[আরও পড়ুন: নগরায়ণের ধাক্কায় জমির অভাব? ব্যালকনিতেই করুন ‘বিষ’মুক্ত সবজি চাষ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement