অতি অল্প পরিসরে সীমাবদ্ধ হলেও এই ফুল আগামী দিনে ফুলচাষিদের লাভের মুখ দেখাবে আশা করা যায়। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সমগ্র দেশে তথা বিদেশেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। লিখেছেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্প ও ভূমি চিত্রায়ন বিভাগের গবেষক তীর্থরাজ রায়।
একবর্ষজীবী অথবা বহুবর্ষজীবী জিপসোফিলা ফুলের উৎপত্তি ককেসাস অঞ্চলে। ভারতবর্ষে এই ফুলের উৎপাদনের বেশিরভাগটাই আসে পুণে ও বেঙ্গালুরু থেকে। তবে গুজরাত, পাঞ্জাব, রাজস্থান এবং জম্মু ও কাশ্মীরেও এর উৎপাদন হয়। পুষ্পসজ্জায় ও ফুলের তোড়ায় লাল গোলাপের সঙ্গে সাদা জিপসোফিলা অপরূপ শোভা বর্ধন করে। ড্রাই ফ্লাওয়ার হিসাবেও এর চাহিদা ব্যাপক। বাগানের বেডে, শুষ্ক দেওয়ালে এবং পাথরের মধ্যবর্তী অঞ্চলেও এটিকে লাগানো যেতে পারে।
জাত নির্বাচন
জিগসোফিলার প্রায় ১০০টি প্রজাতির অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও সাধারণভাবে দু’টি প্রজাতিকে বাণিজ্যিক চাষের জন্য বেছে নেওয়া হয়।
জিপসোফিলা এলিগ্যান্স
একবর্ষজীবী এই প্রজাতিটির উন্নত জাতগুলি হল জায়ান্ট হোয়াইট (সাদা), ব্রাইট রোজ (গোলাপি), রেড ক্লাউড, রোজিয়া ইত্যাদি।
জিপসোফিলা প্যানিকিউল্যাটা
ব্রিস্টল ফেয়ারি (সাদা), ফ্লেমিঙ্গো (গোলাপি), কমপ্যাক্টা প্লেনা এই বহুবর্ষজীবী প্রজাতিটির উন্নত জাত।
আবহাওয়া ও মাটি
সাধারণভাবে ২৬ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস দিনের তাপমাত্রা, ১৮-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাতের তাপমাত্রা এবং ৬০-৭০ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতা জিপসোফিলা চাষের উপযোগী। এর চাষের জন্য দিনের দৈর্ঘ্য লম্বা হওয়া প্রয়োজন। দৈনিক ১৪ ঘণ্টা দিনের দৈর্ঘ্য গাছে ফুল আনতে সাহায্য করে। সেইজন্য উপযুক্ত সময়ে কৃত্রিম আলো (১০০ ওয়াট বাল্ব) বেড থেকে ২ মিটার উচ্চতায় ৩ মিঃ x ৩মিঃ দূরত্বে বসাতে হবে। রাতের তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে অধিক দিনের দৈর্ঘ্যে গাছে ফুল আনা সম্ভব হবে না। ভাল জলনিকাশিযুক্ত সামান্য চুনযুক্ত এবং ৫.৫ থেকে ৬.৫ পিএইচ-যুক্ত মাটি এর জন্য উপযুক্ত।
বংশবিস্তার
ডবল পাপড়িযুক্ত ফুল পেতে গাছগুলিকে ৮ সেন্টিমিটার লম্বা কাণ্ড থেকে কাটিং প্রস্তুত করে রোপণ করতে হবে। কাটিং তৈরির সময় পাতাগুলিকে বাদ দিয়ে কাটিংটিকে মিস্ট চেম্বারের নিচে মিডিয়াতে রোপণ করতে হবে।
জমি তৈরি
পলিহাউসে ডবল রো বেডে এটিকে লাগাতে হবে। বেডের উচ্চতা ৩০ সেমি, চওড়া ১ মি. এবং দুটি পাশাপাশি বেডের দূরত্ব ৫০ সেমি. থাকতে হবে। সোলারাইজেশনের মাধ্যমে মাটিকে ফাঙ্গাসমুক্ত করতে হবে।
চারাগাছ রোপণ
একবার রোপণে বছর প্রতি ২ বার খোলামাঠে ফসল পাওয়া গেলেও পলিহাউসে বৃষ্টির প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বছর প্রতি ৩ বার ফসল পাওয়া সম্ভব। পশ্চিমবঙ্গে এই গাছের কাটিং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে রোপণ করতে হবে। ফুল পাওয়া যাবে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব এবং গাছপ্রতি দূরত্ব যথাক্রমে ৫০ সেমি. এবং ৩০ সেমি. রাখতে হবে।
সার প্রয়োগ
পলিহাউসে ফার্টিগেশনের মাধ্যমে জলের সঙ্গে সার প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে চারা রোপণের একসপ্তাহ পর ১৯:১৯:১৯ এবং ক্যালশিয়াম নাইট্রেট প্রয়োগ করতে হবে। পরবর্তীতে এটিই রোপণের ৩ এবং ৭ সপ্তাহ পর পুনরায় প্রয়োগ করতে হবে।
গাছের পরিচর্যা
জিপসোফিলা গাছ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যাতে হেলে পড়ে না যায় সেই জন্য নেটের ব্যবহার অবশ্যই করা দরকার। গাছের উচ্চতা যখন ৩০ সেমি. হবে, তখন ২০ সেমি. x ২০ সেমি. এর প্রথম নেট দিতে হবে। দ্বিতীয়টি যখন উচ্চতা ৪৫ সেমি. হবে, তখন এবং ৬০ সেমি.-তে চারপাশে নাইলনের নেট দিয়ে ঘিরে দিতে হবে যাতে গাছ পড়ে না যায়। এটি গাছে পিঞ্চিং করার পূর্বে রোপণের ৩ সপ্তাহের মধ্যে করতে হবে। গাছে যখন ৮ থেকে ১০ জোড়া পাতা হবে তখন প্রথম পিঞ্চিং করতে হবে। এটি সাধারণত রোপণের ৫-৬ সপ্তাহ পরই করা হয়ে থাকে। পিঞ্চিং এর পর ফাঙ্গিসাইড প্রয়োগ করতে হবে।
ফসল উত্তোলন ও ফলন
সাধারণত একটি পুষ্পমঞ্জরীতে সবচেয়ে উপরের ফুলগুলি সবেমাত্র খুলতে শুরু করলে ফসল তুলে নেওয়া হয়। গাছের নিচের থেকে ১০ সেমি. ছেড়ে গাছের ডগাগুলিকে কেটে নেওয়া হয়।গাছ প্রতি প্রতিটি ফ্লাশে (বছরে ২/৩টি ফ্লাশ পাওয়া যায়) ১০-১২টি ডাল পাওয়া যায় প্রতি বছরে।২৫টি ফুলের ডালকে একজায়গায় গুচ্ছ করে পলিথিন স্লিভে ভরে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
রোগপোকার আক্রমণ
মূল ও কাণ্ডের পচন, পাওডারি মিল্ডিউ, ড্যাম্পিং অফ ইত্যাদি রোগ এতে দেখা যায়। ক্যাপ্টান, সিরাম ইত্যাদি ফাঙ্গিসাইড ব্যবহার করে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। উপযুক্ত ইনসেক্টিসাইড ব্যবহার করে রেড স্পাইডার মাইট, লিপ হপার, লিফ মাইনর ইত্যাদির আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.