শাহাজাদ হোসেন, ফরাক্কা: বর্ষার পর গঙ্গার জলস্তর কমতে শুরু করলেই দেখা মেলে ইলিশের (Ilish)। তাই অপেক্ষায় থাকেন মৎস্যজীবীরা। চলতি বছরে বর্ষা বিদায় নিয়ে শীতের আমেজ এসেছে বঙ্গে। তবুও দেখা নেই ইলিশের। এমন পরিস্থিতিতে হতাশাগ্রস্ত গঙ্গার পাড়ের ফরাক্কার মৎস্যজীবীরা।
বরাবরই মৎস্যজীবীদের লক্ষ্য থাকে, এই মরশুমে তাঁরা যা আয় করবেন, তা দিয়েই সারা বছর সংসার চালাবেন। এই আশায় কেউ বা মহাজনের কাছে অগ্রিম নিয়ে নতুন নৌকো তৈরি করেছেন। কেউ আবার জাল কিনেছেন। কিন্তু ইলিশের দেখা না মেলায় মাথায় হাত তাঁদের। কী করে সংসার চালাবেন? কী করে মহাজনের ঋণ শোধ করবেন? এই দুঃশ্চিন্তা তাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। খাদ্যরসিক বাঙালির প্রিয় মাছ। ফরাক্কার গঙ্গা ও ফিডার ক্যানালের ইলিশের কদর অপরিসীম। ইলিশের চড়া দাম ফরাক্কায়। বর্ষা শেষ হতেই ফরাক্কার গঙ্গা ও ফিডার ক্যানালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মেলে। যদিও এবছর বর্ষার মরশুমেও সেইরকম দেখা মেলেনি ফরাক্কার ইলিশের।
নদীতে ইলিশ মাছের মরশুম সাধারণত বর্ষার শুরুতে এবং শীত পড়ার আগে পর্যন্ত। এবার বর্ষায় জল বাড়ার পাশাপাশি বন্যায় প্লাবিত হলেও, ইলিশের সেই অর্থে দেখা মেলেনি। একদিকে, করোনা আবহে ছিল দীর্ঘ লকডাউন। লকডাউন উঠতেই বর্ষার শুরু। তাই মৎস্যজীবীরা লকডাউনের হতাশামুক্ত হয়ে কিছুটি আশার আলো দেখেছিলেন। ভেবেছিলেন বর্ষার জল নামতে শুরু করলেই পাওয়া যাবে ইলিশ। কিন্তু এবার হতাশ করেছে তাদের সেই ফরাক্কার ইলিশ। স্বাদে-গন্ধে ফরাক্কার ইলিশ খানিকটা ওপার বাংলার ইলিশের মতোই। তাই ফরাক্কার ইলিশের চাহিদা ব্যাপক। দামও থাকে চড়া। গঙ্গার ইলিশ কেজি প্রতি বারোশো থেকে চোদ্দশো টাকায় বিক্রি হয়।
অপরদিকে, সুস্বাদের জন্য ফিডার ক্যানালের ইলিশের দাম ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এই ইলিশের ওপর
ভরসা করে সংসার চলে ফরাক্কা ব্লকের কয়েক হাজার মৎস্যজীবী পরিবারের। ফরাক্কা ব্লকের গঙ্গা ও ফিডার ক্যানাল ঘেঁষা গ্রামগুলি পলাশি রেল কলোনি, ২ নম্বর নিশিন্দ্রা কলোনি, বেনিয়াগ্রাম ঘাট পাড়া, হোসেনপুর, কুলিদিয়ার ও রঘুনাথপুরে মৎসজীবীদের বসতি। প্রায় হাজার দশেক নৌকো মাছ ধরার কাজে নিযুক্ত থাকে। মৎস্যজীবী রাম হালদার, শচীন হালদার ও রূপকুমার হালদার জানান, “করোনা আবহ ও লকডাউনের পর একটু আশার আলো দেখেছিলাম এবার হয়তো ইলিশ মিলবে ভাল। কিন্তু এবছর ইলিশের দেখা মিলল না। কী করে সংসার চালাব ভেবে পাচ্ছি না। কী করে যে ঋণ শোধ করব, তাও জানি না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.