আধুনিক প্রযুক্তি সহযোগে গঠিত নির্ভুল কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থারই নাম হল Precision Farming বা যথার্থ কৃষি। স্থানভিত্তিক পরিচালন ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে (দূরবর্তী সংবেদন বা Remote sensing ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা বা GIS এবং বিশ্বজনীন অবস্থান নির্ণায়ক ব্যবস্থা বা GPS) একটি স্থানিক পরিবর্তনশীলতার নিয়মিত মূল্যায়ন করা হয়। এবং সেইমতো কৃষি জমিটির মধ্যেকার ফসল এবং মাটির যে পরিবর্তন পরিলক্ষিত করা যায়, তা চিহ্নিত করে মানচিত্রে চিত্রাঙ্কিত করা হয় এবং সেই অনুযায়ী কী রূপ পরিচালন ক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে, তা ধার্য করা হয়। লিখেছেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সৌরভ রায়।
প্রথম পর্ব
কৃষিই আমাদের জাতীয় অর্থনীতির মূল মেরুদণ্ড। ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মোট সমষ্টিক অভ্যন্তরীণ বা জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ জুড়েই রয়েছে এ দেশের কৃষি ও কৃষিজ ফসলগুলো এবং ভারতীয় কৃষি দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়। সত্যিই, এই পরিসংখ্যানটি আমাদের দেশের কৃষিব্যবস্থার এক উজ্জ্বল দিক। কিন্তু প্রশ্ন হল, আর কতদিন আমাদের কৃষিব্যবস্থা দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার উত্তরোত্তর বেড়ে চলা চাহিদা মেটাতে সক্ষম থাকবে? আর তাই, জনবিস্ফোরণের বিপুল চাপ সামলাতে এবং কৃষি উৎপাদনশীলতায় বিপ্লব আনতে হলে আমাদের কৃষি ব্যবস্থায় গতানুগতিক পদ্ধতিগুলোর পাশাপাশি নতুন নতুন প্রযুক্তির সংমিশ্রণ আবশ্যিক।
উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড বীজের যথেচ্ছ ব্যবহারে এবং কৃষি রাসায়নিকের দাপটে সবুজ বিপ্লব পরবর্তী অধ্যায়ে কৃষিতে উৎপাদন বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু শিল্পায়ন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির মিলিত ফলস্বরূপ কৃষিজমির আনুভূমিক সম্প্রসারণের দরুন পথটাও ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। স্বাধীনতার ঠিক পরবর্তী সময়ে, ১৯৫২ সালে, আমাদের দেশে যেখানে মাথাপিছু জমির প্রাপ্যতা ছিল ০.৩৩ হেক্টর, সেখানে আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে হ্রাস পেতে পেতে হয়েছে ০.১৫ হেক্টর। তাই, ফসলের উৎপাদনশীলতাকে সঠিকভাবে বজায় রাখার উদ্দেশে পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার খুবই প্রাসঙ্গিক। একথা আমাদের সকলেরই জানা যে, একটি নির্দিষ্ট জমিতে ফসল ও মাটি একরূপ নয়, ভিন্ন। শেষ দশক থেকে কৃষি উৎপাদনক্ষেত্রের পরিবর্তনশীলতা পর্যবেক্ষণের তাগিদে প্রযুক্তিগত পদ্ধতির বিকাশ ঘটেছে আধুনিক বৈদ্যুতিন-সংক্রান্ত পদার্থবিদ্যা বা ইলেকট্রনিকসের হাত ধরে। এই প্রযুক্তিগত পদ্ধতিগুলো স্থানিকভাবে পরিবর্তনশীল ফসল উৎপাদন, বিশ্বজনীন অবস্থান নির্ণায়ক ব্যবস্থা সংক্রান্ত কৃষি বা জিপিএস বেসড এগ্রিকালচার, অবস্থান ভিত্তিক কৃষি এবং নির্ভূল কৃষি নামে পরিচিত।
স্থানিকভাবে পরিবর্তনশীল ফসল উৎপাদন বা Spatially variable crop production কথাটি Precision Farming বা যথার্থ কৃষি কথাটির চেয়ে বেশি সঠিক এবং বেশি বর্ণনাত্মক। আর এই নির্ভুল কৃষির ধারণাটি সুরক্ষিত কৃষি ব্যবস্থা যেমন পলিহাউস, গ্রিনহাউস এবং সেন্সর প্রভৃতির আধুনিকীকরণের মাধ্যমে বাস্তবতা পেয়েছে। বিভিন্ন প্রতিকূল জলবায়ু অঞ্চলে (যেখানে তাপমাত্রা খুব বেশি বা কম, যেখানে মাটি খুবই আম্লিক বা ক্ষারীয়, যেখানে বৃষ্টিপাত খুব বেশি বা কম) Precision Farming এর মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ব্যবস্থা কৃষিজ ফসলের চাহিদা মেটাতে এবং কৃষি উৎপাদনশীলতায় গতি আনতে যথেষ্ট সক্ষম হয়েছে। আমেরিকা, ব্রিটেন প্রভৃতি উন্নত দেশগুলোতে যেখানে কৃষি শ্রমিকদের সহজলভ্যতা নেই বললেই চলে, সেখানে Precision Farming খুবই প্রাসঙ্গিক। তথ্যপ্রযুক্তি বা Information Technology এবং কৃষিবিজ্ঞানের এক অদ্ভুত সমন্বয়ে গ্রহণসাধ্য আধুনিক সরঞ্জামের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে Precision Farming উন্নত অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগতভাবে টেকসই ফসল উৎপাদনের দিকনির্দেশ করে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.