Advertisement
Advertisement

Breaking News

Pearl Millet

রাজ্যের ২ জেলায় বাড়ছে বাজরার উৎপাদন, জেনে নিন চাষের পদ্ধতি

বর্তমানে বিশ্বে ভারত সর্বাধিক বাজরা রপ্তানি করে।

Here are the process of pearl millet cultivation । Sangbad Pratidin
Published by: Sayani Sen
  • Posted:February 14, 2024 8:14 pm
  • Updated:February 14, 2024 8:14 pm  

পার্ল মিলেট বা মুক্ত বাজরা পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ। এটি কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজগুলির একটি ভালো উৎস। সহজে জন্মানো টেকসই ফসল, যে কোনও শুষ্ক মাটির জন্য উপযুক্ত। সেচ ব্যবস্থাযুক্ত জমিতে ৩০-৩৫ কুইন্টাল দানা প্রতি হেক্টরে এবং বৃষ্টিনির্ভর চাষে ১৫-২০ কুইন্টাল প্রতি হেক্টরে দানা হয়। উৎপাদনের তুলনায় অধিক চাহিদা তৈরি হয়েছে বিশ্ব বাজারে। মুক্ত বাজরা চাষ করে কৃষক অধিক আয়ের সুযোগ করে নিতে পারেন। লিখেছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শস্য বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক সুস্মিতা মঈ ও অধ্যাপক বিকাশচন্দ্র পাত্র।

বাজরা অধিক কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার যুক্ত পুষ্টি গুণ সম্পন্ন খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে প্রাচীন কাল থেকে। আগে দেশের সর্বত্র চাষ হলেও বর্তমানে এটি হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে এখনও ভারতের, উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাটে বাজরা সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয়। আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে ও কিছু জেলা যেমন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ইত্যাদি জেলার উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া এই বাজরা চাষে ভালো ফল পাওয়া যায়। বর্তমানে বিশ্বে ভারত সর্বাধিক বাজরা রপ্তানি করে থাকে। Pearl Millet (মুক্ত বাজরা), বৈজ্ঞানিক ভাবে পেনিসেটাম গ্লুকাম নামে পরিচিত, এটি একটি শস্য ফসল যা ঘাস জাতীয় (Poaceae) পরিবারের অন্তর্গত। এটি ভারত, আফ্রিকা এবং চিন সহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে হাজার হাজার বছর ধরে চাষ হয়ে আসছে। বাংলায়, মুক্ত বাজরাকে সাধারণত ‘বাজরা’ বলা হয়। এই মুক্ত বাজরা অত্যন্ত নিম্নমানের। কিন্তু সহজে জন্মানো টেকসই ফসল, যে কোনও শুষ্ক মাটির জন্য উপযুক্ত। এগুলি অত্যন্ত ছোট ঘাসের একটি দল যা সারা বিশ্বে শস্য খাদ্য হিসাবে চাষ করা যেতে পারে। এটি এমন অঞ্চলে চাষ করা যেতে পারে যেখানে অন্যান্য খাদ্যশস্য প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে চাষ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

Advertisement

উদ্ভিদের বিবরণ
মিলেটের মধ্যে, এই মুক্ত বাজরা সব থেকে বেশি চাষ হয়ে থাকে। এটি এক থেকে আড়াই মিটার উচ্চতার ভুট্টা গাছের মতো দেখতে ঘাস জাতীয় খাড়া উদ্ভিদ। নীচের গাঁট থেকে পাশকাটি বের হয়। মূল গুচ্ছাকার, মাটির উপরের গোড়া থেকেও ঠেস মূল বের হয়। পাতা বল্লমের মতো, উপরে ও নীচে অসংখ্য লোম থাকে। পুষ্প বিন্যাস গোল, লম্বা এবং নলাকৃতি হয়ে থাকে। পুষ্প মঞ্জরীতে ফুল গুলি ঘন ভাবে সন্নিবিষ্ট থাকে। মঞ্জরীর দৈর্ঘ্য ১৫-৩৫ সেমি পর্যন্ত হয়। মঞ্জরী গায়ে দানা মুক্তোর মত দেখতে হয়।

পুষ্টিগুণ

মুক্ত বাজরা পুষ্টি গুণে পরিপূর্ণ। এটি কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ গুলির একটি ভাল উৎস। মুক্ত বাজরার প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৩৭৮ ক্যালোরি, ১১ গ্রাম প্রোটিন, ৯ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার এবং বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ যেমন আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম থাকে।

বাজরার জাত

খাদ্য পুষ্টি বেশি হিসেবে এবিভি-০৪, পুসা কম্পোজিট-৭০১, ধনশক্তি, পিএইচবি-১০, পিএইচবি-১৪, বিকে-২৩০, বিকে-৫৬০, বিডি-১১১, মল্লিকা, নাগার্জুনা খরা সহনশীল। পুষা কম্পোজিট ৪৪৩ নামে নতুন মিশ্র জাত রয়েছে এই-জাতটি জলদি উচ্চ ফলনশীল ও খরা সহনশীল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। এছাড়াও এসসিএমভি-১৫৫, ডাব্লুসিসি ৭৫, রাজ-১৭১, পুসা সুপার-৪৫০, পুসা-২৩ ইত্যাদি বাজরার জাত গুলি উল্লেখযোগ্য। এই সব বীজ ন্যাশনাল সীড কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন ফর্মে উৎপাদন করা হয়
এবং পরে বাজারের বিভিন্ন বীজ দোকানে সরবরাহ করা হয়।

[আরও পড়ুন: ধানজমিতে করুন মাছ চাষ, জেনে নিন পদ্ধতি]

উপযুক্ত আবহাওয়া
প্রায় সব রকম অনুকূল এবং প্রতিকূল আবহাওয়াতেই এই মুক্ত বাজরা চাষ করা যেতে পারে। তবে দানা পরিপক্ক হওয়ার জন্য দিনের বেলায় উচ্চ তাপমাত্রা থাকলে ভাল হয়। খরা সহনশীল হলেও গোটা মরশুম জুড়ে কম-বেশি বৃষ্টিপাত এই মুক্ত বাজরা চাষের জন্য ভাল হয়।

চাষের সময়

বাজরার ভাল ফলন পেতে জল সেচ দরকার। কাছাকাছি সেচের ব্যবস্থা আছে এমন জমিতে বাজরা চাষ করা বাঞ্চনীয়। প্রধানত জুন-জুলাই মাসে (জৈষ্ঠ্য-আষাঢ়) বাজরা চাষ করা হয়। বাজরা সময় মতো না চাষ করতে পারলে পুনঃরোপণ করেও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়।

উপযুক্ত মাটি

জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা যুক্ত প্রায় সব রকম মাটিতেই বাজরা চাষ হয়ে থাকে। তবে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা যুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি এই বাজরা চাষের জন্য বেশ উপযোগী।

জমি তৈরি

বাজরার জন্য ভাল বীজতলা তৈরি করা প্রয়োজন। বাজরার বীজ খুব ছোট, এই কারণে খেয়াল রাখতে হবে বীজ তলার মাটি যেন ঢেলা যুক্ত না হয়। এতে বীজ গজানোতে সমস্যা হবে। তাই দুই থেকে তিন বার লাঙল দেওয়া দরকার। চাষ কমপক্ষে ১৫ সেমির গভীর হলে ভাল। বাজরা চাষের জন্য উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। জমিতে কোনও ভাবেই যেন জল না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বীজ তলার মাটিতে বীজ গজানোর মতো যথেষ্ট রস থাকা দরকার।

বীজের পরিমাণ এবং রোপণ

১ হেক্টর জমির জন্য ৪-৫ কেজি বীজ যথেষ্ট। প্রতিটি সারির মধ্যবর্তী দূরত্ব ৩৫-৪০ সেমি এবং প্রতিটি গাছের মধ্যেবর্তী দূরত্ব ১০ থেকে ১২ সেমি রাখতে হবে। বীজ ২-৩ সেমি গভীরতায় বপন করতে হবে। বাজরার চাষ সাধারণত বীজ ছিটিয়ে করা হয়। এই পদ্ধতি কার্যকর না হলে আলুর মতো করে বপন করাও যেতে পারে। এতে গাছের বৃদ্ধি ভাল হবে এবং ভাল অঙ্কুরোদগম হবে।

বীজ শোধন
বাজরার বীজ বপনের আগে ২০ শতাংশ লবণের দ্রবণে ডুবিয়ে, পরিষ্কার জলে ২-৩ বার ধুয়ে নিতে হবে। এর পর প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে থিরাম মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। শোধন করা বীজ ছায়ায় শুকিয়ে বপন করতে হবে।

পুনঃরোপণ
তিন সপ্তাহ পর চারা তুলে পুনরায় রোপণ করা যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, যখন চারা তোলা হয় তখন মাটি ভিজে থাকা প্রয়োজন যাতে শিকড়ে কোনও আঘাত না লাগে। পুনঃরোপনের সময় একটি করে চারা লাগাতে হবে। প্রতিটি সারির দূরত্ব হবে ৫০ সেমি এবং প্রতিটি চারার মধ্যে দূরত্ব হবে ১০ সেমি।

সার প্রয়োগ
সাধারণত মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে সার ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও হেক্টর প্রতি ১০-১২ টন কম্পোস্ট সার ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। সাধারণত বাজরা চাষের জন্য প্রতি হেক্টরে ১০০ কেজি নাইট্রোজেন, ৫০ কেজি ফসফেট এবং ৩০-৪০ কেজি পটাশ ব্যাবহার করলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়।

সেচ ব্যবস্থা
প্রধানত, বাজরা বৃষ্টির জলে হওয়া ফসল। যথেষ্ট পরিমাণে বৃষ্টি হলে, সেচ প্রয়োজন হয় না। তবে খরা হলে দুটো সেচ প্রয়োজন হয়। বাজরা জলমগ্নতা সহ্য করতে পারে না। জল জমলে দ্রুত বের করে দিতে হবে।

আগাছা দমন
আগাছা হল বাজরার সবচেয়ে বড় শত্রু। তারা পুষ্টি, মাটি, আর্দ্রতা, সূর্যালোক এবং স্থানের জন্য ফসলের সাথে প্রতিযোগিতা করে যার ফলে ফলন কমে যায়, শস্যের গুণমান কম হয় এবং উচ্চ উৎপাদন খরচ হয়। আগাছা পোকামাকড় এবং রোগেরও আশ্রয় দান করে। অতএব, শুধুমাত্র জমি তৈরির সময় নয়, চাষের ৩ থেকে ৫ সপ্তাহ পর নিড়ানি দিতে হবে। ফুল আসার আগে পর্যন্ত ২-৩ বার নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে। এছাড়াও অ্যাট্রাজিন @ ১.২৫ কেজি। হেক্টর হিসাবে, ৪০০-৫০০ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে বীজ বপনের ২ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করলে আগাছা নিয়ন্ত্রণে ভাল ফল পাওয়া যায়।

ফলন এবং ফসল সংগ্রহ

প্রাপ্ত বয়স্ক গাছে ২০% আর্দ্রতা থাকে। অর্থাৎ গাছ প্রায় মরে শুকিয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়। খড় রঙের শস্য দেখা যায়। পুরো গাছ কেটে ফসল সংগ্রহ করতে হয়। অথবা ইয়ার হেড (শীষ) প্রথমে তোলা হয় এবং বাকি গাছ পরে কেটে ফেলা হয়। থ্রেশার বা মাড়াই মেশিন দিয়ে শীষ থেকে দানা বের করা হয় এবং এরপর বাতাসের বিপরীতে ধরে বা কুলো দিয়ে ঝাঁকিয়ে অথবা ফ্যানের বাতাসে খোসা ওড়ানো হয়। সেচ ব্যবস্থা যুক্ত জমিতে ৩০-৩৫ কুইন্টাল দানা প্রতি হেক্টরে এবং বৃষ্টি নির্ভর চাষে ১৫-২০ কুইন্টাল প্রতি হেক্টরে দানা হয়। দানা গুলো রোদে ভাল ভাবে শুকনো করা প্রয়োজন এবং সংরক্ষণের জন্য ফসলের দানার আর্দ্রতা কমিয়ে ১২-১৪% করে নেওয়া দরকার।বাজরা দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় ধরনের খাদ্য তালিকাগত ফাইবার সমৃদ্ধ একটি খাবার। এতে সর্বোচ্চ পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে (১২.৫%)। রান্না করা বাজরার এক কাপ পরিবেশন করলে প্রায় ২০৭ ক্যালোরি শক্তি সরবরাহ করে। বাজরা রুটি, বিয়ার, অন্যান্য খাবার তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। স্বাস্থ্য সচেতনার কথা মাথায় রেখে বর্তমানে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে এবং রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। উৎপাদনের তুলনায় অধিক চাহিদা তৈরি হয়েছে বিশ্ব বাজারে।

[আরও পড়ুন: শীতে দেখা নেই বৃষ্টির, উত্তরের চা বলয়ে লাভজনক ‘ফার্স্ট ফ্লাস’ নিয়ে বাড়ছে অনিশ্চয়তা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement