পুষ্টিগুণে ভরপুর অ্যাজোলা। কৃষি ক্ষেত্রে জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করা হয়। চাষের খরচও অনেক কম হয়। আবার পশুপালনেও অ্যাজোলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। গবাদি পশুকে খাওয়ালে দুধের পরিমাণ বাড়ে। মাংসের উৎপাদনও বেশি হয়। হাঁস-মুরগিকে খাওয়ালেও ভাল ফল পাওয়া যায়। আবার অ্যাজোলা চাষ করে বাজারজাত করে বিকল্প আয়েরও সুযোগ রয়েছে। লিখেছেন মেঘালয়ের ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গ্রামোন্নয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈকত মজুমদার।
অ্যাজোলা কি? অ্যাজোলা ভাসমান জলজ ফার্ন, যা আমরা প্রধানত জৈব ও সবুজ সার হিসাবে চাষের জমিতে প্রয়োগ করে থাকি। অ্যাজোলাতে প্রচুর পরিমাণ নাইট্রোজেন থাকে। তার ফলে ধান চাষের জমিতে ইউরিয়া সারের পরিবর্তে অ্যাজোলা জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। অ্যাজোলা ব্যবহার করতে মাটির উর্বরতা শক্তি অনেক গুণ বেড়ে যায়। অপর দিকে ইউরিয়া সারের প্রয়োগে মাটির উর্বরতা শক্তি কিছুটা হ্রাস পায়।
ধান চাষের জমিতে অ্যাজোলা
ধান চাষ এর ভূমিকা অনেক। ধান রোয়ার দিন ৭-১০ পর থেকে সেই জমিতে অ্যাজোলা চাষ করলে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করে। ধান গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও জলের আর্সেনিক নিয়ন্ত্রণ করে ভাল ফলন উৎপাদনে সাহায্য করে।
গবাদি পশু পালনে অ্যাজোলা
সাধারণ ঘাসের থেকে এতে ১০ গুন বেশি পুষ্টি আছে। গরু, ছাগল, শুয়োর, ভেড়া, খরগোশ, হাঁস ও মুরগির বিকল্প খাদ্য হিসাবে অ্যাজোলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন যদি চাষিভাইরা ২-৩ কেজি অ্যাজোলা বিচুলি বা দানা খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে গবাদি পশুদের খাওয়ালে খুব সহজেই তারা খুব ভাল পরিমাণ দুধ ও মাংস পেতে পারেন। দুধের উৎপাদন ২০-২৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। অ্যাজোলা খাইয়ে বাড়ির হাঁস-মুরগির ওজন প্রায় ১০-১২ গুণ বাড়ানো যেতে পারে। মাছের ভাল উৎপাদনে এর ভূমিকা অনেক। দিনে দুবার চাষিরা অ্যাজোলা খাবার হিসাবে দিলে মাছের ওজন বাড়বে ও মাছের খাবার খরচ অনকে কমে যাবে।
জৈব সার প্রস্তুত করতে অ্যাজোলা
ভার্মিকম্পস্ট তৈরি করতে অ্যাজোলা সাহায্য করে। চাষিভাইরা কেঁচো খাবার হিসাবে অ্যাজোলা ব্যবহার করতে পারেন। এতে তাঁরা খুব ভাল ফল পাবেন।
প্রাণীখাদ্য হিসাবে অ্যাজোলার গুরুত্ব
প্রাণী পালকদের কাছে বিশেষ ভাবে আবেদন তাঁরা এই অ্যাজোলা চাষ করবেন ও এই চাষের মধ্যে দিয়ে তাঁরা গবাদি পশু চাষে সাফল্য পাবেন।
অ্যাজোলা চাষের উপকরণ:
অ্যাজোলা বেড প্রস্তুতকরণ:
অ্যাজোলার বাজার মূল্য
অ্যাজোলার রোগ থেকে প্রতিকার
যখন অ্যাজোলার পাতা ও ডাঁটা লাল হয়ে যাবে তখন বুঝতে হবে রোগ হয়েছে। এক ধরনের শামুক পাতা ও ডাঁটা খেয়ে এই চাষের ক্ষতি করে। খুব ভাল করে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে এই শামুকের আক্রমণ না হয় অ্যাজোলার ট্যাঙ্কে। এক বার অ্যাজোলার রোগ ট্যাঙ্কে হলে পুরো ট্যাঙ্ক ভাল করে পরিষ্কার করে আবার অ্যাজোলার চাষ নতুন করে শুরু করতে হবে। চাষিভাইদের এই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
অ্যাজোলা চাষের প্রশিক্ষণ
কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র , কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চাষিদের এই চাষে উৎসাহিত করে থাকে যাতে তারা নিজের উদ্যোগে এই চাষ করতে পারেন। তাঁদের চাষের উন্নতির জন্য। ক্লাস্টার অর্গানাইজেশন, গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠী এই চাষের সুবিধা পেয়ে থাকে। দিন দিন রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে ও চাষিদের সাহায্য করতে সরকারি প্রতিষ্ঠান এই ধরনের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে থাকে।
অ্যাজোলার বীজ পাওয়া যাবে
কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র বিনামূল্যে বীজ চাষিদের বিতরণ করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন এনজিও এই কাজে চাষিদের সাহায্য করে থাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.