চাষি কৃষির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হন নানা কারণে। সেই সব চাষিদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে হবে। বিকল্প হিসাবে বস্তায় আদা চাষের মাধ্যমে চাষিরা স্বাধীনভাবে খুব কম পুঁজি নিয়ে তাঁদের নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। শুধু গ্রামাঞ্চল নয়, শহুরে চাষাবাদে খুব কম জায়গায় বাড়ির ছাদে, বাগানে, ফাঁকা জায়গায় এই আদা চাষ সহজেই করা যায়। এই চাষের মধ্য দিয়ে ইচ্ছুক চাষিরা অর্থনৈতিক ভাবে সাবলীল হতে পারবেন। লিখেছেন মেঘালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামোন্নয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈকত মজুমদার।
মশলা জাতীয় ফসলের মধ্যে আদা খুবই খুবই পরিচিত একটি ফসল। যা খাবাবের স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সম্পন্ন এই আদা নানা ধরনের রোগ যেমন জ্বর, সর্দি, কাশি নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আদা একটি বহুবর্ষীয় ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ যার মাটির তলার অংশ মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মেঘালয়, ওড়িশা, কর্ণাটক, অরুণাচল প্রদেশ, গুজরাট আদা চাষে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এবং সমগ্র উৎপাদনের প্রায় ৬৫ শতাংশ জোগান দেয়। আদা চাষ মাটিতে আর বস্তায় দু’রকমভাবেই করা যায়। বস্তায় আদা চাষ খুব লাভজনক, যা সহজেই করা যায়।
আদা চাষের উপযুক্ত সময়:
ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে আদা চাষ শুরু করা যায়। ফাল্গুন-চৈত্র মাস আদা উত্তোলনের উপযুক্ত সময়।
বস্তায় আদা চাষের কারণ:
বস্তায় আদা চাষের উপকরণ:
যে কোনও বস্তা, সিমেন্টের বস্তা, গোবর সার, কোকোপিট, মাটি, ছাই, রাসায়নিক সার, বীজ শোধন সার, ফুরাডান, ধানের তুষ, কাঠের গুঁড়ো, নিমের খোল ব্যবহার করা হয়।
বস্তায় কোন কোন উপকরণ কী কী মাত্রায় থাকবে:
বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতি:
আদা গাছে রোগ:
বিশেষ করে বেশি জল আদা চাষে খুব বিপজ্জনক। জল বেশি পড়লে আদা গাছে গোড়া পচা রোগ দেখা দিতে পারে। পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করতে পারে। চাষিভাইদের এই সময় যে কোনও ভাল মানের ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে। গাছ বড় হওয়া পর্যন্ত এই ছত্রাকনাশক স্প্রে করে যেতে হবে মাসে কম করে পাঁচ বার।
আদা চাষ স্বাধীন ও লাভজনক ব্যবসা:
আমাদের দেশ কৃষিনির্ভর। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেক চাষি কৃষির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয় নানা কারণে। সেই সব চাষিদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য। এই আদা চাষের মাধ্যমে তাঁরা স্বাধীনভাবে খুব কম পুঁজি নিয়ে তাঁদের নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। বর্তমান যুগে শুধু গ্রামাঞ্চল নয়, শহুরে চাষাবাদের বিশাল ব্যাপ্তি ঘটেছে। খুব কম জায়গায় বাড়িতে, ছাদে, বাড়ির বাগানে, ফাঁকা জায়গায় এই আদা চাষ সহজেই করা যায়। এই চাষের মধ্যে দিয়ে ইচ্ছুক চাষিরা অর্থনৈতিকভাবে সাবলীল হতে পারবেন। কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র, কৃষিদপ্তর, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, আদা গবেষণা কেন্দ্র ইচ্ছুক চাষিদের সঠিক প্রশিক্ষণ ও এইসব ক্ষেত্রে সব রকম সহায়তা করে থাকে।
বস্তায় আদা চাষ খুব সহজ ও লাভজনক, সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে চাষিভাইরা খুব সহজেই অল্প খরচে বিপুল পরিমাণে আদা উৎপাদন করতে পারবেন। বিশেষ করে নজর দিতে হবে যাতে আদা গাছে ও গাছের গোড়ায় জল না জমে। খুব ভালভাবে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে ভাল ফলন পাওয়ার জন্য।
এই আদা চাষে আয়ের পরিমাণ:
আগেই বলা হয়েছে আদা চাষ খুব লাভজনক যা অতি কম পুঁজিতে আমরা সফলভাবে বৈজ্ঞানিক উপায়ে করতে পারি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে চাষিরা খুব সহজেই মাসে নির্ভরযোগ্য উপার্জন করতে পারবেন শুধু তাই না বছরে কম করে লাখ খানেক টাকা উপার্জন করতে পারবেন পাইকারি বাজারে এই আদা বিক্রি করে। মোটামুটি ২০০ বস্তা আদা চাষের জন্য আমাদের ১০-১২ কিলো আদা বীজ কিনতে হবে। যার বাজারমূল্য ২০০০ টাকা। রাসায়নিক সার, আর অন্যান্য জিনিসের জন্য আরও ২০০০ টাকা লাগবে। মাটি তৈরির জন্য চাষি ভাইদের আরও ১০০০ টাকা খরচ। সব মিলিয়ে ৫০০০ টাকা ব্যয় হবে। এবার পাইকারি বাজারে বিক্রি করলে বেশি টাকা উপার্জন করতে পারবেন চাষিরা। স্থানীয় বাজারেও চাষিরা এই আদা খুব সহজেই বিক্রি করতে পারবেন। কোনও রকম মিডিলম্যান ছাড়া আদা বিক্রিতে চাষিভাইরা বেশি টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
এক একটা বস্তায় প্রায় ২ কিলো করে আদা খুব সহজেই উৎপাদন সম্ভব যদি সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়। তাহলে ২০০ বস্তা থেকে আমরা প্রায় ৪০০ কিলো আদা পেতে পারি। প্রতি কেজি নতুন আদার দাম বর্তমান বাজারে ৮০-৯০ টাকা। সংরক্ষিত আদার দাম বর্তমান বাজারে প্রায় ১০০ টাকা বা তার একটু বেশি। তাহলে খুব সহজেই অল্প সময় এই ৪০০ কেজি আদার থেকে চাষিরা প্রায় ৩২-৩৫ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারেন। যেখানে খরচ হয়েছে মাত্র ৫০০০ টাকা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.