রঞ্জন মহাপাত্র,কাঁথি: কোনও সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অপরিকল্পিতভাবে কেমিক্যাল ড্রাগস পুকুরে মাছ চাষে ব্যবহার নিয়ে সরব হলেন হলদিয়া মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিক। এইসব রাসায়নিক ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে মাছের সঠিক বৃদ্ধি হচ্ছে না বলে অনেক মাছচাষিরাই অভিযোগ তোলেন। এমনকী মাছের রং সুন্দর না হওয়ার জন্যও এই নানা ধরনের রাসায়নিক ব্যবহারকেই দায়ী করেন মৎস্যচাষিরা।
জানা গিয়েছে, হাতের কাছে নিম, তুলসি, পান, রসুন, আদা, কলাগাছ ইত্যাদির মধ্যেই লুকিয়ে আছে মাছ চাষের খরচ কমানোর সব রহস্য। মাছের রোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদের গুণাগুণ রয়েছে। মাছের রোগ নিরাময়ে এই পদ্ধতির কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। একইসঙ্গে এতে সাশ্রয়ও হয়। মাছের ক্ষত রোগ নিয়ন্ত্রণে রসুনের ব্যবহার করা যায়। রসুনটি কার্যকর ভেষজ হিসাবে বিবেচিত হয় কারণ এটিতে অ্যালিসিন নামক অ্যান্টিমাইকোবাইল যৌগিক আছে যার ওষুধি গুণ আছে। পুকুরে খাবার প্রয়োগের আগে প্রতি ১০০ কেজি মাছের জন্য ১০ গ্রাম রসুন ৩ দিন পর পর প্রয়োগ করলে মাছের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে এবং বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। এপিজুটিক আলসারেটিভ সিন্ড্রোম বা মাছের ক্ষত রোগের জন্য ২ কেজি রসুন, ২ কেজি লবণ, ২০ গ্রাম পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট ও ২০ গ্রাম কপার সালফেট (তুঁতে) ভাল করে ৩০-৫০ লিটার জলে মিশিয়ে ৩৩ ডেসিমেল (১ বিঘা) পুকুরে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিলে উপকার পাওয়া যায়।
জানা গিয়েছে রসুনকে, তুলসি এবং হলুদের সঙ্গে মিশিয়ে দিলে কাতলা মাছের ডিমপোনার রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ে। মাছের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে পেঁয়াজকে আখরোটের সঙ্গে বেটে প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যায়। আবার পেঁয়াজকে বেটে সয়াবিন যুক্ত মাছের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে মাছকে খাওয়ালে তেলাপিয়া মাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। একইসঙ্গে অ্যান্টিবডি তৈরির অসাধারণ ক্ষমতা আছে তুলসির। নিয়মিত তুলসির ব্যবহার মাছের মরটালিটি যেমন উন্নত করে ঠিক তেমনই প্রাকৃতিক গ্রোথ প্রমোটার হিসেবে কাজ করে। তাই বাজারের গ্রোথ প্রমোটার বাদ দিয়ে আমরা আমাদের উঠানের পিছনে যে তুলসি গাছ আছে সেটাকে কেন ব্যবহার করব না? তাছাড়া ইমিউন সিস্টেম উন্নত করতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে তুলসি। তুলসির পাতা, ডাল, শিকড়, ফুল এমনকী পুরোটাই পুকুরে ব্যবহার করার উপযোগিতা আছে। ডেসিম্যাল প্রতি ১০ পিপিএম ১৫ দিন পরপর ব্যবহার করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে মাছের কটনমাউথ রোগের সবথেকে বড় আন্টিমাইক্রোবায়াল হিসাবে কলমি শাকের ব্যবহার সবথেকে বেশি কার্যকরী। প্রতি ১০ হাজার লিটার পুকুরের জলের জন্য ৩০ গ্রাম পাতা ভিজিয়ে প্রয়োগ করলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.