Advertisement
Advertisement

Breaking News

Fish Cultivation

ধান জমিতে করুন মাছ চাষ, মিলবে দ্বিগুণ লাভ

এই চাষে ১০-২৫ গুণ ধানের ফলন বাড়ে।

Fish can cultivate in paddy field
Published by: Sayani Sen
  • Posted:October 30, 2024 6:20 pm
  • Updated:October 30, 2024 9:16 pm  

ধান খেতের জলে দূষণবিহীনভাবে মাছ চাষ করাকে ‘মিশ্র’ বা ‘জাওলা’ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা বলে। এই চাষ পরিবেশবান্ধব। কম খরচে বেশি আয় হয়। সুন্দরবন, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মেদিনীপুর এলাকার এক ফসলি ধান চাষের জমিতে ধান চাষ ও মাছ এক সাথে করলে প্রচুর লাভ। লিখেছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অন্তরা মহাপাত্র ও বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন বরিষ্ঠ গবেষক ড. পরিতোষ বিশ্বাস।  পড়ুন প্রথম পর্ব।

২০১৭-২০১৮ সালে ১২৬০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করে, মাছচাষে, ভারতবর্ষ পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থান দখল করে। ২০১২ সালে ভারত সরকার বিদেশে ১৩.৭৭ লক্ষ টন মাছ রপ্তানি করে ৪৫,৯০৬.৮৯ কোটি টাকা আয় করেছিল। জনসংখ্যা পৃথিবীতে খুব দ্রুতহারে বাড়ছে। ইউএনও-র হিসাবে, ২০৫০ সালের মধ্যেই পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় ৯৬,০০০ কোটি হবে। বর্তমানে ভারতবর্ষে জনসংখ্যা ১৪২ কোটি, পৃথিবীতে প্রথম স্থানে। ভারত সরকার বর্তমানে খাদ্য সমস্যা, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মুখে, খাবার যোগানো ভীষণ কঠিন কাজ। বিশেষ করে, পুষ্টির জন্য- প্রোটিনের জোগান, প্রাণীজ প্রোটিনের দাম, বেড়েই চলেছে।

Advertisement

গরিব মানুষকে যথেষ্ট পরিমাণে প্রাণীজ প্রোটিনের জোগান দিতে, একমাত্র মাছই পারে, এই মারাত্মক সমস্যার সমাধান করতে। বন্ধু ভাবাপন্ন এবং বিভিন্ন খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত বহু মাছকে এক সাথে নিয়ে, একই সময়ে, একই ফিশারিতে বা একই ধান খেতের জলে দূষন বিহীনভাবে মাছ চাষ করাকে ‘মিশ্র পদ্ধতি’ বা জাওলা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা বলে। মাছ চাষের জন্য, ধান খেতের বা ফিশারির মাটি এঁটেল মাটি হওয়া একান্তই দরকার। এঁটেল মাটির জল ধারণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি।

ধান খেতের লাগোয়া পুকুর থাকলে ভালো। না থাকলে, ধান খেতের মাঝে বা পাশে একটি ছোট ডোবা খনন করতে হবে, বর্ষাকালে ধান খেতের জমিতে যখন বেশি জল থাকবে, তখন মাছেরা, সেইখানে দৌড়াদৌড়ি করবে, খেলে বেড়াবে, ব্যায়াম হবে, বেশি খাবার হজম হবে। শরীরের বৃদ্ধি ভালো হবে, ওজনও বাড়বে। বর্ষার শেষে, ধান খেতে জল কমলে, মাছেরা ওই ডোবাতে আশ্রয় নেবে, ধরতে সুবিধা হবে।

বিশ্ব উষ্ণায়নের মূল কারণ হল, কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন গ্যাস ও নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস, বাতাসে-এই তিন ধরনের গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ ১৭৫০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বেড়েছে, ১৫০, ২৬৪ ও ১২৪ শতাংশ হারে। এক সাথে ধান ওমাছ চাষ করলে, বিষাক্ত মিথেন গ্যাস ও অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাস শতকরা হিসাবে, ১০ থেকে ১২ ভাগ কমে যায়। এক ফসলি (Monocrop) ধান চাষের চাইতে, এই চাষে ১০-২৫ গুণ ধানের ফলন বাড়ে।

এই চাষ, পরিবেশবান্ধব। কম খরচে বেশি আয় হয়। সুন্দরবন, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, মেদিনীপুর এলাকার এক ফসলী ধান চাষের জমিতে ধান চাষ ও মাছ এক সাথে করলে প্রচুর লাভ। চাষিকে আর পিছনে তাকাতে হয় না। চৈত্র-বৈশাখ মাসে ধান খেতের জমিতে পচানো জৈব গোবর সার, খামারের আবর্জনার সার, পাতা পচানো সার, সরিষার খোল, ইত্যাদি ছড়িয়ে ১ থেকেই ২ বার লাঙল বা ট্রাক্টরের চাষ দিয়ে তারপর বাঁসুই বা মই দিয়ে জমির উপরের তল সমান করতে হয়। বৃষ্টির জল জমিতে জমা হলে, ওই জলে- অ্যালগী, ফাঙ্গী, ব্যাকটেরিয়া, প্রটোজোয়া, ফাইটো- প্লাঙ্কটন, জু-প্লাংকটন, এক কোষী প্রাণীরা প্রচুর পরিমাণে জন্মাবে। জলের রং সবুজ হবে।

ধান খেতের চারিদিকে বীজ ছড়িয়ে ধনচে বা শোলা গাছ লাগালে, ঐ গাছের গোড়ার শিকড়ে গুটি (Nodule) জন্মায়। ওই গুটিতে প্রচুর নাইট্রোজেন ফিক্সিং ব্যাকটেরিয়া (Rhizobium sp.) থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া ধানগাছে নাইট্রোজেন সার জোগায়, ধান খেতের জলে- খুদি পানা, ছোট পানা, পিকোনা পানা, অ্যাজোলা, নানা রং এর নীলাভ সবুজ শ্যাওলা (সাইনো ব্যাকটেরিয়া) জন্মায়। এই সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণীরা ধান গাছে পুষ্টি জোগায়। ধান গাছের গোড়ায় ছোট-ছোট, গুঁড়ি-গুঁড়ি শামুক, ঝিনুক, গেঁড়ি, অল্পি প্রভৃতি জন্মায়, ধান গাছের পাতা সয়ে নেয়। আবার এই চাষের মাছেদের ওই গেঁড়ি- গুগুলি প্রিয় খাবার। যার ফলে মাছ ও ধানের ফলন বাড়ে।

ধানের কুঁড়ো, ছোলার গুঁড়ো, সয়াবীনের গুঁড়ো, গমের আটা, ঝোলা গুড়, সরিষা খোলের গুঁড়ো ইত্যাদি চাষের মাঝে, খেতের জলে ছড়িয়ে দিলে, ধান ও মাছ খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে। এই মিশ্রে বা জাওলা মাছ চাষে যে সব মাছের পোনা বা চারা জলে ছাড়া হয়, সেই সব মাছ হল, রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবোস, বাটা, কই মাগুর, সিঙ্গী, চেলা, খলসে, মৌরলা, চুনো, কুলপী ও কুচো ট্যাংরা, লাল পেটকাটা পুঁটি, কালো দাগ পুঁটি, সরপুঁটি, চাঁদা, ল্যাটা বা চ্যাং, উলকো, ছোট পাঁকাল, বড় চাঁদি পাঁকাল, কুঁচে, কুচো চিংড়ি, হন্যে চিংড়ি, মোচা চিংড়ি, চামটে চিংড়ি, মুখ পোড়া চিংড়ি, গলদা চিংড়ি, ছোট বেলে, বড় বেলে, ইত্যাদি। এই সব মাছেদের আগে খাল, বিল, বাহার, পুকুর, ডোবায়, খানায়, প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতো, এখন আর পাওয়া যায় না। এই মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে অল্প সময়েই প্রচুর আয় ও এই সব হারিয়ে যাওয়া জাওলা মাছেরাও অবলুপ্তির হাত থেকে বাঁচে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement