Advertisement
Advertisement
North Bengal

আলু-টমেটো-বিনস-গাজরের দাম তলানিতে, বিপাকে উত্তরের সবজি চাষিরা

অতিরিক্ত ফলনে লাভ পাচ্ছেন না চাষিরা।

Farmers faces loses in North Bengal
Published by: Sayani Sen
  • Posted:March 25, 2025 10:44 pm
  • Updated:March 25, 2025 10:44 pm  

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: আলুর দাম তলানিতে। খুচরো বাজারে ১০ টাকা কেজি। পাইকারি বাজারে কৃষক পাচ্ছে ৭ টাকা। ব্যবসায়ী সমিতির শঙ্কা বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান বেড়ে যাওয়ায় আলুর দাম আরও নামতে পারে। এদিকে, ২ টাকা কেজি দামেও পাইকারি বাজারে টমেটোর খদ্দের মিলছে না। দাম নেই বেগুন, বিনসেরও। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে উত্তরের চাষিরা।

উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার পাইকারি বাজারে এক ট্রাক সাদা জ্যোতি প্রজাতি আলু ৭০ হাজার টাকায় বিকিয়েছে। অর্থাৎ পাইকারি বাজারে ওই আলুর দাম ছিলো ৭ টাকা। সেটাও কেনার মতো খদ্দের মিলছে না। প্রতি ট্রাকে ৫০ কেজি ওজনের দুশো প্যাকেট আলু থাকে। ওই পরিমাণ আলুর উৎপাদন খরচ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। চাষিদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে দুশো কেজি বীজের প্রয়োজন। খরচ প্রায় ১০ হাজার টাকা।

Advertisement

এছাড়াও রয়েছে সার, জমি চাষ, সেচ, শ্রমিকদের মজুরি। সব মিলিয়ে খরচ প্রায় ৪০ হাজার টাকা পড়ে যায়। জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি ব্লকের গাদং এলাকার আলু চাষি নিত্যানন্দ বর্মন জানান, “তিনবিঘা জমি থেকে এক ট্রাক অর্থাৎ ১০ টন আলু হয়ে থাকে। এটাই দুশো প্যাকেটে ট্রাকে ওঠে। এবার চোখের সামনে ৫০ হাজার টাকা লোকসান বুঝে অনেকেই জমিতে আলু ফেলে রেখেছে।” কেন ওই পরিস্থিতি? উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য দেবব্রত চক্রবর্তী বলেন, “বিহার, অসমে গেলেও এবার চাহিদার তুলনায় আলুর জোগান বেশি। ওই কারণে আলুর দাম নেমেছে। আরও নামতে পারে।”

কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গে প্রায় দেড় লক্ষ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং উত্তর দিনাজপুর জেলায়। এটাই মূলত উত্তরের আলু চাষের বলয়। জলপাইগুড়িতে আলু চাষের এলাকা প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টর। আলিপুরদুয়ার জেলায় প্রায় ২১ হাজার হেক্টর। কোচবিহারে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর এবং উত্তর দিনাজপুরে প্রায় ২৯ হাজার হেক্টর। উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তাদের দাবি, এবার চাষের এলাকা কমলেও ফলন ভালো হয়েছে। উত্তরের আলু চাষের বলয়ে যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয় সেটা উত্তরের ষাটটি হিমঘরে মজুত করা যায় না। সেখানে ২০ লক্ষ টন আলু মজুতের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু উৎপাদনের পরিমাণ দ্বিগুণ। সমস্যা এখানেই। ভিনরাজ্যে আলু গেলেও বেশি টানছে না। কারণ, সেখানেও আলু উৎপাদন শুরু হয়েছে।

এদিকে, আলুর চেয়েও খারাপ দশা হয়েছে টমেটো চাষিদের। উৎপাদন বেশি হলেও চাহিদা নেই। দাম নেমেছে ২ টাকা কেজি। বিঘা প্রতি জমিতে ৭০-৮০ কুইন্টাল টমেটোর ফলন হয়েছে। পাইকারি বাজারে পাঠানোর ভ্যান ভাড়াই উঠছে না বিক্রি করে। তাই ফসল জমিতেই ফেলে রেখেছেন চাষিরা। খুচরো বাজারেও টমেটো ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা কেজি দামে বিক্রি চলছে। ময়নাগুড়ির মাধবডাঙা গ্রামের টমেটো চাষি গৌরাঙ্গ শর্মা বলেন, “টমেটো খেতে একঘন্টা সেচ দিতে খরচ হচ্ছে দুশো টাকা। সপ্তাহে অন্তত ছয় ঘন্টা সেচ দিতে হয়। ওই খরচ টম্যাটো বিক্রি করে মিলছে না।”

একই দশা হয়েছে বিনস, গাজর, উচ্ছে, বেগুনের। খুচরো বাজারে সবই বিকোচ্ছে ১০ টাকা কেজি দরে। পাইকারি বাজারে কৃষক পাচ্ছে ৭ টাকা কেজি। কেন টমেটোর দাম তলানিতে? পাইকারি বিক্রেতাদের কথায়, কয়েক বছর আগেও উত্তরের টমেটো দেশের দিল্লি, মুম্বই তো বটেই। পাকিস্তান, বাংলাদেশেও রপ্তানি হয়েছে। এখন বিদেশ দূরঅস্ত। ভিনরাজ্যেও যাচ্ছে না। ওই কারণে, শুধু টমেটো নয়। উচ্ছে, বিনস, গাজর, বাঁধাকপি, বেগুনের দাম তলানিতে ঠেকেছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement