সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিড়ি বাঁধার কাজ করতেন। কিন্তু বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে দৃষ্টিশক্তি। তাই অর্থ উপার্জনের অন্য পথ হিসাবে মাশরুম চাষকে বেছে নিলেন এক বৃদ্ধ দম্পতি। জায়গার অভাবে শোওয়ার ঘরেই মাশরুম চাষ করেন তাঁরা। নদিয়ার তেহট্ট থানার বেতাই নতুন বাজারের এই ঘটনা চমকে দিয়েছে প্রায় সকলকেই। প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষ করেই এখন বিপুল অর্থলাভ করছেন ওই দম্পতি।
এতদিন বিড়ি শ্রমিকের কাজ করেই পেট চালাতেন কৌশল্যা বৈদ্য এবং রণজিৎ বৈদ্য। ৬ মাস আগে মাশরুম চাষ শুরু করেন তাঁরা। মাশরুমের চাহিদার কথা ভেবেই এই উদ্যোগ নেন দম্পতি। দীর্ঘদিন আগে সরকারিভাবে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তাঁরা। তা সত্ত্বেও কোনওদিন মাশরুম চাষ করেননি। কৌশল্যা বৈদ্য বলেন, “খুব ছোট থেকেই বিড়ি শ্রমিকের কাজ করি। বয়সজনিত কারণে দৃষ্টিশক্তি কমেছে। তাই বিড়ি বাঁধার কাজ থেকে অবসর নিয়ে মাশরুম চাষ করি। বাড়িতে জায়গা কম থাকায় শোওয়ার ঘরের দেওয়াল বরাবর বাঁশের ফ্রেম করে ঝুলন্ত অবস্থায় ৪০ প্যাকেট মাশরুম চাষ শুরু করেছি। গড়ে প্রতিদিন ২-২.৫ কেজি মাশরুম চাষ হচ্ছে।”
ওই দম্পতি আরও জানান, বর্তমানে শুকনো মাশরুমের বাজারদর কেজি প্রতি ৬০০ টাকা। ৪০টি প্যাকেট থেকে প্রতিদিন গড়ে ২ কেজি করে মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে। ক্রেতারা বেশিরভাগ সময় বাড়ি থেকেই ২০০ টাকা কেজি দরে মাশরুম কিনে নিয়ে যান। ফলে লাভ হচ্ছে ভালই।
মাশরুম মূলত ৩৫ দিনের ফসল। চাষ শুরুর মাত্র ২৭ দিনের মাথায় তা বিক্রি শুরু হয়। দরকার সঠিক পরিচর্যার। কৌশল্যা বৈদ্য বলেন, “অপরিচ্ছন্নভাবে মাশরুম চাষের আশেপাশে না যাওয়াই ভাল। ঝুলন্ত ও সমতলে এই চাষ দু’রকমভাবেই করা যায়। তবে আমরা ঝুলন্তভাবে মাশরুম চাষ করি। মাশরুম লাভজনক চাষ হলেও প্রাথমিকভাবে এই কাজটি শুরু করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। কারণ, এই অঞ্চলে মাশরুমের ভাল বীজ পাওয়া যায় না। ভাল বীজ সংগ্রহ করতে না পারলে উৎপাদন খারাপ হবে। তাই আগে ভাল বীজ সংগ্রহ করা বিশেষ দরকার। বেসরকারিভাবে ব্লক প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হয়। প্রত্যন্ত গ্রাম্য এলাকায় মাশরুমের গুণাগুণ সম্পর্কে সঠিকভাবে প্রচার না থাকায় সচরাচর বিক্রি হচ্ছে না। সেই কারণে বৃহৎ আকারে চাষ করার ইচ্ছা থাকলেও ঝুঁকি নিতে পারছি না।”
এলাকার শিক্ষক অখিলচন্দ্র সরকার বলেন, “মাশরুমে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন থাকে। প্রতিটি পরিবারের খাদ্যতালিকায় মাশরুম রাখা উচিত। স্কুলের মিডডে মিল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং হাসপাতালের রোগীদের খাদ্যতালিকায় সরকার যদি মাশরুম সপ্তাহে একটা দিন রাখেন তবে শিশু এবং রোগী সকলেই প্রোটিনযুক্ত খাবার পাবে। চাহিদা অনুযায়ী এলাকায় এই চাষের উৎসাহ বাড়বে। এই চাষে অনেকেই স্বনির্ভর হতে পারবেন।”
তেহট্ট ১ নম্বর ব্লকের আধিকারিক দয়াল ভূঁইয়া বলেন, “রাজ্য সরকারের আনন্দধারা প্রকল্পের একটা অঙ্গ মাশরুম চাষ। সেই হিসাবে ব্লকের মহিলাদের মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই মাশরুম চাষ শুরু করেছেন। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্তরকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি। এই চাষ যাতে এলাকায় আরও বিস্তার লাভ করে সেই দিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এলাকার মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সমস্ত মহিলারা চাষ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.