সৌরভ মাজি ও অভিষেক চৌধুরী: ঘূর্ণিঝড় যশ বা ইয়াস (Yaas) ও তার প্রভাবে টানা বর্ষণ হয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলায়। বৃহস্পতিবারও দুর্যোগ কাটেনি। বহু কৃষি জমি চলে গিয়েছে জলের তলায়। ফলে তিল, আখ, গ্রীষ্মকালীন সবজিতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষি দপ্তরের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় তিল, আখ ও সবজি চাষে ১২৫ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হতে পারে। এদিকে সবজির ক্ষতি হলে ফের খোলা বাজারে দাম বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে মাছ চাষেও।
পূর্ব বর্ধমান জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, “টানা বৃষ্টি চাষে ক্ষতি করে গেল। সব মিলিয়ে জেলায় ১২৫ কোটি ৭৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার ফসল ক্ষতি হয়েছে মনে করা হচ্ছে। বৃষ্টি থেমে গেলে ক্ষতির হিসেব সঠিকভাবে করা যাবে।” ব্লক ভিত্তিক বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করছে কৃষি দপ্তর। জানা গিয়েছে, বোরোধান প্রায় উঠে গিয়েছে। না হলে আরও বড় ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। তা সত্ত্বেও অন্য ফসল ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। জেলায় এবার তিল চাষ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজর হেক্টরে। তার প্রায় অর্ধেক, ১২ হাজার ৮৯৮ হেক্টর জমির তিল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া ৭১৪২ হেক্টর জমির সবজি ও ৩৭৩ হেক্টর জমির আখ নষ্টের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কালনা, পূর্বস্থলী, মন্তেশ্বর ব্লকে এইসময় পাট, তিল ও সবজি চাষ হয়ে থাকে। কালনা মহকুমা এলাকায় এবার ৩৭৬০ হেক্টর জমিতে তিল চাষ হয়। এর মধ্যে প্রথমিকভাবে ১৯৯৫ হেক্টর জমির তিল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও ৬২০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। তার মধ্যে ৪৯২৭ হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কালনা মহকুমা সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ জানান, এইসব চাষের ক্ষেত্রে জমিতে জল দাঁড়ানোটা গাছ সহ্য করতে পারে না। গোড়া পচে গাছ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা। বৃষ্টি থামার সঙ্গে-সঙ্গেই জমিতে দাঁড়ানো জল খুব তাড়াতাড়ি বের করে দিতে হবে। আবহাওয়া ঠিক হয়ে গেলে ভাল করে জমি পর্যবেক্ষণ করে প্রাথমিকভাবে গাছের পচন আটকাতে ছত্রাক নাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে বলে তিনি জানান। বৃহস্পতিবার বর্ধমান শহর লাগোয়া গ্রামগুলিতে দেখা যায় সবজি জলের তলায় রয়েছে। ঝড়ের দাপটে মাচা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রায়না, খণ্ডঘোষ, জামালপুর, মেমারিতেও একই দশা বিভিন্ন ফসলের। অন্যদিকে এই দুর্যোগে মাাছচাষেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মৎসমন্ত্রী অখিল গিরি জানিয়েছেন, “পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দর তছনছ হয়ে গিয়েছে। মৎস্যদপ্তরের অফিস জলের নিচে। শুঁটকি মাছ উৎপাদন কেন্দ্রের অবস্থাও এক। পূর্ব মেদিনীপুরের মৎস্যজীবীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.