সৌরভ মাজি, বর্ধমান: উত্তরবঙ্গ পথ দেখিয়েছিল। এবার পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও ধানের চারা তৈরির কারখানা গড়ল কৃষি দপ্তর৷ স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়ে বিভিন্ন ব্লকে কারখানাগুলি তৈরি করা হয়েছে৷ প্লাস্টিক বা পলিথিনের ট্রে-তে বিশেষ পদ্ধতিতে এই চারা তৈরি করা হচ্ছে। যা যন্ত্রের সাহায্যে জমিতে রোপণ করা হয়। এর ফলে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা রোজগারের দিশা পাচ্ছেন। পাশাপাশি, কৃষকদের চাষের খরচও অনেকটাই কমে যাচ্ছে৷ তবে সব থেকে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, ট্রে-তে এইভাবে চারা তৈরিতে জলের প্রয়োজন হয় খুব কম। বর্তমানে জলসংকটের সময় কম জলে চারা তৈরি বা জলের অপচয় রুখতে এই পদ্ধতির কোনও বিকল্প নেই৷
‘আত্মা’ প্রকল্পে জেলার প্রতিটি ব্লকে ধানের চারা কারখানা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রজেক্ট ডিরেক্টর আবদুস সামাদ জানান, বিভিন্ন ব্লকে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। প্রতি ব্লকেই অন্তত ২০টি করে প্রদর্শন ক্ষেত্র গড়ার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে কেতুগ্রাম-১, কাটোয়া-১, জামালপুর, খণ্ডঘোষ ও মন্তেশ্বর ব্লকের স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের বাছাই করে নরেন্দ্রপুরে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ট্রে-তে ধানের চারা তৈরিতে পথিকৃৎ বলা হয়ে থাকে উত্তরবঙ্গের সতীশ সাতমাইল ক্লাবকে। নরেন্দ্রপুরে সেখান থেকে থেকেও লোকজন এসে মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। আবদুস সামাদ বলেন, “স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দিয়ে ধানের চারা তৈরির কারখানা তৈরি জেলায় প্রথম করা হয়েছে। এই কারখানার সঙ্গে ফার্ম মেকানাইজেশন বা ভরতুকি যন্ত্র কিনে চাষাবাদের প্রকল্পকেও সংযুক্ত করা হয়েছে।”
আত্মা প্রকল্পের জেলার প্রজেক্ট ডিরেক্টর জানান, ট্রে-তে ধানের চারা তৈরি করে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা রোজগারের দিশা পাচ্ছেন। তাঁদের তৈরি চারা কৃষকরা সরসারি কিনে নিতে পারবেন। তাতে কৃষকরা অনেকটাই লাভবান হবেন। বীজতলা তৈরি করে ধানের চারা তৈরি করতে যা খরচ হবে ট্রে-তে তৈরি চারা কিনলে খরচ অর্ধেকেরও কম হবে৷ আবার স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাও বাড়তি রোজগার করতে পারবেন। এই চারা রোপণে কৃষি যন্ত্রের (প্যাডি ট্রান্সপ্লান্টেশন) ব্যবহার করা হবে। তাতেও কৃষকদের খরচ কম হবে। ফলে চাষের খরচ কমিয়ে একজন কৃষক বাড়তি লাভের সুযোগ পাচ্ছেন।
ধানের চারা তৈরির কারখানাতে গোষ্ঠীর মহিলাদের আত্মা প্রকল্পের মাধ্যমে ট্রে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ট্রেতে বা পলিথিনের শিটে এক ইঞ্চি মাপের মাটি ও গোবর সারের মিশ্রণ দিতে হবে। মাটি ও গোবর সারের পরিমাণ থাকবে যথাক্রমে ৮০ শতাংশ ও ২০ শতাংশ। চারা ২০ থেকে ২৫ দিনের হয়ে গেলেই তা রোপণ করা যাবে। এই পদ্ধতিতে চারা তৈরিতে খুব কম পরিমাণ জল লাগে। জলের অপচয়ও খুব কম হয়। স্প্রে করেও ট্রে-তে তৈরি ধানের চারায় জল দেওয়া যায়। বর্তমান সময়ে জলের তীব্র সংকটের মাঝে এই পদ্ধতিতে চারা তৈরিতে উপকৃত হবেন কৃষকরা।
ছবি: মুকুলেসুর রহমান৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.