জল ছাড়ছে মাইথন। ছবি: মৈনাক মুখোপাধ্যায়।
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: রবি ও বোরো মরশুমে পূর্ব বর্ধমান জেলার মাত্র ৩৭ হাজার একরের জন্য ডিভিসির সেচের জল মিলবে। বুধবার রাজ্যের সেচদপ্তরের মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়া সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিভিন্ন জেলার অধিকারিক ও পদাধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানেই জানিয়ে দেওয়া হয় কোন জেলা কতটা জমিতে এই মরশুমে চাষের জন্য ডিভিসির জল পাবে। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ মেহবুব মণ্ডল বলেন, ‘‘ভিডিও কনফারেন্স বৈঠকে আমাদের জেলার জন্য ৩৭ হাজার একরে সেচের জল মিলবে বলে জানানো হয়েছে। সামনের সপ্তাহে বৈঠক করে আমরা ঠিক করবো কোন কোন ক্যানেলে জল মিলবে।’’
তবে ৮ টি ব্লক সেচের জল পাবে তা চূড়ান্ত। সেই ৮টি ব্লক হল গলসি-১ ও ২, আউশগ্রাম-১ ও ২, বর্ধমান-১ ও ২, জামালপুর ও মেমারি-১ ব্লকের একাংশ ডিভিসির জল পাবে। ওইসব ব্লকের কোন কোন এলাকা সেচের জল পাবে তা সামনের সপ্তাহে চূড়ান্ত হবে। ডিভিসি যে হারে জল ছাড়া কমাচ্ছে তাতে প্রতি বছরই রবি ও বোরো চাষে ক্যানালের সেচসেবিত ক্ষেত্র কমতে শুরু করেছে। গত কয়েকবছরের ট্রেন্ড এবারেও অব্যাহত।
সেই দুর্গাপুজোর আগে থেকে ডিভিসির সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের টানাপোড়েন চলছে। সাম্প্রতিক বন্যার কারণে ডিভিসি না জানিয়ে দামোদরে জল ছেড়েছিল বলে অভিযোগ তোলে রাজ্য সরকার। সেই থেকেই দুই তরফে চাপানউতোর চলছে। প্রতিবছর রবি ও বোরো মরশুমে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, হুগলি ও হাওড়া জেলায় ডিভিসির সেচের জল ছাড়ার বিষয়ে ডিভিশনাল কমিশনার বৈঠক করেন। ডিভিসি আগে থেকেই জানিয়ে দেয় তারা কতটা জল দিতে পারবে। তারপর সেই অনুযায়ী এই পাঁচ জেলা ঠিক করে কে কতটা জমিতে চাষের জল পাবে। অন্যান্য বার যা নভেম্বরের শেষেই চূড়ান্ত হয়ে যায়। ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকে ডিভিসি জল ছাড়তে শুরু করে। কিন্তু এবার সেই বিষয়ে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত কোনও বৈঠক না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন শস্যগোলা বর্ধমানের চাষিরা। সেই দুশ্চিন্তা এদিনের বৈঠকের পর কিছুটা হলেও কাটবে।
ডিভিসির আধিকারিক শশী রাকেশ কয়েকদিন আগেই জানান, রাজ্য সরকার তাদের সঙ্গে বৈঠকে আসেনি। ডিভিসি রাজ্যকে জানিয়ে দেয় তারা এবার ২ লক্ষ ২১ হাজার একর ফুট সেচের জল দিতে পারবে। রাজ্য জানালেই তারা সেচের জল ছাড়তে শুরু করবে। ২০২১ সালে ডিভিসি এই মরশুমের জন্য জল দিয়েছিল ৩ লক্ষ ৩০ হাজার একরফুট। তারপর থেকে ক্রমাগত জল ছাড়ার পরিমাণ কমেছে। কমতে কমতে এবার তা নেমেছে ২ লক্ষ ২১ হাজার একর ফুটে। স্বাভাবিক কারণে ডিভিসির সেচসেবিত এলাকায় রবি ও বোরো মরশুমে চাষের ক্ষেত্রও কমেছে। ২০২১ সালে পূর্ব বর্ধমানে ৬৫ হাজার ৯০০ একরে সেচের জল মিলেছিল। কমতে কমতে এবার তা ৩৭ হাজার একরে নেমেছে। ডিভিসি কর্তৃপক্ষের দাবি, বিভিন্ন জলাধারে কচ পরিমাণ জল রয়েছে তার উপর নির্ভর করে সেচের জল দেওয়া হয়। জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ জানান, ডিভিসি দেওয়া জলের পরিমাণের উপর নির্ভর করে ক্যানালের জলে চাষের ক্ষেত্র ঠিক করা হয়। এবারও তাই হয়েছে। তবে চাষিরা জানাচ্ছেন, ডিভিসির জলের নির্ভরতা কমে গিয়েছে তাঁদের। খরচ বেশি হলেও সকলেই বিকল্প ব্যবস্থা করছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.