বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: লকডাউনের কারণে বসছে না হাট। বন্ধ রয়েছে আড়ত। মাল পাঠানো যাচ্ছে না কলকাতায়। ফলে মাঠেই পচে নষ্ট হচ্ছে কুমড়ো। লকডাউনের সময়সীমা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই মিষ্টি কুমড়ো বিক্রি করার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। ফলে রীতিমতো মাথায় হাত পড়েছে নদিয়ার শান্তিপুর ব্লকের গয়েশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হিজুলি গ্রামের প্রায় সব কুমড়ো চাষির। কী করে তাঁরা ব্যাংকের ঋণ শোধ করবেন, কীভাবেই বা চলবে তাঁদের সংসার তা নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা। বাধ্য হয়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কাছে সমস্যার কথা জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
চলতি বছর প্রায় ৫০০-র বেশি কৃষক ধারদেনা করে মিষ্টি কুমড়ো চাষ করেছেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মিষ্টি কুমড়ো চাষ করেছেন অধিকাংশ কৃষক। চাষে সময় লাগে প্রায় ৬ মাস। এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হবে তা তাঁরা আদৌ ভাবেননি। বিক্রি করার কোন সুযোগ না পেয়ে বাধ্য হয়ে মাঠের মধ্যেই পড়ে রয়েছে একাধিক মিষ্টি কুমড়ো। পচে নষ্ট হচ্ছে সেগুলি। ইতিমধ্যে অনেকটাই ফেলে দিতে হয়েছে তাঁদের।
শ্যামল ঘোষ নামে স্থানীয় এক কৃষক বলেন, “মিষ্টি কুমড়ো চাষ করতে আমাদের ৬ মাস সময় লেগেছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বা অন্য কোনভাবে ধারদেনা করে আমরা চাষের কাজে লাগিয়েছি। কিন্তু লকডাউনের কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ। কলকাতা বা অন্য কোন বাজারে আমরা মিষ্টি কুমড়ো পাঠাতে পারছিনা। মিষ্টি কুমড়ো নিয়ে বেরোলেই পুলিশ বাধা দিচ্ছে। মাঠেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসল। আর কয়েক দিনের মধ্যেই হয়তো সবই পচে নষ্ট হয়ে যাবে। করোনার মতো মারণ রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের প্রয়োজন রয়েছে সেটা আমরা বুঝি। কিন্তু এখনই আমাদের প্রায় সঙ্গীন অবস্থা। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে কী হবে, তা ভেবে কূল পাচ্ছি না।মিষ্টি কুমড়ো চাষ করেই আমাদের সংসার চলে।”
আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কৃষকরা। রীতিমতো কাঁদো কাঁদো অবস্থা অলোক মণ্ডল নামে এক কৃষকের। তিনিও এবার প্রচুর টাকা ধার দেনা করে অনেকটা এলাকাজুড়ে মিষ্টি কুমড়ো চাষ করেছেন। বিক্রি করতে পারেননি প্রায় কিছুই। তিনি বলেন, “আমাদের তো এর উপরেই সংসার চলে। এবছর তো কোথাও মিষ্টি কুমড়ো বাজারে পাঠাতেই পারছিনা। বিক্রি করতে পারছি না কিছুই। পড়ে থেকে সব পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চিন্তা ভাবনায় রাতে ঘুম হচ্ছে না। রোগ সংক্রমণ হলে হয়তো এমনিতেই মরবো, কিন্তু সব মিষ্টি কুমড়ো পচে গেলে সংসার নিয়ে না খেতে পেয়ে মরতে হবে। আর না হলে হয়তো আত্মহত্যা করতে হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.