রাজা দাস, বালুরঘাট: মাঝে দুদিন আকাশের মেঘের দেখা মেলে। তা সত্ত্বেও দেখা মেলেনি বৃষ্টির। এদিকে তাপমাত্রার পারদ চড়ছে। তার ফলে বড়সড় ক্ষতির মুখে পাট চাষিরা। উদ্বিগ্ন জেলা কৃষিদপ্তর। পাট চাষে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে রাজ্য সরকারের চালু করা বিমাই ভরসা বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি অধিকর্তা।
দক্ষিণ দিনাজপুরে ধানের পর প্রধান অর্থকরী ফসল পাট। বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর, হিলি, তপন, কুমারগঞ্জ, বংশীহারী-সহ আটটি ব্লকে অন্তত ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। যার মধ্যে মিঠা পাট ৩০ হাজার এবং ম্যাস্তা জাতীয় পাট চাষ হয় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। এই মূহূর্তে জমিতে রয়েছে পাটের চারা। এই চারা বেড়ে ওঠার সময় প্রচুর জলের প্রয়োজন। কিন্ত মাসখানেক ধরে চলা দাবদাহর কারণে জমির ফুটিফাটা দশা। জলস্তর নিচে নেমে যাওয়ার তপন, গঙ্গারামপুর, হিলি-সহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় কাজ করছে না স্যালো বা গভীর নলকূল ব্যবস্থা। ফলে পাট গাছ বেড়ে ওঠা তো দূরের কথা, পাতা হলুদ হওয়ায় সঙ্গেই পোকার আক্রমণে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। যা নিয়েই আশঙ্কায় পাট চাষিরা।
কৃষক বাবলু মাহাতো বলেন, “অনাবৃষ্টি এবং খরার কারণে বিঘার পর বিঘা পাট পুড়ে যাচ্ছে। জমিতে কোনও জল নেই। পাট গাছ হলুদ হয়ে গিয়েছে। মার্শাল, শ্যালো বা জলসেচের মাধ্যমে চাষ করার চেষ্টাও বৃথা গিয়েছে জলস্তর নিচে নামার ফলে।” তপন ব্লকের কৃষক নেপাল মাহাতো জানান, “সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছিলেন। কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে তার সমস্ত পাট নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” কৃষক প্রবিতা মাহাতোর কথায়, “অনাবৃষ্টির কারণে পাট গাছে পোকা লেগে যাচ্ছে। আমরা পোকা নিধনকারী বিষ প্রয়োগ করছি। কিন্তু জলের অভাব বিষ প্রয়োগের ক্ষেত্রেও বড় সঙ্কট তৈরি করেছে। কিছু জমিতে জলসেচ দিয়েছিলাম কষ্ট করে। কিন্তু দুদিন জল না দেওয়ায় ফের পাটগাছগুলো নেতিয়ে গিয়েছে। তা নিয়ে কৃষি দপ্তরকে পাশে চাইছি আমরা।”
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা কৃষি আধিকারিক প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যের কিছু জায়গায় বৃষ্টি হলেও বালুরঘাটে দেখা নেই। উত্তরবঙ্গে তাপপ্রবাহ চলছে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তার ব্যতিক্রম নয়। এখন খেতে ফসল বলতে বোরো ধান, পাট এবং ভুট্টা। ধান এবং ভুট্টা গাছ পরিণত। সেক্ষেত্রে বৃষ্টি না হলেও সমস্যা নেই। কিন্ত পাট সবে লাগানো হয়েছে। এই চাষ পুরোটাই বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। আমরা কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে জেলাজুড়ে কৃষকদের এই সময় কী করতে হবে তার পরামর্শ দিচ্ছি। চলতি বছর পাট চাষের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের তরফে বিমা চালু হয়েছে। পাট চাষিদের নাম নথিভুক্তকরণের কাজ চলছে। ১ এপ্রিল-৩১ মে পর্যন্ত চলবে নাম নথিভুক্তকরণের কাজ। ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫০০ পাট চাষি বিমার জন্য আবেদন করেছেন। পাট চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই বিমাই ক্ষতিপূরণে সাহায্য করবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.