সৈকত মাইতি, তমলুক: উৎসবের মরশুমে এমনিতেই ফুলের দাম আকাশছোঁয়া। একেবারে সাধারণ মানের দোপাটির দাম এখন ২৫০ পার! জুঁই ১১০০, পদ্ম পিস প্রতি ৪০ টাকা! কোলাঘাটের পাইকারি ফুলের বাজারে এমন হাহাকারে লক্ষ্মীদেবীর আরাধনায় যেন হাতে ছ্যাঁকা লাগার অবস্থা গৃহস্থের। এক্ষেত্রে রাজ্যে বন্যা ও নিম্নচাপকেই দায়ী করছেন এলাকার ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
সবেমাত্র দুর্গাপুজোর বিসর্জন পর্ব শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে লক্ষ্মীদেবীর আরাধনার তোরজোড়। আর মা লক্ষ্মীর আরাধনায় অন্যতম ফুল হিসাবে গণ্য হয় দোপাটি, রজনীগন্ধা, বেল, জুঁই, পদ্ম, লাল-হলুদ গাঁদা। কিন্তু এই ফুলগুলোর জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা হয়েছে ফুল চাষীদের। কারণ, দুর্গাপুজোর মুখেই সাম্প্রতিক নিম্নচাপের ফলে বৃষ্টির জেরে দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার ফুলচাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর জন্যই শারদীয়া মরশুমের দুর্গাপুজোতে পদ্ম-সহ সমস্ত ফুলের দাম ছিল আকাশছোঁয়া। এমনকী লক্ষ্মীপুজোতেও ফুল কিনতে হাত পুড়ছে গৃহস্থের।
জানা গিয়েছে, কলকাতার মল্লিকঘাট ফুলবাজার-সহ, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট, দেউলিয়া, কেশাপাট-সহ অন্যান্য গ্রামীণ পাইকারী ফুলবাজারগুলোতে দাপটের সঙ্গেই বিক্রি হয়েছে দোপাটি, গাঁদা, রজনীগন্ধা থেকে শুরু করে পদ্ম কিংবা গোলাপ। এদিন কোলাঘাটের পাইকারি বাজারগুলোতে গিয়ে দেখা যায় বছরের অন্যান্য সময় ন্যূনতম দাম না পেয়ে যে দোপাটি ফুল পথের ধারে ফেলে দিয়ে বাড়ি ফিরতেন প্রান্তিক ফুল চাষিরা, এখন সেই দোপাটির দাম পাইকারি বাজারেই কেজি প্রতি হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। রজনীগন্ধা ৩৫০টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বেল ৯০০ টাকা, জুঁই ১১০০ টাকা কেজি। অপরাজিতা ৩০০ টাকা, পদ্ম ৪০ টাকা প্রতি পিস। যদিও দুর্গোপুজোতে ২০০-র গন্ডি পেরিয়ে যাওয়া লাল গাঁদা বেশ খানিকটা নেমে হয়েছে ৮০ টাকা। হলুদ গাঁদা ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া জবা ৭০ পয়সা, গোলাপ ৬ টাকা প্রতি পিস বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া, তিন ফুট সাইজের লাল গাঁদার মালা ১৫-২০ টাকা, হলুদ গাঁদার মালা ২৫ টাকা প্রতি পিস বিক্রি হয়েছে। তাই আগামী কালীপুজোতেও যে ফুলের বাজারদর এমনই থাকবে তা বলাই বাহুল্য! কোলাঘাটের বাসিন্দা তথা হাওড়ার মল্লিকঘাটের ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সনাতন দাস বলেন, “প্রকৃতির খামখেয়ালিতে এমনিতেই ফুলের স্বাভাবিক ফলন তলানিতে নেমে আসছিল। এর পর ফের সাম্প্রতিক নিম্নচাপের বৃষ্টির কারণে রাজ্যের ফুলচাষ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ায় বাজারের এই হাহাকার অবস্থা।” সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়ক জানিয়েছেন, একদিকে বর্ষার সময় প্রচন্ড গরম, তার পর বেশ কয়েকদিন ধরে মেঘলা আবহাওয়ার কারণে ফুলের উৎপাদন ব্যহত হচ্ছিল। তার উপর বন্যা ও সাধারণ বৃষ্টিতে উপরোক্ত জেলার বিভিন্ন ব্লকগুলোর ফুলবাগানে জল জমে ফুলের চাষ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। সে জন্যই ফুলের দাম এই রকম আকাশছোঁয়া।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.