সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পুষ্টিতে ভরপুর ড্রাগনকে বাংলার খাদ্যতালিকায় তুলে আনতে রাজ্যে একশো দিনের প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে এই ফলের চাষ। জঙ্গলমহল পুরুলিয়ায় মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা কর্মসূচি বা একশো দিনের কাজে এই চাষকে যুক্ত করছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। মধ্য আমেরিকার এই ফলের চাষ ইতিমধ্যেই এই রুখা ভূমিতে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করে সাফল্য মিলেছে। এখন সেই চাষের মাধ্যমেই বনমহলে কর্মসংস্থানের দরজা খুলে দিতে মাঠে নামছে পুরুলিয়া ব্লক প্রশাসন।
জঙ্গলমহল বান্দোয়ানের চিরুডি পঞ্চায়েতের কায়রাতে ড্রাগন ফলের গাছ লাগানো হয়। প্রায় এক বিঘা জমিতে এই ফলের হাজার গাছ লাগাবেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আর সেই চাষকে সফল করতে সার বিলি থেকে শুরু করে কারিগরী পরামর্শ-সহ সব সাহায্য করছে বান্দোয়ান ব্লক প্রশাসন। এই ফলের চাষকে একশো দিনে যুক্ত করতে বান্দোয়ান ব্লক থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে প্রকল্প রিপোর্টও পাঠায়।
জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, “একশো দিনের প্রকল্পে মানুষকে কাজ দিতে ড্রাগনের মতো ফলের চাষের কথা আমরা ভাবছি। এই জেলায় এই ফলের চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।” উল্লেখ্য, কাশীপুরে আত্মা প্রকল্পে বছর দেড়েক আগে রাজ্যের উদ্যান পালন দপ্তর এই চাষ প্রথম শুরু করে। তারপর থেকেই পুরুলিয়ায় এই ফলের চাষে কৃষকদের উৎসাহ দিতে নানা আলোচনা চক্র করছে ওই দপ্তর। তৈরি হয় প্রদর্শনী ক্ষেত্রও। ফলে কৃষকদের এই চাষে ঝোঁক বাড়ছে। পশ্চিমাঞ্চলের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, বীরভূম, বর্ধমানে বিকল্প চাষ হিসাবেও এই ফল চাষ করা যাতে পারে বলছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
মধ্য আমেরিকার এই ‘ড্রাগন ফ্রুট’ ইতিমধ্যেই এশিয়ার চিন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। রাজ্যে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত ধরে এই চাষ শুরু হয়েছে। তবে এই ফলে বহুবিধ খাদ্যগুণ থাকলেও সুক্রোজ থাকে। ফলে বেশি খাওয়া যায় না। তবে পরিমত আহারে সমস্যা নেই। এই ফল ঘর সাজাতেও কাজে লাগে। এর বাজারমূল্য প্রতি কিলোগ্রাম প্রায় তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো টাকা।
লাল ও হলুদ রঙের এই ফলে মাংসল অংশটি লাল, সাদা, কালো ছোট-ছোট দানার বীজ হয়ে থাকে। এর স্বাদ অনেকটা নাসপাতির মতোই টক-মিষ্টি। এই ফল যেমন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তেমনই কোলেস্টরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ভয় থেকে দূরে রাখে। এই ফলের বীজে ওমেগা-৩, ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ক্যানসারও প্রতিরোধ করে। হাঁপানি ও বার্দ্ধক্য প্রতিরোধে এটি ব্যাপক কার্যকর। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস। এটি আরথাইটিস প্রতিরোধেও সাহায্য করে। এমন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফলকে রাজ্যে তুলে ধরতেই এটি চাষের প্রসার চাইছে উদ্যান পালন দপ্তর।
পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর মহকুমার উদ্যান পালন দপ্তরের আধিকারিক তামসী কোলে বলেন, “কাশীপুরে পরীক্ষামূলকভাবে এই ফলের চাষ প্রথম শুরু হয়। এখন জেলার একাধিক জায়গায় চাষ হচ্ছে। এর পুষ্টিগুণ দারুন। তাই এর চাষের প্রসার কৃষকদের উৎসাহ যোগাচ্ছে। এই ফল বিকল্প চাষ হিসাবেও উঠে আসতে পারে।” অনেকটা ক্যাকটাস গোছের এই গাছ গ্রীষ্মকালীন হলেও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়াতেও ভালভাবে চাষ করা সম্ভব বলে জেলার কৃষি কর্তারা জানান। বান্দোয়ানের বিডিও শুভঙ্কর দাস বলেন, “এই ফলের চাষে জঙ্গলমহলের কৃষকদের ব্যাপক ঝোঁক বাড়ায় আমরা একশো দিনের কাজে একে যুক্ত করছি।”
উদ্যান পালন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় পাঁ-ছ’ফুট উচ্চতার এই গাছগুলি কংক্রিটের সরু পিলার করে লাগালে ভাল হয়। তাহলে গাছের বৃদ্ধি সহজেই হবে। গাছ বাড়লে দড়ি দিয়ে জড়িয়ে মাথায় রডের বেড়ি পরিয়ে দিতে হয়। ওই বেড়ি দিয়ে ডালগুলি ঝুলে নেমে আসে। তবে রডটি রবার দিয়ে জড়াতে হবে। না হলে গ্রীষ্মে রড গরম হয়ে গাছের ক্ষতি হতে পারে। গাছ লাগানোর প্রায় বছর খানেক পর ফুল আসে। ফুল আসার ২৮ দিন পর ফুল থেকে ফল আসে। প্রায় দুশো থেকে চারশো গ্রামের এই ফলটি গাছ প্রতি ২০ থেকে ২৫টি ফলে। শীতে ফুল আসে না। এই গাছ খরা সহনশীল। বর্ষার জল জমে না এমন জমি এই চাষে প্রয়োজন। জল না পেলেও গাছ মরে যায় না। তবে বেশি মাত্রায় ফলনের জন্য পর্যাপ্ত সেচ-সার প্রয়োজন। গাছ কেটেও লাগানো যায়। ফলে বাড়ির আশেপাশের ছোট জায়গায় সহজেই এই চাষ সম্ভব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.