প্রতীকী ছবি।
গৌতম ব্রহ্ম: লাগবে শুধু জল, আলো আর হাওয়া। তাতেই কেল্লা ফতে! ইজরায়েলি ‘হাইড্রোপোনিক’ (Hydroponic) প্রযুক্তির দৌলতে মাটি ছাড়াই চাষ (Agriculture) করে সোনার ফলন ফলানো যাবে। মাত্র আট দিনেই এক কেজি বীজ হয়ে উঠবে আট কেজি চারা! অভাবিত শুধু নয়, অভূতপূর্বও। এহেন নয়া সবুজ বিপ্লবের হদিশ দিয়েই আন্তর্জাতিক মঞ্চে পুরস্কার জিতে নিলেন এক বঙ্গতনয়।
শৌর্যদীপ বসাক। বাগুইআটির এই তরুণ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিটেক করার পর ‘প্রাইস ওয়াটার কুপার্স’-এর মতো সংস্থায় চাকরি শুরু করেছিলেন। কিন্তু মাথায় আবিষ্কারের পোকা ঢুকলে কি দশটা-পাঁচটার অফিস পোষায়? অতএব চাকরি জীবনে ইতি টেনে ফের পড়াশোনার জগতে। টেরি স্কুল অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিজ (TERI) থেকে রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে এমটেক।
আর এমটেকের প্রজেক্ট হিসাবেই হাইড্রোপনিক ফার্মিংকে বেছে নেওয়া। প্রজেক্টে শৌর্যদীপের সঙ্গী হয়েছেন সহপাঠী লবকেশ বালচন্দানি। দু’জনে মিলে এমন এক ব্যবস্থাপনার জন্ম দিয়েছেন, যেখানে অত্যন্ত সস্তায় ও কম সময়ে চারা তৈরি সম্ভব। শৌর্যদীপের দাবি, প্রক্রিয়াটি এই প্রচলিত চাষ পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। মাটির কোনও বালাই না থাকায় জলের সাশ্রয় প্রায় ৯৫%। বীজ থেকে চারাগাছে রূপান্তর মাত্র আট দিনে।
‘ইউকে এড’ ও ‘আইকেইউএ ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত ‘এফিসিয়েন্সি ফর অ্যাকসেস ডিজাইন চ্যালেঞ্জ’ প্রতিযোগিতায় শৌর্যদীপদের মডেল সবার নজর কেড়ে ব্রোঞ্জ জিতেছে। আদায় করে নিয়েছে বিশেষজ্ঞদের সমীহ। ২০১৯ সালে ভারতে দারিদ্রের ফাঁদে ১০,২৮১ জন চাষি আত্মহত্যা করেছেন।
শৌর্যদীপের দাবি, বেশিরভাগ চাষির গবাদি পশু রয়েছে, দুধ বিক্রিও তাঁদের রোজগারের একটা পন্থা। কিন্তু সবুজ পশুখাদ্যের অভাবে গবাদি পশুরা দুর্বল হয়ে পড়ছে, কমছে দুধের উৎপাদন। শৌর্যদীপের হিসেবে, ভারতে পশুখাদ্যের ঘাটতি প্রায় ৩২%। যা মিটিয়ে চাষিদের উপার্জন বাড়ানো সম্ভব। গরুপিছু দৈনিক ৫০ টাকা পর্যন্ত রোজগার বাড়তে পারে।
শৌর্যদীপদের আবিষ্কৃত যন্ত্রে একটি মাইক্রো কন্ট্রোলার ব্যবহার করা হয়েছে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রিন হাউসের ভিতর তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার পরিমাপ করে জল দেওয়ার কাজ করবে। একে বলা হয় ‘অ্যাভাপরেটিভ কুলিং।’ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, ভারতে যে কোনও আবহাওয়াতেই পদ্ধতিটি কাজ করবে। খরচও সাধ্যের মধ্যে। দৈনিক ৫০ কেজি পশুখাদ্য উৎপাদনে সক্ষম একটি ইউনিট তৈরি করতে খরচ সাকুল্যে সাড়ে সাত হাজার টাকা। চাইলে এই যন্ত্রে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমটি সোলার প্যানেল ব্যবহার করেও চালানো যায়। শুধু পশুখাদ্য নয়, এই যন্ত্র ব্যবহার করে মাশরুম, সবজিচাষও করা যাবে।
এমটেক করতে করতেই হাইড্রোফোনিক পদ্ধতি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন শৌর্যদীপ। তাঁর কথায়, “আমাদের দেশের ৯০ শতাংশ চাষিই ছোট ও প্রান্তিক। অর্থাৎ, জমির পরিমাণ খুব কম। মেকানাইজড ফার্মিংয়ের সুযোগ নেই। এঁদের কপাল খুলে দিতে পারে হাইড্রোপোনিক ফার্মিং।”
হাইড্রোপোনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবক ইজরায়েল। বহু দেশ এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। শৌর্যদীপরা এর সঙ্গে আরও কিছু প্রযুক্তি মিশিয়েছেন। জানিয়েছেন, মাত্র এক কেজি বীজ নিয়ে শুরু করা যেতে পারে। একটি বস্তায় পুরে বীজগুলো একদিন রাখলেই অঙ্কুরোদ্গম হয়ে যাবে। তারপর বইয়ের সেলফের মতো ট্রেতে স্তরে স্তরে রাখতে হবে। সাত-আট দিনের মাথায় ৬-৮ কেজি চারা হয়ে যাবে। চারা তৈরির যন্ত্রে জল দেওয়ার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা রয়েছে। তাতে লাগানো মাইক্রো কন্ট্রোলার তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা মেপে সেইমতো গাছে জল ছেটানোর ব্যবস্থা করবে। কৃত্রিম শীতাতপনিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন নেই। চাইলে একটা সোলার প্যানেলও এতে জোড়া যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.