শংকর কুমার রায়, রায়গঞ্জ: বেগুনের গুণ অনেক। বেগুন বাজারে দু’রকম রঙের পাওয়া যায়। সাদা ও বেগুনি। বেগুনি বা কালো বেগুনের গুণ তুলনামূলকভাবে বেশি। বেগুন যত কচি হবে সেই বেগুন তত গুণসম্পন্ন। কচি বেগুন নিয়মিত খেলে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। তবে। বেগুনের উপকারিতা বহু। চিকিৎসকদের মতে, বসন্তকালে বেগুন খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে যথেষ্ট জরুরি। বেগুনে কফ নাশ হয়। হিং ফোড়ন দিয়ে বেগুনের তরকারি তেল দিয়ে রান্না করে খেলে গ্যাসের রোগীরা উপকার পাবেন। এছাড়া, বেগুন মূত্রবর্ধক। বেগুন মধুর, তীক্ষ্ম ও উষ্ণ। পিত্তনাশক, জ্বর কমায়। খিদে বাড়ায়। পরিপাক করা সহজ এবং পুরুষত্ব বৃদ্ধি করে। সুকোমল বেগুন সম্পূর্ণ নির্দোষ। শরীরে মেদ বৃদ্ধি রোধ করে। যাঁরা মোটা হতে চান না, তাঁদের পক্ষে বেগুন অত্যন্ত কার্যকরী সবজি। বৈজ্ঞানিক মতে, বেগুনে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন এবং কিছু কিছু খনিজ লবণ থাকে। বেগুন নানাভাবে খাওয়া যায়। সবজি হিসাবে ভাজা থেকে শুরু করে পোড়া এমনকি ঝোলেও বেগুন অম্ল মধুর।
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বাহিন, গৌরী পঞ্চায়েত ও মাড়াইকুড়া পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত এলাকায় ও জেলার হেমতাবাদ, কালিয়াগঞ্জের ধনকৈল্য এবং করণদিঘির বাজারগাঁও এলাকায় সারা বছর বেগুন চাষ করা হয়। বেগুন অত্যন্ত অর্থকরী সবজি। রায়গঞ্জের টেনহরির কৃষক দীপঙ্কর দাস জানান, গত পাঁচ বছর ধরে এই মরশুমের বেগুন চাষ করছেন। এবার প্রায় সাড়ে পাঁচ বিঘা কৃষি জমিতে হাইব্রিড বেগুনের চাষ করা হচ্ছে। উত্তর দিনাজপুর জেলায় মূলত দুই ধরনের বেগুন চাষ করা হয়। সেগুলি হল হাইব্রিড বেগুন আর দেশি বেগুন।
প্রথমে চুন অথবা ডলোমাইট ছিটিয়ে জমি শোধন করতে হবে। বিঘা পিছু কমপক্ষে ৩৫ কিলোগ্রাম চুন ছিটানো যেতে পারে। প্রায় দেড় থেকে দু’মাস পরে জমিতে নিড়ানি দিয়ে জৈব সার হিসাবে বিঘা পিছু তিন কুইন্টাল গোবর ছিটিয়ে বেগুন চাষের জমি প্রস্তুত করতে হয়।
বেগুনের চারা তৈরি করতে খালি জমিতে বীজতলা বানানো হয়। সেখানে বেগুনের বীজ ছিটিয়ে দিতে হয়। ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে বীজতলায় চারা উৎপাদন হয়। এরপর সেই চারা জমিতে বুনতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে প্রতিটি গাছে যেন স্বছন্দে আলো বাতাস খেলতে পারে। সেজন্য বেগুনের চারাগুলি অন্তত দেড় থেকে দুই হাত ফাঁকে ফাঁকে বুনতে হবে। তাতে চার গাছ বাড়তে সুবিধা হয়। আর গাছ স্বাস্থ্যবান হলে ফলনও আকারে বড় হবে। পাশাপাশি জমিতে মাটি উঁচু করে দিয়ে আল তৈরি করতে হবে। যাতে নিয়মিত জল দেওয়া সম্ভব হয়। চারাগাছ লাগানোর প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর থেকে ফলন সুপক্ক হয়ে উঠবে।
পোকার আক্রমণ প্রতিহত করতে জৈব নিম পাতার তেল গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হয়। অনেক কৃষক আবার রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করেন। এক একটা বেগুন ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম ওজনের সাধারণত হয়ে থাকে। বছরে কমপক্ষে তিন-চার বার ফলন দেয়। গাছ লাগানোর চার মাস পর্যন্ত ফলন হয়। তারপর বেগুন গাছের কর্মক্ষমতা কার্যত ফুরিয়ে যায়। এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করতে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। উত্তর দিনাজপুর জেলা উদ্যান পালন দপ্তরের আধিকারিক সুফল মণ্ডল বলেন, “বেগুন উৎপাদনে উৎসাহ বাড়াতে কৃষকদের বীজ কেনার জন্য বিঘা পিছু আটশো টাকা সাহায্য দেওয়া হয়। কখন আবার টাকার বদলে বিনা পয়সায় বেগুনের বীজ সরবরাহ করা হয়। তবে যেহেতু বেগুনের চাহিদা বেশি, তাই কৃষকদের আর্থিক লাভ ভাল হয়। সারা বছরই বেগুন চাষ করা যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.