বিক্রম রায়, কোচবিহার: ভারতীয় রান্নায় ব্যবহৃত মশলার মধ্যে গোলমরিচ বহুল পরিচিত। বর্তমানে এর বাজার দর আকাশছোঁয়া। দেশ-বিদেশে এর বিপুল চাহিদাও রয়েছে। কিন্তু ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ কয়েকটি রাজ্যে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে এর চাষ করা হয়। এবার এ রাজ্যের কৃষকদের আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করতে কোচবিহার জেলায় গোলমরিচ চাষের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে উদ্যান পালন বিভাগ। জেলায় যে সমস্ত এলাকায় সুপারির বাগান রয়েছে সেখানে বিশেষভাবে কৃষকদের এই চাষে আগ্রহী করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
জেলায় বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়। সুপারি এই জেলার একটি প্রধান অর্থকরী ফসল। সুপারি গাছের গোড়ার দিকের কিছুটা অংশে পানের গাছ জড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই জড়িয়ে দেওয়া পানের গাছকে নির্ভর করে লতানো গোলমরিচের গাছ বৃদ্ধি পাবে। ঠিকমতো পদ্ধতি মেনে গোলমরিচ চাষ করতে পারলে বেশি আয়ের পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। আর এই চাষের জন্য আলাদা করে জমির প্রয়োজন হয় না। ফলে যে জমিতে সুপরি ও পানের চাষ হচ্ছে সেখানেই এখন উন্নতমানের গোলমরিচ উৎপাদন করা সম্ভব। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও ভারতীয় গোলমরিচের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলিতে। কৃষকদের এই চাষে আগ্রহ বাড়ানোর লক্ষ্যে ইতিমধ্যে গোলমরিচের চারা বিলি করা হয়েছে। এক বিঘা জমিতে প্রায় ১৩০০ সুপারি গাছ লাগানো থাকে। সেখানে যদি গোলমরিচ লাগানো যায় তাহলে দেড় থেকে দু’বছরের মধ্যে তাতে ফল ধরা শুরু হয়। একটি গোলমরিচের গাছ ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। প্রতিটি গাছের থেকে গড়ে ফি-বছর এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত গোলমরিচ উৎপাদিত হয়। মূলত তামিলনাড়ু এবং কেরলে সবচেয়ে ভাল গোলমরিচ উৎপাদন হয়। তবে সেখানে এই উৎপাদন বাড়ানোর মতো পর্যাপ্ত জমির অভাব দেখা দিয়েছে। সে কারণে দেশের অন্য রাজ্যের পাশাপাশি এই রাজ্যের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতে গত কয়েক বছর আগে গোলমরিচ চাষের উপর কৃষি দপ্তর বিশেষ পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেছিল। আর তাতে ভাল ফল মেলার পর এবার তার চাষ বাড়াতে বিশেষভাবে উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
রক্ষণাবেক্ষণ : মূলত সুপারি গাছের দুই থেকে তিন ফুট দূরে গোলমরিচের গাছ লাগাতে হবে। সেই কাজটি যাতে মাটিতে না পড়ে যায় তার জন্য বাঁশের কাঠি বা ওই জাতীয় কোনও জিনিস দিয়ে গাছটি দাঁড় করিয়ে দিতে হবে। যতদিন না সুপারি গাছে উঠে যাচ্ছে। গোড়ায় যাতে জল না জমে সে বিষয়ে সতর্কভাবে নজর রাখতে হবে।
সার প্রয়োগ: মূলত বর্ষার আগে ও পরে সামান্য পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি খুব সামান্য পরিমাণে ইউরিয়া, ফসফেট ও পটাশিয়াম দিতে হবে বছরে দু’বার করে।
ফল: গাছ লাগানোর দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে গোলমরিচের ফলন ধরতে শুরু করে। একটি গাছ ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। প্রতিটি গাছে বছরে দেড় থেকে দু’কেজি পর্যন্ত ফল উৎপাদিত হয়।
বাজার: গোলমরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে স্থানীয় বাজারে গোলমরিচ কিনে নেওয়া হয়। ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় গোলমরিচ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.