শংকরকুমার রায়: ফিরে এলো ঝিঙ্গাশাল, মাগুরশাল, পারিজাত। সঙ্গে রাজভোগ, মশলাভোগ, মালসাভোগ ও কলম। কী ভাবছেন নানা সুস্বাদু খাবারের কথা বলছি? মোটেও না। এ সবই উত্তরের বিলুপ্তপ্রায় রকমারি ধান। দশ বছর আগেও যে ধানের নাম শোনা যায়নি। রাসায়নিক দূষণ সহ বিভিন্ন কারণে উত্তরের মাটি থেকে একে একে উধাও হয়েছিল সবই। সেই হারানো ধান ফিরিয়ে এনে তাক লাগালেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা। এক-দুটি নয়। কুড়িটি প্রজাতি রয়েছে বিজ্ঞানীদের তালিকায়। ধানের খাদ্যগুণ এবং বিভিন্ন উপকারিতা নিয়েও অনুসন্ধান চলছে।
উত্তরের এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ঘুরে চাষিদের সংগ্রহে থাকা বিলুপ্তপ্রায় ধানের বীজ সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে নিয়ে আসেন গবেষকরা। সেখানে চলে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি ধানের গুণগত মান বের করার কাজ। কেন ধানগুলি বিলুপ্ত হয়েছে সেই কারণ অনুসন্ধানে ল্যাবরেটরিতে চলে ধারাবাহিক পরীক্ষা। উত্তরের নিজস্ব প্রজাতি ধান চাষের সমস্যার কথা চাষিদের মুখে শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেন গবেষকরা।
চলতি বছরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রসায়ন বিভাগের প্রধান অসীম বোথরার নেতৃত্বে সাত সদস্যদের কমিটির তত্ত্বাবধানে ‘এনভায়রনমেন্ট কনজারভেশন সেন্টার’ তৈরি হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন জৈব উপাদান সংগ্রহ করে জৈব সার তৈরির কাজ চলছে। গুণমান ঠিক রাখতে এই সমস্ত জৈব সারে চলছে দেশি ধানের গবেষণা। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক কিংকর বিশ্বাস জানিয়েছেন, বেগুনবিচি প্রজাতির দেশি ধান নিয়ে প্রথম গবেষণার কাজ শুরু হয়। ওই ধানের খাদ্যগুণ এবং বিভিন্ন উপকারিতা অনুসন্ধান করে বের করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, প্রাচীনকাল থেকে উত্তরের মানুষ এই সমস্ত ধান চাষ করত। ধানের চাল যে প্রতিষেধক হিসেবেও ব্যবহার হত প্রচুর নমুনা রয়েছে। গবেষণায় বেগুনবিচি ধানের চাল থেকে ওষুধ তৈরির যথেষ্ট সম্ভবনার ইঙ্গিত মিলেছে। অন্য প্রজাতির ধানেও ওষধি গুণাগুণ রয়েছে। প্রতিটি দেশি ধানের প্রজাতি নিয়ে পৃথকভাবে গবেষণা চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এই কাজ উত্তরের কৃষির আদল পালটে দিতে পারে। কারণ, শুধুমাত্র ধান চাষ নয়। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করে মানুষের হাতে বিষমুক্ত খাবার তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করাই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.