গৌতম ব্রহ্ম: শুরুটা হয়েছিল সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে, ভিন্ন কারণে। সর্দি-কাশি উপশমে প্রাকৃতিক ওষুধের জন্য তুলসী (Basil) চাষ শুরু করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেই চাষই যে এত বড় একটা বিপ্লব আনবে, কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। অথচ বাস্তবে যা হল, তাকে রূপকথা বললেও অত্যুক্তি হয় না। নানা ভেষজ ফসলের সামান্য চাষই (Agriculture) আজ দুনিয়ার দুয়ারে চাহিদা তুঙ্গে। তুলসী থেকে একাধিক সামগ্রী তৈরির জন্য আগ্রহী বিভিন্ন সংস্থা। আর এই চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে রবিবার থেকে ভেষজ মেলা শুরু হচ্ছে কোচবিহারের (Cooch Behar) নাটাবাড়ির তুলসী গ্রামে।
নাটাবাড়ি (Natabari) ২ নং ব্লকের বাসিন্দারা একটা সময়ে সারাবছর ধরেই ভুগতেন সর্দি-কাশিতে। ঠান্ডা লেগে থাকত। সেসময় বাসবকান্তি দিন্দা নামে খ্যাতনামা চিকিৎসক তাঁদের পরামর্শ দেন, তুলসী চাষ করে তা খাওয়ার। কীভাবে তুলসীকে ওষুধ হিসেবে খেতে হবে, তাও প্রেসক্রিপশনের আকারেই বলে দেন তিনি। যেমন পরামর্শ, তেমন কাজ। তুলসী চাষ এবং ভেষজ ওষুধ খেয়ে রোগমুক্ত হন বাসিন্দারা। তারপর সেই গ্রামটির নাম হয়ে যায় ‘তুলসী গ্রাম’। আর এহেন সাফল্যের জন্য ডাক্তারবাবুর হাতে আসে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার।
এবার সেই ‘তুলসী গ্রাম’ই ভেষজ চাষে বিপ্লব ঘটিয়ে দিল। শুধু তুলসীই নয়, শতমূলী, অর্জুন, হরিতকী, আমলকী – সমস্ত ভেষজ ফসলের চাষ শুরু হয় পাশাপাশি সমস্ত গ্রামে। এমনকী ফাঁকা পড়ে থাকা জমিতেও তুলসীর চাষ শুরু করেন বাসিন্দারা। স্কুলে স্কুলে ভেষজ সচেতনতা প্রচার চলে। স্কুলপড়ুয়ারাও তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভেষজ ফলমূল উৎপাদনে নজর দেয়। করোনা কালে সেসব বিক্রি করে ভাল অর্থ আয় হয়। কারণ, যে কোনও ভেষজ ওষুধ তৈরির অন্যতম মূল উপাদানই তুলসী। ছোট্ট সবুজ পাতা থেকে ক্যান্ডি, তেল-সহ নানা জিনিস তৈরি হয়। তার চাহিদাও বাড়ে। এগিয়ে আসে বিভিন্ন সংস্থা।
এই সাফল্যের উপর ভর করে রবিবার থেকে ভেষজ মেলার আয়োজন করেছে নাটাবাড়ি ২ নং ব্লকের ভেষজ সুরক্ষা ভাণ্ডার। রাজ্যে প্রথম এমন একটা মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। তাঁদের উৎপাদিত ভেষজ শস্য-সামগ্রী কিনতে ভিড় জমাতে চলেছে বিভিন্ন কোম্পানি। আয়োজকদের আশা, এই মেলা সাড়া ফেলে দেবে। দারুণ ব্যবসা হবে তাঁদের। বদলে দেবে তাঁদের জীবনাধারা। ভেষজ চাষে এ এক বিপ্লবই বটে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.