টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: শেষ শ্রাবণের বৃষ্টিই ভরসা আমন চাষে। গত কয়েকদিনে মাঠঘাটে জল জমল, আর তাতেই এগিয়ে চলল আমন রোয়ার কাজ। বাঁকুড়ার ক্ষেত্রে কিন্তু ছবিটা ভিন্ন। এই জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকে আমন রোয়ার কাজ হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ! সবচেয়ে ভয়ংকর পরিস্থিতি জেলার খাতড়া ব্লকের হীড়বাঁধ, খাতড়া এবং ইন্দপুর ব্লকের।
জেলার উপকৃষি অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, “গত এক মাসে ১৯০.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও চলতি বছর এই তিন ব্লকে আমন রোপণ করা হয়েছে ১৫ শতাংশেরও কম জমিতে। তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভাল হলেও বাঁকুড়া সদর মহকুমার শালতোড়া ব্লকে মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে আমন রোপণ করা গিয়েছে। যদিও এই জেলারই বিষ্ণুপুর মহকুমার ৯০ শতাংশ জমিতে আমন রোপণ হয়েছে। বন্যা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে এবারও নভেম্বর মাসের শেষে অথবা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ধান ঘরে তুলতে পারবেন চাষিরা।”
এবার মরশুমের শুরুতে চাষ নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন জেলার কৃষকরা। বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক ব্লকে কৃষকরা বীজতলা তৈরি করতে পারেননি। অনেকে বীজতলা তৈরি করলেও জলের অভাবে তা রোয়ার কাজ শুরু করতে না পারায় জমিতে গরু নামিয়ে ধানচারা খাইয়ে দিয়েছেন এমনও ছবি ধরা পড়েছিল। সেই জায়গায় গত একমাসের বৃষ্টিতে জেলার হাতেগোনা কয়েকটি ব্লক ছাড়া একাধিক ব্লকে ৯০ শতাংশ চাষ হওয়ায় আশাবাদী কৃষিদপ্তরও। ওন্দার রতনপুরের বাসিন্দা সোমনাথ চক্রবর্তী বলেন, “গত বছর ১৫ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছিলাম। এবার জল না থাকায় প্রথমে সমস্যায় পড়ে যাই। বীজতলা সময়ে করতে পারিনি। পরে ক্যানালে জল আসায় সমস্যা মিটিয়ে পুরো জমিতেই চাষ করেছি।” বড়জোড়ার পখন্যার বাসিন্দা রমা মুখোপাধ্যায় বলেন, “সাবমার্সিবলের জল কিনে অন্যের মাঠে গিয়ে বীজ ফেলেছি। যদি বর্ষার জল না পাই তাহলে চাষ হবে না। কী করব জানি না তখন।” তবে তিনি বলছেন, “প্রকৃতি সহায় হলে ফলন ভাল হবে বলেই আশা করছি।”
অন্যদিকে, বাঁকুড়া ১ ও ২ নম্বর ব্লক সহ বাঁকুড়া শহরে এবার তেমন বৃষ্টি হয়নি। তবে বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লকের আঁচুড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের বাসিন্দা সুমন বাউরি বলেন, “গত বছরও ১৫ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছিলাম। এবছর মরশুমের শুরুতে কিছুই করতে পারিনি। তবে একটু বৃষ্টি হয়েছে।” বিষ্ণুপুরের রাধানগরের বাসিন্দা আশিস মল্ল জানান, তাঁর ২২ বিঘা জমি। কোনও রকমে ১৪ বিঘা জমিতে বীজতলা তৈরি করতে পেরেছি। বাকি কবে হবে জানি না। তবে গত কয়েকদিন বৃষ্টি হচ্ছে বেশ ভালই।
জেলার উপকৃষি অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্রের কথায়, “বৃষ্টি আসতে একটু দেরি হয়েছে। তবে এখনই আশাহত হওয়ার কোনও কারণ দেখছি না। পর্যাপ্ত জল না থাকায় জেলায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর গত বছর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল কিন্তু চাষ হয়েছিল মাত্র ৩ লক্ষ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে। এবারও তাই হবে বলে আমার ধারণা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.