Advertisement
Advertisement
Bankura

অসময়ের বৃষ্টিতে জলমগ্ন জমি, ফসল তুলতে নাজেহাল কৃষকরা

বহু জমির ধান ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

Bankura farmers' face rain wrath | Sangbad Pratidin
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:October 25, 2021 4:51 pm
  • Updated:October 25, 2021 4:51 pm  

দেবব্রত বিশ্বাস, পাত্রসায়র: অসময়ে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। তার জেরে জমিতে জল দাঁড়িয়েছে। কৃষকের পাকা ধানে কার্যত ‘মই’ দিয়েছে পুজোর সময়ে হওয়া বৃষ্টি। মিনিকিট, গেট ওয়ান, আই আর ৩৬-সহ বিভিন্ন প্রজাতির ধান কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই বৃষ্টিতে। নষ্ট হয়েছে পটল, শসা, টম্যাটো, কুমড়ো, লাউ, বেগুন, ঝিঙে-সহ বিভিন্ন প্রকারের কাঁচা শাক-সবজি। বৃষ্টি বন্ধ হলেও জমা জল এখনও রয়ে গিয়েছে বহু এলাকার ধানজমিতে। ফলে জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলতে গিয়ে চরম সমস্যায় পড়েছেন বাঁকুড়ার সোনামুখী, পাত্রসায়ের-সহ বহু এলাকার চাষিরা।

দামোদর ও শালি নদী তীরবর্তী ওইসব এলাকায় পাকা ধান লুটিয়ে পড়েছে জমিতে। সেই জমিতে মেশিন নামিয়ে ধান ঘরে তুলতে গিয়ে প্রচণ্ড বেগ পেতে হচ্ছে চাষিদের। অনেক জমির ধান একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে জমি থেকে ধান তোলার খরচও উঠছে না বলে অভিযোগ চাষিদের। এই অবস্থায় জমি থেকে ধান ঝাড়াই করতে গিয়ে ব্যাপক আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন চাষিরা। অবিলম্বে বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত ধানজমির উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা। কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে অবশ্য কিছু এলাকায় এই ক্ষতির কথা কার্যত স্বীকার করে সরকারি নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: উত্তরাখণ্ডে নিহতদের দেহ ফেরানোর আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর, পরিবারের প্রতি জানালেন সমবেদনা]

গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে ও দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে ভারী বৃষ্টি হয়েছে বাঁকুড়ায়। এই বৃষ্টির জেরে বাঁকুড়া, ছাতনা, মেজিয়া, শালতোড়া, বড়জোড়া, সোনামুখী, পাত্রসায়ের ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা দামোদর, শালি, গন্ধেশ্বরী, দ্বারকেশ্বরের জলে প্লাবিত হয়েছে। জলমগ্ন হয় নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকার ধানজমি। বেশ কিছু এলাকায় ধানচারা, কাঁচা শাক-সবজি জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। জল কমলেও ধান জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চাষিরা জানিয়েছেন, সোনামুখী ব্লকের রাধামোহনপুর, ডিহিপাড়া, ধুলাই, পূর্ব নবাশন, ধানসিমলা, পাত্রসায়ের ব্লকের নারায়ণপুর, হামিরপুর, বেলুট-রসুলপুর এলাকার দামোদর ও শালি নদী তীরবর্তী নিচু জমিতে জল এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে। আউস ধান পুরোপুরি পেকে গিয়েছে। বহু এলাকায় জমি থেকে ধান কাটা ও ঝাড়ার কাজ চলছে। এই পরিস্থিতিতে জমি থেকে মেশিনের সাহায্যে ধান ঝাড়াই করতে গিয়ে চরম সমস্যায় পড়ছেন চাষিরা। একে তো জমিতে ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে, তার উপর জল জমে থাকায় কর্দমাক্ত জমি! দ্বিগুণ খরচ হলেও ধানের ফলন হয়নি। বহু জমির ধান ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

কৃষি দপ্তরের বাঁকুড়া রেঞ্জের জয়েন্ট ডিরেক্টর সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, “নিম্নচাপের টানা ভারী বৃষ্টির জন্য বাঁকুড়া জেলার কিছু এলাকায় ধান চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝিঙে, বেগুন, শসা, কুমড়ো, পটল, করলা, ঢ্যাঁড়শ, টম্যাটো-সহ বিভিন্ন কাঁচা শাক সবজি জমিতে জল জমে থাকায় কার্যত নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মিনিকিট, গেট ওয়ান-সহ বিভিন্ন প্রজাতির আউস ধান বহু এলাকায় কাটা ও ঝাড়াইয়ের কাজ চলছে এখন। কিছু এলাকায় জমিতে জল থাকায় চাষিরা সমস্যায় পড়েছেন। প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির ধান ও সবজি নষ্ট হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পুরো রিপোর্ট রাজ্যস্তরে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিপূরণের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঠিক করবেন। তবে কিছু এলাকায় চাষিরা ক্ষতিপূরণ পাবেন।”

সোনামুখী ব্লকের রাধামোহনপুর পঞ্চায়েতের অমৃতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা পেশায় চাষি সুকুমার রায়ের আক্ষেপ, “প্রায় এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। জলের তোড়ে অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যেটুকু ছিল সেগুলি ঝাড়াইয়ের জন্য জমিতে মেশিন নামিয়েছিলাম। মাত্র দু’বস্তা ধান পেয়েছি। তাও আবার ভিজে তুষের মতো হয়ে গিয়েছে। লাভ তো দূরের কথা, চাষের খরচটুকুও ওঠেনি। অনেক কষ্টে ধার দেনা করে চাষ করেছিলাম। কী যে করব, কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। সরকারের কাছে আমরা ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।” পাত্রসায়ের ব্লকের শিমূলডাঙা গ্রামের বাসিন্দা পায়েল দুয়ারীর কথায়, “দামোদর ও শালি নদী তীরবর্তী বহু এলাকার জমিতে এখনও জল জমে রয়েছে। জমি থেকে ধান তোলা এখন এককথায় কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসময়ের এই বৃষ্টিতে প্রচুর লোকসান হবে এবার চাষিদের।”

[আরও পড়ুন: দীর্ঘদিন ধরে ঘরবন্দি কেতুগ্রামের মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক, সরকারি সাহায্যের আরজি পরিবারের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement