লিখেছেন উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ব বিভাগের গবেষক ঋত্বিক সাহু ও বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব রসায়ন বিভাগের গবেষক পার্থ মণ্ডল।
প্রতিকার
আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত ফলগুলিও ছিঁড়ে ফেলে দিতে হবে। ১% বোর্দো মিশ্রণ এবং ডিফোলাটান দিয়ে স্প্রে করে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কার্বেন্ডাজিম ১.২৫ গ্রাম পার লিটার ও ব্যবহার করা যেতে পারে। অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে এবং প্রস্তাবিত পটাশিয়াম স্যার প্রয়োগ করতে হবে।
ক্যাঙ্কার
এই রোগের প্রধান উপসর্গগুলি হল এই রোগটি পাতা, শাখা-প্রশাখা, ফলকে আক্রমণ করে। এটি গুরুতর হলে কাণ্ড এবং শিকড় আক্রান্ত হয়। ক্ষতগুলি গোলাকার হলুদ দাগ হিসেবে প্রদর্শিত হয়, যা কিছুটা বড় হয় এবং বাদামী হয়ে ফেটে যায় এবং কর্কি হয়ে যায়। এই ক্ষতগুলি হলুদ হ্যালো দ্বারা বেষ্টিত থাকে। ফলের উপর ক্ষত পাতার মতো হলুদ আভা ধারণ করে না। ফলের উপর বেশ কিছু ক্ষত একত্রিত হয়ে প্যাঁচ তৈরি করতে পারে। ফলের উপর ক্ষতগুলি গর্তের মত চেহারা ধারণ করে। পাতায় ক্ষতের কারণে পাতার ক্ষয় হয় এবং ডালপালায় গুরুতর সংক্রমণের কারণে ডাই-ব্যাক উপসর্গ দেখা দিতে পারে, গাছগুলির উচ্চতাও বেশি হয় না। এই রোগের জন্য দায়ী জীবাণুটি হল জ্যান্থোমোনাস এক্সেনোপেডিস পিভি সিট্রি নামক একটি ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণত শীতকালে আক্রমণ করে এবং বর্ষাকালে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতিকার
বর্ষার আগে সমস্ত ক্যাঙ্কার আক্রান্ত ডাল, পাতা, ফল ছাঁটাই করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। একটি কীটনাশকের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়ানাশক পর্যায়ক্রমে স্প্রে করতে হবে। কপার অক্সি ক্লোরাইড (৩০ গ্রাম) ১০ লিটার জলে প্রতি ১৫ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে। বর্ষাকালে ২০ দিনের ব্যবধানে এটি তিনবার স্প্রে করতে হবে এবং মার্বেল পর্যায়ে এটি দুটি স্প্রে এবং ৩০ দিন পর আর একটি স্প্রে করে ফলের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
ট্রিস্টেজা বা দ্রুত পতন
এই রোগাক্রান্ত গাছ প্রাথমিক অবস্থায় ক্লোরোটিক এবং অসুস্থ দেখায়। ধীরে ধীরে পাতা ঝরে যায় এবং ক্ষয়প্রাপ্ত ডালগুলি মরে যায়। ক্ষয়প্রাপ্ত গাছগুলি ধীরে ধীরে মরে যায়। তবে কখনও কখনও দৃশ্যত সুস্থ গাছ হঠাৎ মারা যায়। কচি পাতায় শিরা পরিষ্কার এবং শিরার ফ্লেক মাঝে মাঝে দেখা যায়। কাঠের সিলিন্ডারে লিনিয়ার পিট দেখা যায়। এই রোগ গাছের শিকড়গুলিতে গ্রাফট ইউনিয়নে ফ্লোয়েম নেক্রোসিস ঘটায়। এই রোগাক্রান্ত গাছগুলিতে প্রচুর ফুল ফোটে, কিন্তু গাছের উচ্চতা কম হয় এবং কম ফল ধরে, ফলগুলি ছোট আকারের এবং নিম্নমানের হয়। ফলের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গাছ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে যায়। এটি একটি ভাইরাস সংক্রান্ত রোগ।
প্রতিকার
রোগ দেখা গেলেই সমস্ত রোগাক্রান্ত গাছ সরিয়ে ফেলুন। মেটাসিটক্স–আর ২৫ ইসি (০.০৫%) এর মতো কীটনাশকের পর্যায়ক্রমিক স্প্রে বাগানে রোগের গৌণ বিস্তারকে কমিয়ে দেয়। রোগ প্রতিরোধী রুট স্টক ব্যবহার করতে হবে।
এক্সোকর্টিস
এই রোগের লক্ষণগুলি হল পাতার নিচের দিকে ঝুঁকে পড়া, ছোট হয়ে যাওয়া আকারে এবং মধ্য শিরায় নেক্রোসিস, গাছের ছালের স্কেলিং এবং গাছের বদ্ধতা। এর জন্য দায়ী হল ভাইরয়েড। এই রোগটি নিয়ন্ত্রণের জন্য রোগমুক্ত ‘বাড উড’ ব্যবহার করা উচিত এবং সঙ্গে সমস্ত কৃষিজ যন্ত্রপাতির স্যানিটেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রিনিং
এই রোগের উপসর্গগুলি হল রোগাক্রান্ত গাছগুলির উচ্চতা কম হয়, প্রচুর পরিমাণে পাতা এবং ফল ঝরে পড়া লক্ষ্য করা যায়, আক্রান্ত গাছের কিছু শাখা প্রশাখা ডাই-ব্যাক উপসর্গত প্রদর্শন করে, ফল পরিপক্ক হওয়ার পরেও সবুজ থাকে এবং যে ফলগুলি সরাসরি সূর্যের সংস্পর্শে আসে সেগুলোর ছালের উপরিভাগে একটি সুস্পষ্ট হলুদ দাগ দেখা যায়, রোগাক্রান্ত ফলগুলি ছোট আকারের এবং বিকৃত হয়। এই রোগটির জন্য দায়ী ক্যান্ডিডেটাস লিবেরিব্যাক্টর নামক একটি ব্যাকটেরিয়া।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.