শংকরকুমার রায়: মধুমেহ রোগীদের অনেক সময় কাঁচা কচি শসা খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ফলে বছরভর চাহিদা থাকা সবুজ খাদ্যগুণ সম্পন্ন শসায় মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার থাকে। তবে এবার জৈব সারে সতেজ শসা চাষে কৃষকদের উৎসাহ দিতে উত্তর দিনাজপুর জেলা কৃষি দপ্তর বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই চাষ করে যাতে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতে পারেন কৃষকরা সেজন্য উদ্যোগীও হয়েছে।
রায়গঞ্জের গৌরী এবং বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ জমিতে গত কয়েক বছর ধরে প্রচুর শসার আবাদ হচ্ছে। এবার রাসায়নিক সারের বদলে আর্দশ জৈব সারে শসার মতো আনাজ আবাদ করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন হাতিয়ার বাসিন্দা চিন্ময় দাস, মোহন দাস এবং বিজয় বর্মনরা। শসা গাছের চেহারাও বেশ ভালই হয়েছে। এক একজন কৃষক ন্যূনতম দুই বিঘা জমিতে জৈব পদ্ধতিতে বছর খানেক ধরে শসা চাষ করছেন। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সারা বছর শসার চাহিদা থাকে বাজারে। তার উপর গ্রীষ্মের মরসুমে শসার বিক্রি সবচেয়ে বেশি হয়। উদ্যান পালন দপ্তরের উত্তর দিনাজপুর জেলা আধিকারিক দীপক সরকার বলেন, ‘‘শসা চাষে জেলা কৃষি দফতর থেকে উৎসাহী চাষিদের আর্থিক সহযোগিতা করা হয়। এজন্য তাঁদের দফতরে আবেদন করতে হবে। সেই আবেদন খতিয়ে দেখে সহযোগিতা করা হয়।’’
যে জমিতে শসার মতো কিউকারবিট অর্থাৎ লতা জাতীয় আনাজ চাষ করা হবে, সেই জমিতে অবশ্যই দোঁয়াশ মাটি থাকা বাঞ্ছনীয়। তাতে ফলন ভাল হয়। এক বিঘা জমিতে অন্তত ৫০ কেজি খোল আর দুই কুইন্টাল গোবর সার দিতে হবে। খোল ও গোবর সার দেওয়া মাটি ভাল করে মেশাতে হবে। তারপর মাটিতে গর্ত করে শসার চারাগাছ লাগাতে হয়। সাতদিন পর আর্দশ তরল সার হিসাবে গোচনা দিয়ে সারা গাছের গোড়ায় দিতে হবে। ১৫ দিন পর কেঁচো সার বা কুইক সার মাটির গোড়ায় দিতে হবে। চারা বোনার ৩০ দিনের মাথায়, আর্দশ তরল সার গাছের গোড়ায় দিতে হবে। ওই ৩০ দিন পর ওই গাছ ধীরে ধীরে মাটি থেকে লতানো শসা বাঁশ বেয়ে মাচায় উঠতে শুরু করবে।
শসা গাছের রোগ পোকা রুখতে এবং গাছের পাতা হলুদ রঙ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে অনুখাদ্যে হিসাবে প্রয়োজন মতো জিঙ্ক এবং বরোন ছড়িয়ে দিতে হবে৷ কীটনাশকের বদলে নিমতেল আর গোচনা মিশিয়ে গাছে স্প্রে করে দেওয়া যেতে পারে। তারপর ৪৫ দিন পর পূর্ণাঙ্গ শসা মিলবে।
এক মরসুমে পরপর চার ধাপে গাছ থেকে শসা তোলা সম্ভব। নিয়ম মেনে চাষ করলে প্রতি ধাপে ২০ থেকে ৩০ কেজি শসার উৎপাদন সম্ভব। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ থেকে উৎপাদিত শসা শিলিগুড়ি, মালদহের পাশাপাশি এখন কলকাতায়ও রপ্তানি হচ্ছে। এর ফলে প্রচুর মুনাফা অর্জন করছেন কৃষকরা। তবে কীটনাশক শসার চেয়ে জৈব সারে উৎপাদিত শসার চাহিদা বর্তমানে তুঙ্গে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.