Advertisement
Advertisement
চাষ

জায়গা না থাকলে বস্তাতেই করুন সবজি চাষ, জেনে নিন পদ্ধতি

এই পদ্ধতিতে ফসল ফলিয়ে পুরস্কৃত নন্দীগ্রামের হাজি আলমগির হোসেন।

A farmer of Nandigram awarded for sack cultivation
Published by: Sayani Sen
  • Posted:March 29, 2019 8:43 pm
  • Updated:March 29, 2019 8:44 pm  

চঞ্চল প্রধান, হলদিয়া: নতুন পদ্ধতিতে ফসল ফলানোর তাগিদ আপনাকে তাড়িয়ে বেড়ায়? চাষ করতে ভীষণ ভালবাসেন অথচ পর্যাপ্ত জমি নেই? এ নিয়ে চিন্তাভাবনার দিন গিয়েছে৷ বরং জমি না থাকলে চাষের জন্য ব্যবহার করুন বাড়ির উঠোন, ছাদ এমনকি কার্নিশ। তার চেয়ে বলা ভাল, সেখানেই শুরু করতে পারেন ‘স্যাক কালটিভেশন’। স্যাক অর্থাৎ‍ বস্তায় চাষ৷ এমন অভিনব চাষের পদ্ধতি আবিষ্কার করে দিশা দেখাচ্ছেন নন্দীগ্রামের হোসেনপুর গ্রামের কৃষক হাজি আলমগির হোসেন। ‘উদ্ভাবনী কৃষক’ হিসেবে ইতিমধ্যেই তিনি সরকারি পুরস্কারও পেয়েছেন।

[ আরও পড়ুন: বসন্তেও বাঙালির পাতে ইলিশ! মৎস্যজীবীদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে রুপোলি শস্য]

চাষের প্রাথমিক পর্বে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে মাটি তৈরিকে। মাঠ কিংবা জমির উপরের স্তরের ‘এক কোদাল মাটি’, অর্থাৎ এক কোপে যতটা গভীর পর্যন্ত কোদাল যেতে পারে (চার-ছয় ইঞ্চি গভীর), সেই মাটি সংগ্রহ করতে হবে৷ পরিমাণভিত্তিক একটি অনুপাতে স্পষ্ট ধারণা করা যায়। ধরুন, ১৫ কিলোগ্রাম মাটির সঙ্গে দু’শো গ্রাম চুন মিশিয়ে রোদে শুকনো করতে হবে। পরে প্রায় আড়াই কিলোগ্রাম শুকনো গোবর, দুই কিলোগ্রাম কচুরিপানা এবং ৫০ থেকে ৮০ গ্রাম গুঁড়ো সরষে খোল মিশিয়ে মাটি রোদে শুকনো করতে হবে৷ আপনার চাষের মাটি তৈরি। এরপর সিমেণ্ট কিংবা মাছের ফিড, সারের পরিষ্কার বস্তার মুখ পর্যন্ত (অর্থাৎ বস্তার তিন ভাগ) মাটি ভরতে হবে।

Advertisement

SACK-CULTIVATION

[ আরও পড়ুন: মাছ চাষে এবার ভেষজ পদ্ধতি ব্যবহারে জোর মৎস্য দপ্তরের]

বীজ ফেলার আগে তা দু-তিন ঘণ্টা ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে রাখা বাঞ্ছনীয়৷ বীজ দেওয়ার আগে, মাটি সমেত বস্তাটি ঠান্ডা জলে ডুবিয়ে তুলে নিন। ঘণ্টাখানেক পর, বস্তার উপরের মাটি নিড়ানি দিয়ে নাড়িয়ে বীজ দিতে হবে। তারপর বীজের চারপাশে, বীজের সুরক্ষায় কীটনাশক হিসেবে, বীজ থেকে তিন ইঞ্চি দূরে, মাটির দুই ইঞ্চি গভীরে শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো দিতে হবে। এরপর মাটি কিংবা খড়কুটো দিয়ে বীজ ঢাকা দিন। এভাবে থাকা অবস্থায় বীজের উপর ১৫ দিন পরিমাণমতো জল দিতে হবে। অঙ্কুরিত বীজের (মাটির ওপর স্টেম কিংবা সুট সিস্টেমে) কচি পাতা দেখা যাবে। তিন-চারটি পাতা গজানোর পর, জৈবিক সার মিশ্রিত শুকনো মাটি গাছের চারপাশে যত্ন করে দিতে হবে৷ মাসখানেক পরে পচানো সরষে খোলের উপরের জল (ফলতি জল) পরিমাণ মতো দিন। পরেরদিন স্বাভাবিকভাবে জল দিন৷ 

SACK-CULTIVATION

আরও পড়ুন: পরিত্যক্ত জমিতে করুন অশ্বগন্ধার চাষ, জেনে নিন পদ্ধতি]

৪০ থেকে ৪৫ দিনের মাথায় আপনার সাধের বাগানে কাঙ্খিত ফল ধরেছে। ফলন শুরুর আগে কিংবা পরে, গাছের পাতা কুঁকড়ে গেলে, পোকায় কাটলে ভেজানো লঙ্কা গুঁড়োর জল কিংবা নিম পাতা বেটে তার রস মিহি কাপড়ে ছেঁকে, তার সঙ্গে যেকোনও শ্যাম্পু সামান্য পরিমাণ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। শ্যাম্পু কোনও ক্ষতি করবে না। বরং কীট, পোকার হাত থেকে গাছ রক্ষার জন্য কীটনাশক নষ্ট করতে স্প্রে করা লঙ্কা কিংবা নিমপাতার জল বেশ কিছুদিন গাছের গায়ে লেপটে থাকতে সাহায্য করবে এই শ্যাম্পু। সমস্ত ধরনের সবজি চাষে এই ‘স্যাক কালটিভেশন’ আধুনিক কৃষি বিজ্ঞানে নতুন চমক।

[ আরও পড়ুন: চাষের কাঁচা লঙ্কায় পোকার আক্রমণ? এই উপায়েই পেতে পারেন নিস্তার]

আলমগির হোসেন জানান,“চাষের কাজে নতুন পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া খুঁজে বের করা আমার নেশা। ধান চাষে প্রথমে ড্রাম সিড পদ্ধতি ব্যবহার করি৷ তারপর স্যাক কিংবা বস্তায় চাষ আমার নবতম কৃষি প্রযুক্তির সংযোজন৷ বাড়িতে চারশো বস্তায় চাষ করে আমি সফল৷ অন্যদের এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে অনুরোধ করছি৷ নিশ্চয়ই লাভের মুখ দেখতে পাবেন।” এই কৃষককে রাজ্য সরকারের তরফে ২০১৭ সালে নজরুল মঞ্চে ‘কৃষক সম্মান’, ২০১৮সালে বর্ধমানে মাটি উৎসবে সংবর্ধনা দেওয়া হয়৷ কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কৃষি বিকাশ কেন্দ্র সম্প্রতি নন্দকুমারে আলমগিরকে ‘উদ্ভাবক কৃষক’ সম্মান দিয়েছে।

ALAMGIR
হাজি আলমগির হোসেন, কৃষক

ছবি: রঞ্জন মাইতি

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement