সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের কি রাজনীতির শিকার বাংলার নাট্যমহল? ফের কি বাংলার সংস্কৃতিতে গেরুয়া শিবিরের কোপ? বাংলার নাট্যমঞ্চে এমনই প্রশ্ন উঠল। কেননা, আচমকাই রাজ্যের বেশ কয়েকটি নাট্যদলের অনুদান বন্ধ করল কেন্দ্রীয় সরকার। আর নেপথ্যে দেখানো হয়েছে নানা কারণ। তালিকায় রয়েছে মেঘনাদ ভট্টচার্য, দেবেশ চট্টোপাধ্য়ায়, পৌলমী চট্টোপাধ্যায়ের নাট্যদলও।
তা ঠিক কী হয়েছে?
বহু বছর ধরেই নাটকের প্রচার ও প্রসারের জন্য বিভিন্ন নাট্যদলের পরিচালক ও বাকি সদস্যদের ‘গুরু-শিষ্য পরম্পরা’ নামে অনুদান দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন কারণে এরাজ্যের বেশ কয়েকটি নাট্যদলের অনুদান বন্ধ করা হয়েছে। এর নেপথ্যে নাট্য ব্যক্তিত্বরা রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন।
সংবাদ মাধ্যমকে নাট্যকার মেঘনাদ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ”১৮ বছর ধরে কেন্দ্রের অনুদান পাচ্ছিলাম। কিন্তু এবার তা বন্ধ হল। কেন্দ্রের থেকে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাতে একেক জনকে একেকরকম কারণ দেখানো হয়েছে। কাউকে বলছে, তুমি সবল হয়ে গেছ। কাউকে বলছে সংগঠন করছ, ভাল তুমি নিজেই পারবে। আমার নিজের ধারণা, কেউ একটা তালিকা বানিয়ে দিয়েছে। অবশ্যই, বেছে বেছে করেছে আর কী এবং বেছে বেছে করার মধ্যে, দেখা যাচ্ছে ওই পছন্দ হয়নি এমন দল, হয়তো সে যে দল, তার রাজনীতির সঙ্গে আমার রাজনীতি, ও মনে করছে মিলছে না। এই সব মনে করে সব বেছে বেছে, কিছু দলকে পাঠিয়েছে।”
অনুদান বন্ধ হয়েছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে পৌলমী চট্টোপাধ্যায়ের নাট্যদল ‘মুখোমুখি’রও। পৌলমী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ”আমরা নাকি সেল্ফ রিলায়েন্ট আর সাসস্টেনেবল দল। বাড়ি ভাড়া করে রিহারসাল দিতে হত। আমরা যে ১৫ জনের গ্রান্ট পেতাম, ১৫টা ছেলেকে কিছু দিয়ে চালাতাম। একটা কিছু প্রোভাইড করতে পারতাম। থিয়েটারের তো এমনিতেই টাকা নেই। সেটা এরা যদি হঠাৎ বন্ধ করে দেয়, আমরা তো অথৈ জলে পড়লাম। এটা অত্যন্ত অন্যায় কাজ করল।”
নাট্যকার দেবেশ চট্টোপাধ্য়ায়ের কথায়, ”বিজেপি সরকার মনে করছে, গ্র্যান্ট বন্ধ করে তাঁরা আমাদের বিরোধী স্বর বন্ধ করবে, তাহলে তাঁরা খুব বড় ভুল করছে। ”
তবে অভিনেতা ও বিজেপি সমর্থক রুদ্রনীল ঘোষের কণ্ঠে অবশ্য অন্যসুর। তাঁর কথায়, ”যাঁরা বলছেন, বিজেপির বিরোধিতা করছে বলেই অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে, তাঁদের কথায় সূত্র ধরেই বলছি। এই কেন্দ্রই শিল্পকে বাঁচানোর জন্য, নাটকের প্রচারের জন্যই গ্রান্ট দেয়, আপনারা, নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসের দলকে বড় করে দেখানোর জন্য, যাঁরা গ্রান্ট দিচ্ছে, তাঁদের বিরোধিতা করছেন। তাঁকে শত্রু বলে মনে করা হচ্ছে। ব্য়াপারটা বেশ মজার। একদমই এই কারণ নয়। গোবরডাঙ্গার একটি দল, থিয়েটার হল নির্মানের জন্য গ্রান্ট পেয়েছিল প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা মতো। পরে দেখা গেল, সেই থিয়েটার হলে বিয়ে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। সেই কারণেই অনুদান বন্ধ হচ্ছে। রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, বিভাস চক্রবর্তীর মতো প্রবাদপ্রতীম নাট্যব্যক্তিত্বদের গ্রান্ট তো বন্ধ হচ্ছে না। তাঁরা তো বামপন্থী।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.