রমেন দাস: আমরি বাংলা ভাষা! প্রাচীন থেকে আধুনিক যুগের ভাষা সংস্কৃতিতে বাংলার আধিপত্য থাকলেও অবশেষে ‘ধ্রুপদী’ ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলা। নরেন্দ্র মোদি সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফে বাংলা ভাষাকে এই স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। লড়াই করেছি, এই স্বীকৃতি নিয়ে সওয়াল করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু পুরস্কার এবং স্বীকৃতির দোলাচলে আদৌ কিছু পেল ‘রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র ভাষা? ধ্রুপদী তকমায় কি কিছু আসবে-যাবে নিজের ভাষাকে প্রায় ভুলতে বসা বাঙালির?
বাংলাটা ঠিক আসে না এবং বাংলার ধ্রুপদী তকমার প্রভাব নিয়ে বিতর্কও শুরু হয়েছে বিস্তর। নিজেদের ভাষার নতুন তকমায় মুখ খুলেছেন ভাষাবিদ পবিত্র সরকার। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে তিনি জানান, ”লাফ ঝাঁপ করার কিছুই নেই। নাম হল, গয়না হল, বিশেষণ হল। কিন্তু এটা নিয়ে সরকার কী করবে! সরকার কি এর বিস্তারে সাহায্য করবে? কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার এখন এই ভাষা নিয়ে কী করবে সেটা জানা দরকার। সরকারি কাজে বাংলার ব্যবহার বাড়বে, মেডিক্যাল কলেজের গেটে বাংলায় লেখা থাকবে কি? ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে বাধ্য়তামূলক বাংলা ভাষা শেখানোর ব্যবস্থা করবে? এসব কথা আগে আসা দরকার। আমাদের ছেলেমেয়েদের বাংলা শেখাব কিনা, দলে দলে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পাঠানো হবে কি না! আমরা আমাদের ভাষা নিয়ে কী করব, সেটা সাধারণ মানুষ হিসেবেও ভাবতে হবে, উদাসীন না থেকে। না হলে শুধু তকমা বা সম্মান দিয়ে কিছু হবে না।”
প্রায় একই সুরে সরব হয়েছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালে তিনি বলেন, ”এটা একটা আলঙ্কারিক সম্মান। এ সম্মানের যে খুব একটা তাৎপর্য আছে বলে মনে হয় না। বাংলা ভাষা ধ্রুপদী সম্মান অনেক আগে পেতেই পারত। এই ভাষার লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অন্যান্য বিদ্বজ্জন তো আছেনই। এই স্বীকৃতি অনেক দেরিতেই তাঁরা দিয়েছেন। এই স্বীকৃতিতে ভাষার কিছু আসে যাবে না। ভাষা তার নিজের পথেই চলবে। ভাষা বহমান জিনিস, পালটে যায়। মানুষের মুখে মুখে পালটে যাবে হয়ত। তবুও একটা সম্মান এসেছে এটা ভালো কথা।”
অন্যদিকে বাংলা ভাষার ধ্রুপদী স্বীকৃতি নিয়ে রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন সাহিত্যিক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে তিনি জানান, ”বাংলা ধ্রপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এটা গর্বের কথা। এই স্বীকৃতি অনেক আগে পাওয়া উচিত ছিল। এই দেরির কোনও টেকনিক্যাল দিক আছে বোধহয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগ নিয়েছেন। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়রা সক্রিয় হয়েছেন। প্রমাণ সংগ্রহের ব্যাপারে তাঁরা যত্নশীল ছিলেন বলেই এই স্বীকৃতি এসেছে। পরম্পরা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার উৎসাহ, উদ্দীপনা ভালোভাবে হবে বলে মনেহয়। আমাদের ভাষা যে সেদিনকার ভাষা নয়, এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.