Advertisement
Advertisement
Bangladesh

ওপার বাংলায় আন্দোলনের আগুন, শিল্প সংহতি জানাল এপার বাংলা

গুলি-মৃত্যু-রক্ত-আগুনের নির্মমতার বিরুদ্ধে শিল্পের প্রতিবাদ।

Artists from West Bengal got worried about the present scenario of Bangladesh and their art work goes viral
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:July 19, 2024 8:19 pm
  • Updated:July 20, 2024 9:48 am

বিশ্বদীপ দে: ‘তই মোর ছাওয়াক চাকরি না দিবু না দে, কিন্তু মারলু ক্যানে।’ সন্তানহারা মায়ের বুকফাটা এই আর্তনাদ যেন এখন সর্বত্রগামী। বাংলাদেশের তরুণ পড়ুয়া আবু সইদের মায়ের হাহাকার কাঁটাতারের বেড়া ভেদ করে পৌঁছে গিয়েছে এপারেও। কোটা সংস্কারের দাবিতে অগ্নিগর্ভ ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে (এই লেখা প্রকাশ পর্যন্ত সংখ্যাটা ৩২)। যে সব ভিডিও বা ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে (যার সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল), তা দেখে শিউরে উঠছেন এবঙ্গের মানুষরাও। আর এই পরিস্থিতিতেই গুলি-মৃত্যু-রক্ত-আগুনের নির্মমতার বিরুদ্ধে তৈরি হচ্ছে শিল্প। মরমিয়া অভিঘাতে রঙে-তুলিতে লেখা হচ্ছে প্রতিবাদের ভাষ্য।

তেমনই এক ছবি মহফুজ আলির। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা হলেও এই মুহূর্তে কর্মসূত্রে তিনি সুদূর অস্ট্রেলিয়ায়। এঁকেছেন এক আশ্চর্য ছবি। আবু সইদের দুই হাত ছড়িয়ে রাখা ভঙ্গি, বুলেটের সামনে অনমনীয় ভঙ্গিকে তিনি রঙের স্পর্শে দিয়েছেন নতুন রূপ। যেন বুলেট নয়, শরীরে বৃষ্টি মেখে নিচ্ছেন ওই তরুণ। প্রেক্ষাপটের সবুজ ও লাল, বাংলাদেশের পতাকাকেই মূর্ত করে তুলছে। এমন ছবি আঁকলেন কেন? জবাবে শিল্পী সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে বললেন, ”মনে হচ্ছিল এরকমও তো হতে পারত। এমন এক তরুণ, তাঁর তো বৃষ্টিই প্রাপ্য। সবুজের মধ্যে দাঁড়িয়ে তিনি বৃষ্টির ফোঁটাকে ধারণ করবেন। বুলেট কেন? এই ভাবনাটা থেকেই… আসলে প্রথম থেকেই খবর পাচ্ছিলাম। কিন্তু বিষয়টা এমন জায়গায় পৌঁছে যাবে ভাবতে পারিনি।”

Advertisement

 

[আরও পড়ুন: ‘ফ্যাশন প্যারেড চলছে!’ পোশাকবিধি না মানায় আইনজীবীকে ধমক প্রধান বিচারপতির]

আর এক ছবির শিল্পী জয়ন্ত বিশ্বাস। তাঁর আঁকা ছবিটিও ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। সেখানেও আবু সইদের দুহাত বাড়িয়ে রাখা ভঙ্গি। পাশ থেকে একজন জড়িয়ে রেখেছে তাঁকে। কে সে? প্রতিবেশী? যেভাবে পাশের বাড়ির কারও কিছু হলেও আমরা ছুটে গিয়ে সান্ত্বনা দিই, অবিকল সেই ভঙ্গি। জয়ন্তর ছবির ক্যাপশন ‘ভালো হয়ে ওঠো বাংলাদেশ (Bangladesh)’। এবিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ গলায় শিল্পী জানাচ্ছেন, ”এখানে কী সুন্দর রোদে মেঘে একটা দিন! অথচ মাত্র শদুয়েক কিলোমিটার দূরে মানুষ বাড়ি থেকে বেরতে পারছে না। ইন্টারনেটে যা সব দৃশ্য  চোখে পড়ছে তাতে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এত নেগেটিভের মধ্যে তাই ইচ্ছে হল একটা পজিটিভ কিছু করার। সেখান থেকেই ছবিটা। খুব কাছের কিছু মানুষের কোনও বিপদ হলে যেমন আমরা সান্ত্বনা দিই। কিচ্ছু হবে না। সব ঠিক হয়ে যাবে। সেই ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবি ‘জাদু কি ঝপ্পি’র মতো। সেরকমই। আর এটা আমি সত্য়িই বিশ্বাস করি সব ঠিক হয়ে যাবে। এবং দ্রুত।”

 

[আরও পড়ুন: শুক্রতেও রক্তাক্ত বাংলাদেশ, ঝরল ৩ প্রাণ! ঢাকায় নিষিদ্ধ সভা-সমাবেশ ও মিছিল]

সংবাদ প্রতিদিন.ইন-এ সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বাঁকাদা’ সিরিজেও বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিই উঠে এসেছে। এই আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠা আবু সইদের দুই হাত বাড়িয়ে রাখা ভঙ্গিকেই নিজের মতো করে গড়ে নিয়েছেন তিনি। সেখানে প্রয়াত তরুণের বুকের ভিতরে বাংলাদেশের রক্তস্নাত মানচিত্র ও উপচে পড়া রক্তদাগ তৈরি করছে এক অনন্য অভিঘাত। চরিত্রে বাঁকাদা কার্টুন হলেও এখানে তীর্যকতার চেয়েও গুরুত্ব বেশি পেয়েছে সরাসরি লক্ষ্যভেদী রেখার টান। পাশে দাঁড়ানো নতমুখ বাঁকাদা ছবিটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। কিন্তু ছবি এঁকে কি এক্ষেত্রে কিছু হবে? এই প্রশ্ন তুলছেন শিল্পী নিজেই। তাঁর কথায়, ”এতগুলো প্রাণ চলে গেল, কিছু তো করতে পারব না এতদূরে বসে। তাই ছবি এঁকেই… কিন্তু সত্য়িই কি কিছু হয় এসব করে? জানি না। এটাই হয়তো শিল্পের সীমাবদ্ধতা। গাজার নিধনযজ্ঞ দেখেও এমনটাই মনে হচ্ছিল। একই অসহায়তা। তবে এটুকু বলতে পারি, এই বলিদান বিফলে যাবে না। অতীতেও যায়নি। এবারও যাবে না।”

সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে আর একটি ভিডিও। শিল্পী শুভেন্দু সরকার সাদা পাতায় যে ছবি এঁকেছেন তারই পর্যায়ক্রম ধরা পড়েছে সেই ভিডিওয়। নবারুণ ভট্টাচার্যের ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়’ বেজে ওঠে নেপথ্যে। দেখা যায় ‘বাংলাদেশ’ লেখাটির উপরে রক্তের ফোঁটা। এর পর ‘বাংলাদেশ’-এর অক্ষরগুলি একে একে বদলে যায়। দেখা যায়, বন্দুক, লাঠি হাতে পুলিশ, ট্যাঙ্ক এবং তার সামনে দুহাত ছড়িয়ে রাখা আবু সইদ। তবে তিনি একা নন। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বহু মানুষ। সকলে মিলে একজোট হয়ে রুখে দাঁড়াচ্ছেন। উপরে লেখা ফুটে ওঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্ত হবে নাকো ব্যর্থ’। শুভেন্দু জানাচ্ছেন, ”আসলে মনখারাপ। বাংলাদেশে আমার অনেক চেনাজানা, বন্ধুবান্ধব রয়েছে। সকলের জন্য উদ্বেগ হচ্ছে। আমার এক বান্ধবীর মেয়ে আন্দোলনে আহত হয়েছে। বান্ধবীর উদ্দেশেও পুলিশ টিয়ার সেল ছুড়েছিল। মানসিক ভাবে আমি বাংলাদেশের পড়ুয়াদের পাশে আছি। ওঁদের স্যালুট। তবে এপারে বসে আর কী করতে পারি? তাই রঙে তুলিতে একটু চেষ্টা করা ওঁদের পাশে থাকার।”

একই ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে নবীন গদ্যকার ও শিল্পী সম্বিত বসুর করা একটি ক্যালিগ্রাফি। নবারুণের লাইনটিকে তিনি বদলে নিয়েছেন নিজের মতো করে। ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার বাংলাদেশ না।’ লেখার হরফের রং লাল। প্রেক্ষাপট সবুজ। যা এক লহমায় চিনিয়ে দেয় প্রতিবেশী দেশের পতাকা। সম্বিত বলছেন, ”এখন কেবলই বলা হয় এখনকার প্রজন্ম পচে গিয়েছে। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে এই ঘটনা আমাকে আলোড়িত করেছে। যে কোনও কারণেই হোক, এভাবে এতগুলি তাজা প্রাণের বলিদান মেনে নেওয়া যায় না। অনেকে অবশ্য জানতে চাইছেন ‘আমার বাংলাদেশ’ কেন লিখলাম। আসলে সকলেরই একটা নিজস্ব অনুভব তো থাকে। আমার কাছে যেটা আমার বাংলাদেশ আমি তার কথাই বলতে চেয়েছি এখানে। আসলে স্থানের সীমান্ত থাকে। ভাষার থাকে না।”

করোনার করাল থাবা পেরিয়ে আসতে না আসতেই এই পৃথিবী ইউক্রেন দেখেছে। দেখেছে গাজা। এখন দেখছে বাংলাদেশ। কারণ ও প্রেক্ষিত ভিন্ন। কিন্তু নিপীড়িত মানুষের রক্তক্ষরণ, যন্ত্রণার জলছবি আসলে একই। সেই মৃত্যুমিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে রং-তুলিও হয়ে উঠতে পারে প্রতিবাদের উৎস। সভ্যতার বিপণ্ণতার মাঝখানে সুদিনের স্বপ্ন বুনে দেওয়া সেই নকশি কাঁথাই হয়তো হয়ে উঠতে পারে সাঁজোয়া গাড়ির সামনে দাঁড়ানো প্রতিবাদীর মতোই ঋজু ও দৃঢ়। পৃথিবীর সামনে যা জাগিয়ে রাখবে আগামীর লাইটহাউস। ভরসা দেবে, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement