গৌতম ব্রহ্ম: টিকাকেন্দ্র হয়ে উঠছে পুরোদস্তুর প্রেক্ষাগৃহ, অত্যাধুনিক, ঝাঁ-চকচকে। নতুন বাংলা বছরে কলকাতাবাসীকে (Kolkata) রাজ্য সরকারের উপহার, নতুন সিনেমা হল! তা-ও আবার সরকারি, যেমন আছে নন্দন। নতুন ছবিঘরে নন্দনের মতোই টিকিট কেটে সিনেমা দেখা যাবে।
এসএসকেএম হাসপাতাল লাগোয়া নন্দনের (Nandan) মতো টালিগঞ্জের এম আর বাঙুর হাসপাতালের গা ঘেঁষে এই নতুন সরকারি প্রেক্ষাগৃহের আবির্ভাবে খুশির হাওয়া চলচ্চিত্রের কলাকুশলী মহলে। টলিপাড়া এই প্রথম সরকারি সিনেমা হল পাচ্ছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৬ মে চলচ্চিত্র শতবার্ষিকী ভবনে শুরু হতে চলেছে ১৫২ আসন বিশিষ্ট নতুন হলের জয়যাত্রা।
২৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (International Kolkata Film Festival) শুরু হচ্ছে আগামী ২৬ এপ্রিল। তার অঙ্গ হিসাবে এই হলেও সিনেমা দেখানো হবে। তবে এটাই প্রথম নয়, এর আগেও চলচ্চিত্র উৎসবে ব্যবহার হয়েছে এই হল। কিন্তু বছরের বাকি সময়, কার্যত ফাঁকাই পড়ে থাকে। এবার বছরভর ব্যবহার হবে, বাণিজ্যিক ছবিও বাদ যাবে না। টিকিট কাউন্টার থেকে, প্রোজেক্টর রুম সব প্রস্তুত। এমনটাই জানালেন চলচ্চিত্র শতবর্ষ ভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক। তাঁর বক্তব্য, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল শেষ হলেই বাণিজ্যিকভাবে হলটির ব্যবহার শুরু হবে। ৬ মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে।
কিছুদিন আগে পর্যন্ত অবশ্য সিনেমার কলাকুশলীদের টিকাকেন্দ্র হিসাবেই ব্যবহার হয়েছে এই প্রেক্ষাগৃহ। সেই ভ্যাকসিন সেন্টারই এখন হয়ে যাচ্ছে টালিগঞ্জ টকিজ। নবান্ন সূত্রের খবর, দু’টো, পাঁচটা ও সাতটার শোয়ে এখানে সিনেমা চলবে। বাণিজ্যিক শো তো থাকছেই, সঙ্গে সকাল থেকে দুপুর দু’টো পর্যন্ত সিনেমা প্রিভিউয়ের ব্যবস্থা। মুক্তির আগে সিনেমার পরিচালক প্রযোজকরা এখানে তাঁদের ছবি দেখে নিতে পারবেন। পরিচালকদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, ছবিতে ভুলত্রুটি থাকলে অনেকসময় ছোট মনিটরে বোঝা যায় না। বড় পর্দায় প্রিভিউ সে সমস্যা ঘোচাবে। পাশাপাশি এখানে ফিল্ম-পাঠের শিক্ষানবিশরা বিভিন্ন ছবি দেখতে পারবেন।
চলচ্চিত্র শতবার্ষিকী ভবনে বদলে ফেলা রাধা স্টুডিওতে মূলত সেলুলয়েড নেগেটিভ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। বহু পরিচালকের বহু কালজয়ী সিনেমার নেগেটিভ এখানে সযত্নে রাখা আছে। সংখ্যাটা নেহাত কম নয়, প্রায় দশ হাজার। পুরনো সেলুলয়েড ছবি দেখার জন্যে হলে বসানো হয়েছে ৩৫ মিমি প্রোজেক্টর, থাকছে ডিজিটাল সিনেমা প্রোজেক্টর ও ভিসিডি প্রোজেক্টরও। আসন্ন চলচ্চিত্র উৎসবেও বেশ কিছু সেলুলয়েড ছবি দেখানো হবে চলচ্চিত্র শতবার্ষিকী ভবনে।
মাল্টিপ্লেক্স হোক বা সিঙ্গল স্ক্রিন, হিন্দি ও দক্ষিণী সিনেমার চাপে বাংলা ছবি কোণঠাসা বলে অভিযোগ অনেক দিনের। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে সিনেমা-অডিটও শুরু করেছে নবান্ন। ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ মাস পর্যন্ত কোন হলে কত বাংলা সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছে, তা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে জানাতে হবে মাল্টিপ্লেক্স ও সিঙ্গল স্ক্রিনের মালিকদের। বহু মহলের আক্ষেপ, হিন্দি- ইংরেজির দাপটে অনেক সময় বাংলা ছবি হল পায় না, কারণ হিন্দি ও ইংরেজি সিনেমা থেকে লাভ বেশি। এখন সেই তালিকায় ঢুকে পড়েছে দক্ষিণী ছবিও। তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন বাড়ছিল বাংলা ছবির। নতুন হলের বাণিজ্যিক ব্যবহার সেই পদক্ষেপেরই প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.