ভারচুয়াল দুনিয়ায় যেন আমরা সকলেই নগ্ন৷ বিশ্বায়ন উত্তর সময়ের নিয়ন আলো আমাদের ব্যক্তিগত যা কিছু পণ্য করে তুলেছিল৷ ভারচুয়াল মিডিয়া যেন আরও একধাপ এগিয়েছে৷ বিদ্রূপ-অপমানের শাণিত তির ছুটে যায় যে কোনও দিকে৷ কোথাকার তরবারি যে কোথায় রাখা থাকে তার ঠিক নেই৷ সোশ্যাল মিডিয়ার সাম্প্রতিক ইস্যুগুলিকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবে শর্টফিল্ম ‘নেকেড’৷ যেখানে মুখ্য চরিত্রে দেখা যাবে কালকি কোয়েচলিন ও ঋতাভরী চক্রবর্তীকে৷ আন্তর্জাতিক নারী দিবসেই মুক্তি পাবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুকের এই উদ্যোগ৷ ঠিক তার আগে সংবাদ প্রতিদিন-এর কাছে ছবির প্রসঙ্গে মুখ খুললেন ঋতাভরী৷ শুনলেন সরোজ দরবার৷
সোশ্যাল মিডিয়ার সামনে আমরা সবাই নগ্ন৷ এ ছবির বার্তা এরকমই৷ তুমি নিজেও সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ৷ কখনও তোমার নিজের এরকম মনে হয়েছে?
ঋতাভরী: আমার মনে হয় সোশ্যাল মিডিয়ার ভাল, খারাপ দু’টো দিকই আছে৷ এখন এর দৌলতে খুব কম সময়ে আমরা অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পারছি৷ এই তো এখন আমার মা বাইরে আছে৷ কিন্তু কোনও একটা কথা জানাতে কষ্ট করতে হচ্ছে না৷ সোশ্যাল মিডিয়ার এই শক্তিটা আছে৷ আমাদের প্রধানমন্ত্রীও সে কারণে এই মাধ্যমটাকে ব্যবহার করেন৷ কিন্তু এর একটা অন্য দিকও আছে৷ মুখোমুখি কথা বলা বা আলোচনা-তর্কের মধ্যে যে সফিস্টিকেশনটা থাকে, সেটা এখানে অনেকসময়ই থাকছে না৷ কেননা এখানে কেউ একা একা কমপিউটরের সামনে বসে কী করছেন, তার কেউ সাক্ষী থাকছে না৷ ধরো, একটা রাস্তায় কোনও মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে৷ জনবহুল রাস্তায় তার দিকে অনেকেই তাকাবে৷ ধরো মেয়েটির পোশাকের কারণেই তার দিকে তাকাচ্ছে৷ কিন্তু কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না৷ এটাই যদি তুলনামূলক নির্জন রাস্তা হয় তাহলে কেউ হয়তো হ্যারাস করতে এগিয়ে আসবে৷ এই মানসিকতাটা সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখা দিচ্ছে৷ অনেকেই ভাবেন, কিছু একটা লিখে দিলেই হল৷ কিন্তু সাইবার ক্রাইমও যে কোনও একজন মহিলাকে অসম্মান করার মতোই সমান অপরাধ সেটা ভাবেন না৷ আর সেলেব হলে তো আর কথাই নেই৷ তাঁরা তো এমনিই ধরাছোঁয়ার বাইরে৷ সুতরাং যা ইচ্ছে তাই বলার প্রবণতাটা আরও বাড়ে৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমি এখন যতটা অ্যাকটিভ, আগে ততটা ছিলাম না৷ কিন্তু এই অনুভূতি বরাবরই হয়েছে৷
ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করে বহু অভিনেত্রীকে বডি শেমিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে৷ তুমি নিজে কখনও এরকম পরিস্থিতির মুখে পড়েছ?
ঋতাভরী: অনেকবার ফেস করেছি৷ একটা সংবাদপত্রের হয়ে একবার আমি বিকিনি ফটোশুট করেছিলাম৷ সে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসামাত্রই নানা খারাপ মন্তব্য আসতে শুরু করে৷ দেখো, আমার পোশাক কারও ভাল নাই-ই লাগতে পারে৷ কিন্তু সেটা তো ভদ্রভাষাতেও বলা যায়৷ কনস্ট্রাকটিভ ক্রিটিসিজম বলেও তো একটা কথা আছে৷ কিন্তু ওই সময় দেখেছি লোকে স্রেফ অশ্লীল মন্তব্য করেই চলে যেত, কোনও আলোচনার বালাই নেই৷ এর পাশাপাশি আর একটা কথাও বলব৷ শুধু এরাই যে সোশ্যাল মিডিয়ায় আছে এমনটা নয়৷ লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই সময় ওই ফটোশুটের প্রশংসাও করেছিল৷
তোমার কি মনে হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া কোথাও আমাদের প্রিটেনশনের মুখোশগুলো খুলে দিচ্ছে?
ঋতাভরী: হ্যাঁ তা তো বটেই৷ তবে আমি সব থেকে অবাক হই মহিলাদের কমেন্ট দেখে৷ ওই ঘটনার সময়ই দেখেছি, মহিলারা যেভাবে ও যে ভাষায় মন্তব্য করেছে তা ভাবানোর মতো৷ কাজ নিয়ে সমালোচনা হতেই পারে৷ কিন্তু স্রেফ পোশাক নিয়ে যখন কটূ মন্তব্য আসতে থাকে, তখন মনে হয় কোথাও একটা মুখোশ খুলে যাচ্ছেই৷
এ ছবিতে তুমি একজন সাংবাদিকের চরিত্রে, যে একজন অভিনেত্রীর সাক্ষাৎকার নেবে৷ তুমি নিজে কখনও সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিড়ম্বনায় পড়েছ?
ঋতাভরী: অনেকবার পড়েছি৷ বিকিনি ফটোশুটের পর আমাকে এক সাংবাদিক তা নিয়ে নানাকথা জিজ্ঞেস করেছিলেন৷ সবটা যে তাঁর প্রশ্ন তা নয়৷ চারিদিকের যা প্রশ্ন ভাসছিল, সেগুলোই তিনি করেছেন বলে জানিয়েছিলেন৷ আমি সাংবাদিকদের কোনও দোষারোপ করছি না৷ কিছুদিন আগে দীপিকা পাড়ুকোনও এই দিকটা তুলে ধরেছিলেন৷ যে, শুধু পোশাক-আশাক এসবের দিকেই ফোকাসটা কেন থাকবে? একজন শিল্পীর অবদান, ছোট শহর থেকে উঠে এসে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছানো, অনেক মেয়ের কাছে ইনস্পিরেশন হয়ে ওঠা-এসবের দিকে কেন জোরটা থাকবে না, এটা আমারও প্রশ্ন৷
কালকির সঙ্গে এই প্রথমবার কাজ করলে৷ কেমন অভিজ্ঞতা?
ঋতাভরী: ওঁর মতো অভিনেত্রী তো হয় না৷ তেমনই ভাল মানুষ৷ এই শর্ট ফিল্মটার জন্যও ওঁকে যে হারে খাটতে দেখলাম তা ভোলার নয়৷ সারাদিন কাজের শেষে এই ছবিটা নিয়ে আমার সঙ্গে রিহার্সালে বসতেন৷ টানা এক সপ্তাহ ধরে রিহার্সাল চলেছিল৷ কোথাও যেন অভিনয়টা অভিনয় বলে মনে না হয়, যেন বাস্তব বলেই মনে হয় সেদিকটায় খুব নজর দিয়েছিল৷ অতবড় অভিনেত্রী, কিন্তু একেবারে পরীক্ষার আগের রাতে যেরকম টেনশন থাকে, সেরকম করেন৷ নিঃসন্দেহে এটা শেখার৷
সোশ্যাল মিডিয়ার আকছার ঘটছে বডি শেমিংয়ের ঘটনা৷ ঠিক সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়া নিয়েই একটা সিনেমা আসছে৷ কিছু বদলাবে বলে মনে হয়?
ঋতাভরী: আসলে কোথাও কিছু বদলায় না৷ এই যে সরকার পাল্টায়, তাতে আমাদের আর কী বদলায়! সেই পয়লা বোশেখ থেকে ক্রিস্টমাস-একই নিয়মে মেতে থাকি সবাই৷ এ ছবিতেও কিছু বদলাবে এমনটা নয়৷ তবে আমি চাইছি বিতর্কটা হোক৷ সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ধর্ষণ, নারীনিগ্রহের মতো নানা ইস্যু আছে এখানে৷ আর ফেসবুক ইন্ডিয়ার সঙ্গে এটা যৌথ প্রজেক্ট৷ আমি যখন ওদের হেড অফিসে গিয়েছিলাম, তখনই এ ছবির পরিকল্পনা হয়৷ ভারচুয়াল দুনিয়ার যে যে বিষয়গুলো এখন মানুষকে ভাবাচ্ছে, সেগুলোই তুলে ধরার কথা হয় সুতরাং এটা বহু মানুষের কাছে, নানা বয়সের মানুষের কাছে পৌঁছবে৷ ভাবনাগুলোয় নাড়া দেবে৷ এখন কতটা ঝড় ওঠে, তারই অপেক্ষায়৷
নেকেড
পরিচালনা- রাকেশ কুমার
অভিনয়- কালকি কোয়েচলিন, ঋতাভরী চক্রবর্তী
ডিজিটাল মিডিয়া পার্টনার- ক্লেরাস মিডিয়া
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.