Advertisement
Advertisement
Ustad Rashid Khan

উত্তরপ্রদেশে জন্ম হলেও আদ্যোপান্ত ‘বাঙালি’ ছিলেন রাশিদ খান

'আমি যেখানে যাই বাংলার শিল্পী হিসেবে যাই', বলেছিলেন রাশিদ।

Uttar Pradesh Born Ustad Rashid Khan Emotional Belongings WB | Sangbad Pratidin
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:January 9, 2024 4:34 pm
  • Updated:January 9, 2024 10:36 pm  

কিশোর ঘোষ: বছর খানেক আগের কথা। প্রকাশ্যে এসেছে পদ্ম পুরস্কারের তালিকা। নাম রয়েছে উস্তাদ রাশিদ খানের। তবু হালকা মন খারাপ রামপুর-সহসওয়ান ঘরানার জগতখ্যাত এই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পীর। কেন? যেহেতু বাংলার নয়, পুরস্কারের তালিকায় উত্তরপ্রদেশের শিল্পী হিসেবে তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছিল। এই বিষয়ে একটি সংবাদমাধ্যমকে রাশিদ বলেছিলেন, ‘উত্তরপ্রদেশ দেশের বাইরে নয়। এই সম্মান দেশের সম্মান।’ যদিও এর পরেই তাঁর সংযোজন ছিল- ‘বছরের পর বছর আমি বাংলায় আছি। এটাই আমার কর্মস্থল। এখান থেকেই আমি সবকিছু করেছি। আমি যেখানেই যাই সেখানে বাংলার শিল্পী হিসেবে যাই। এই সম্মান পেয়েছি। তাতে আমি খুশি। তবে এই সম্মান যদি বাংলার শিল্পী হিসেবে দেওয়া হত, তাহলে আরও ভালো লাগত।’ অতএব, বলাই যায়, সেদিন ভারত সরকার কর্তৃক তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ পেয়েছিলেন ‘বাংলার গর্ব’ রাশিদ খান। ৯ জানুয়ারি, ২০২৪ যে তারা খসার দিন! 

হতে পারে উত্তরপ্রদেশে বদায়ুঁতে জন্ম শিল্পীর। ঘরানা ছিল রামপুর-সাসওয়ান। যে ঘরানার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাশিদেরই পূর্বজ ইনায়েত হুসেন খাঁ-সাহিব। রাশিদ তালিম নিয়েছেন এই ঘরানারই আর এক দিকপাল উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ-সাহিবের কাছ থেকে। যিনি ছিলেন আবার রাশিদের দাদু। রাশিদের মামা গোয়ালিয়র ঘরানার উস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খাঁ-সাহেবের থেকেও তালিম পেয়েছেন রাশিদ। পরবর্তীকালে তরুণ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে ভারত জোড়া নাম। তাঁর জাদুকণ্ঠের ছোঁয়া পায় বলিউডের সিনেমার গানও। তথাপি তিনি বাংলার। বাঙালিরই উস্তাদ গর্ব। কেন? কীভাবে?

Advertisement

 

[আরও পড়ুন: তেইশে খুলল কপাল! খান-কাপুরদের সাম্রাজ্যে দাপুটে দেওলরা, বক্স অফিসে ববি-সানির ম্যাজিক]

ছোটবেলায় যার গানে বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না, সেই ছেলেই ১১ বছর বয়সে প্রথম সঙ্গীতানুষ্ঠান করেন। ভোরের সূর্য বলে দিয়েছিল দিনটা কেমন যাবে। কয়েক বছর পরে যুবক রাশিদ খানকে বিরাট ‘সার্টিফিকেট’ দিয়েছিলেন পণ্ডিত ভীমসেন যোশী। গান শুনে মন্তব্য করেন-  “ভারতীয় কণ্ঠ সঙ্গীতের ভবিষ্যত উজ্জ্বল।” উল্লেখ্য, যে দুই শিল্পীর ওস্তাদি গায়ন অনুপ্রাণিত করেছিল রাশিদ খানের সঙ্গীত জীবনকে, তাঁদের অন্যতম ভীমসেন যোশী। দ্বিতীয় মানুষটির সঙ্গে আবার বাংলার গভীর যোগ, তিনি উস্তাদ আমির খান।শহর কলকাতা ছিল যাঁর সাধনস্থল। 

রাশিদও একটা সময়ে বাংলার মানুষ হয়ে যান! চলতি শতাব্দীর প্রথম দশক থেকেই রামপুর-সাসওয়ান ঘরানার শিল্পী ভারতীয় রাগ সঙ্গীতের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন। উত্তরপ্রদেশে থেকে বাংলা, দেশে থেকে দুনিয়া… বিভিন্ন প্রান্তে সঙ্গীত ভক্তরা মুগ্ধ হন রাশিদ খানের ‘পুরুষালি’ ভরাট কণ্ঠের। বিলম্বিত খেয়ালে বিশেষভাবে পারদর্শী ছিলেন এই শিল্পী। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের গায়ক হলেও রাশিদ ছিলেন আশ্চর্য ব্যতিক্রম, ধ্রুপদী সঙ্গীতের ‘শিক্ষিত’ শ্রোতাদের বাইরেও বেড়ে ওঠে তাঁর ভক্তকুল। নেপথ্যে ‘আওগে যব তুম সাজনা’-র মতো একাধিক হিন্দি ও বাংলা গান। তেমনই এক ম্যাজিক! কী সেই ম্যাজিক?

 

[আরও পড়ুন: ‘সালার’-এ দাপুটে কামব্যাক প্রভাসের, হার মানল শাহরুখের ‘ডাঙ্কি’ও, ‘আদিপুরুষ’ বিতর্কের বদলা?]

মুগ্ধ শ্রোতারা বলেন, যে কোনও গান, সে মার্গ সঙ্গীত হোক কিংবা ‘লাইট মিউজিক’, রাশিদ তাতে বাড়তি ‘প্রাণ’ সংযোজন করতে পারতেন। যা রাগ-রাগিনীকে ছাপিয়ে বুকে এসে বাজত! প্লে-ব্যাক সিঙ্গিংয়ে যেমন কাণ্ড করেছিলেন কিশোর কুমার। শিল্পীরা যাকে বলেন মা সরস্বতীর আশীর্বাদ। ফলে মুসলমান রাশিদ খান যখন ভৈরভ রাগিনীতে ভগবান শিবের প্রার্থনা গান ধরেন, কবীরের দোঁহা কিংবা গুরবাণীতে কণ্ঠ দান করেন, তখন এক আশ্চর্য ঐশ্বরিক ভূবন গড়ে ওঠে। যে অনুভব শ্রোতাকে সব ধরনের ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে পৌঁছে দেয়। এমনকী তুচ্ছ হয়ে যায় শিল্পী। বড় হয়ে ওঠে দেশ, ইমন, বাগেশ্রী, ভৈরবীর মতো রাগ-রাগিনী। এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত। 

ফলে উত্তরপ্রদেশের সম্ভ্রান্ত সাঙ্গীতিক পরিবার জন্ম হলেও রাশিদ খান আসলে ছিলেন বাঙালি। এই দাবি করতেই পারেন বাংলার মানুষ। কারণ রাগ সঙ্গীতের আশ্চর্য আলোকিত গায়নে রবীন্দ্রনাথের গানকেও নতুন মাত্রা দিয়ে গিয়েছেন তিনি। অন্যতম উদাহরণ হয়ে থাকবে নচিকেতা চক্রবর্তীর সঙ্গে যৌথ অ্যালবাম ‘যাত্রা’। যেখানে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় বন্দিশের আশ্চর্য মেলবন্ধন ঘটেছিল। রাশিদ গেয়েছিলেন- “রাখো রাখো রে জীবনে জীবনবল্লভে/ প্রাণমনে ধরি রাখো নিবিড় আনন্দবন্ধনে।” এত জীবন, এত প্রাণ যাঁর ভিতরে সেই মানুষটার ৫৫ বছর বয়সে প্রয়ান মেনে নিতে পারছে না বাঙালি। আরেকটা কথা, জন্ম উত্তরপ্রদেশে হলেও এক শীতকালীন বিকেলে বাংলার আকাশে বাতাসেই বিলীন হলেন ভারতীয় রাগ সঙ্গীতের অন্যতম প্রতিভা রাশিদ খান! এই নিয়তির কথাও ভুলবে না বাঙালি।

 

[আরও পড়ুন: ফিরে দেখা ২০২৩: ‘জওয়ান’, ‘অ্যানিম্যাল’দের ভিড়ে এই সিনেমা-সিরিজ মিস করবেন না]

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement