Advertisement
Advertisement

Breaking News

চাঁদনি এসেও এল না তাঁর জীবনে…

প্রিয়তমা নারীর প্রয়াণে এ কথাই কি লিখলেন মিঠুন!

Untold Love story of Mithun chakrabarty and Sridevi
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:February 26, 2018 8:22 pm
  • Updated:February 26, 2018 9:10 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তুমি কোন ভাঙনের পথে এলে!

প্রাসাদোপম বাংলোয় বসে এ পংক্তিই কি একবার গুনগুন করে উঠলেন মানুষটা? হয়তোবা। হয়তো নয়। আসলে গোপন রক্তক্ষরণের তো কোনও বিজ্ঞাপন হয় না। হু-হু শূন্যতার এপিটাফ লেখে না কেউ। শুধু ভরা বসন্তে কে যেন বলে যায়, সে চলে গেল বলে গেল না!

Advertisement

সে ঢেউয়ের মতো ভেসে গেছে। চাঁদের হাসির দেশে গেছে। সে তো চাঁদের দেশেরই মেয়ে। চাঁদনি। আজ একা একা বসে হয়তো ভাবছেন মানুষটা। ভাবছেন, সেই উথালপাথালকে। খড়কুটোর মতো একদিন যা ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল জীবনকে। আর ঢেউ উঠেছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে। অথচ বুকের যে পাড় ভেঙেছে, আজও সে ভাঙন যেন টের পান তিনি। টের পান বসন্তের বাতাসে মিশে থাকে আজও তার গায়ের গন্ধ। এই ফার্মহাউসেই তো একদিন আছড়ে পড়েছিল সে ঢেউ। প্রেমিকার পছন্দমতোই পুরুষটি সাজিয়ে তুলেছিল বাংলোর প্রতিটি কোণা। উহুঁ, একটু ভুল হল। আসলে ঢেউ তো লেগেছিল হৃদয়ে।

 কাটল ধোঁয়াশা, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু শ্রীদেবীর ]

8_052017115246

[  শ্রীদেবীর মৃত্যু ঘিরে উঠছে নানা প্রশ্ন, সে রাতে হোটেলে ঠিক কী ঘটেছিল? ]

কোন সাল সেটা? ১৯৮৪ বোধহয়। জাগ উঠা ইনসান-এর সেটে দু’জনে দেখা হল। ততদিনে ‘সদমা’ হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ থেকে আসা এক চাঁদমুখের আলো ততদিনে ক্রমে পৌঁচ্ছে যাচ্ছে প্রসারিত এক বিরাট ভারতবর্ষে। কতকিছু নেই সে ভারতে। ঘরে ঘরে লোডশেডিং। দারিদ্রের অসুখ। তখনও প্রেমের অব্যক্ত যন্ত্রণায় বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। তখনও চিঠির নীলচে খামে গন্ধ ছড়িয়ে লেগে থাকে মেদুর স্বপ্নেরা। এই এতকিছুর মধ্যে ওই মুখের আলোটুকু যেন বহুজনহিতায়। যেন এক শান্তির উপবন। একান্ত আশ্রয়। অন্ধকার ঘুপচি হলে হলে সুখস্বপ্নের রেশ ফেরি করছে সে মেয়ে। এক পরিণত যুবতীর বালিকার মতো উচ্ছ্বল হাসি, কাঁধ ঝাঁকানো ভঙ্গির কাছে ক্রমে নতজানু হচ্ছে পৌরুষের সাম্রাজ্য। তখনও চাঁদনি হয়ে ওঠেনি সে মেয়ে। তখনও হয়ে ওঠেননি পুরুষ হৃদয়ের অনিবার্য সম্রাজ্ঞী। কিন্তু ভিত গড়ার কাজটা শুরু হয়েছিল। ঠিক এমন সময়ই দেখা হল। সেইকি প্রথম দেখা! নাও হতে পারে। দেখা হয়তো আগেই হয়েছিল। তবু এমন করে দেখা তো আগে হয়নি। তার দিকে। নিজের দিকেও। এমন করে আগে কখনও মনে হয়নি, চিত্ত পিপাসিত রে…। সে ছবির গল্পে এক হরিজন যুবকের ভূমিকায় এই পুরুষটি। এক ব্রাহ্মণ মেয়ের প্রেমে পড়বে সে। সেও এক জাতিগত জয়ের গল্প। জেগে ওঠা ইনসানের গল্প। গল্প ছাড়িয়ে পুরুষটির ভিতরেও সেদিন জেগে উঠল আর এক পুরুষ। যে শুধুই পুরুষ। কারও স্বামী নয়। কারও পিতা নয়। কোনও বিবাহের বন্ধন যে পুরুষকে বেঁধে রাখে না। সে প্রেমিকপুরুষ শুধু কামনা করে তাঁর প্রিয়তমাকে। কোনও এক পূর্ণিমা রাতে কি হাতে হাত রেখে হেঁটে গিয়েছিলেন সে পুরুষ আর তাঁর নারীটি? সে এক মহালগন। যে লগনে ভাঙন আসে। যে লগনে চাঁদের টানে ফুলে ওঠে হৃদয়ের একূল-ওকূল, দু-কূল ভেসে যায় সজনী। কিন্তু সে কথা বুঝিয়ে বলবেন কাকে? সমাজ! সংসার! এ এক অনন্ত টানাপোড়েন। পুরুষটি তো সেদিনই জানতেন, যন্ত্রণার কোনও চিত্রনাট্য থাকে না।

[  স্পিলবার্গের লোভনীয় অফারেও হলিউডে পা রাখেননি শ্রীদেবী ]

guru12

স্বেচ্ছা নির্বাসনে আচমকাই খবর পেয়েছেন যে, চলে গিয়েছেন তাঁর প্রিয়তমা নারীটি। স্মৃতির টুকরোরা আজ ক্ষণে ক্ষণে মনের বারান্দায় ছড়িয়ে পড়ছে। আর একান্তে সমস্ত আলো-প্রচার থেকে দূরে তিনি টেনে নিচ্ছেন একটি সাদা পাতা। কিছু লেখার কথা ছিল। যে কথা বারবার তিনি লিখতে চেয়েছিলেন। পারেননি। আজ আর না লেখার কী আছে! কতবার কতজনে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছে, এখনও মনে মনে ভালবাসেন সেই চাঁদনিকে? পেশাদার সাংবাদিকরা পরিচয়ের অছিলায় বের করে আনতে চেয়েছেন স্কুপ নিউজ। মনে মনে হেসেছেন তিনি। তাঁর তো গোপন করার ছিল না কিছুই। কোনওদিন তো গোপন করেননি কিছু। বিয়ে যে হয়েছিল তা তো অনেকেই জানেন। এক তোলপাড় মুহূর্তে সব বাঁধন ছিন্ন করে প্রিয়তমা নারীটির সঙ্গেই বাঁধা পড়েছিলেন। তুলেছিলেন তাঁর জন্য সাজানো ঘরে। কিন্তু মেয়েটির স্বপ্ন ছিল একটা ঘর। যে ঘরে তাঁর পুরুষটির দ্বিতীয় কোনও দাবিদার নেই। অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। আর এক দাপুটে নায়িকার রেখাপাত ছিল তাঁদের সম্পর্কে। কতবার সব মিটমাট করে দিয়েছেন সেই নায়িকা। তাঁর নিজেরও তো হৃদয় ভেঙেছে ইন্ডাস্ট্রির আর এক বিরাট মানুষকে ভালবেসে। ভাঙনের যন্ত্রণালিপি তো তাঁর অজানা নয়। সে রেখাপাতে কতবার সব চুকেবুকে গিয়েও এগিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু শেষমেশ বিপুল হয়ে উঠল মেয়েটির নিজের ঘরের স্বপ্ন। আর ক্রমে চুঁইয়ে পড়া রক্তক্ষরণ মেনে নিয়ে পিছু হটতে থাকলেন প্রেমিক পুরুষটি। বেরিয়ে এল চিরকালের এক সংসারি মানুষ। জীবনের সে কি ছলনা! কী নিষ্ঠুর খেলা! প্রিয়তমা নারীটি চায় প্রেমিক পুরুষটি তাঁর একারই হোক। আর পুরুষটির স্ত্রী চান, যদি দ্বিতীয় নারীর কাছেই তিনি যান, তবে আত্মহননের পথ বেছে নেবেন তিনি। সেই টানাপোড়েনের ভিতর, সেই অন্যায় আর অবিচারের দ্বন্দ্বে মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় মিলেছিল পুরুষটির। পারেননি সব ছেড়ে তাঁর নিজস্ব নারীটির কাছে চলে যেতে। যাঁর কাছে হৃদয় সমর্পণ করেছিলেন, তাঁর কাছে সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-কর্তব্য সমর্পণ করতে পারেননি। ফলে সেই চাঁদমুখে নেমে এল কালো মেঘ। এলো জল। ভাঙল কয়েকটা কাচের গেলাস। শুধুই গেলাস? দুটো হৃদয়ও কি ভাঙল না!

[  জীবনের বসন্তকে মুঠোবন্দি রেখেই চাঁদপরির দেশে ‘চাঁদনি’ ]

10_052017115246

এখন সেসব কথা জিজ্ঞেস করলেও তিনি বিচলিত হন না। শুধু পরে নারীটির বিয়ের খবর পেয়ে ভেবেছিলেন, এও সত্যি! এমনটাও হতে পারে! যে পুরুষটিকে স্বামী হিসেবে বরণ করেছেন তাঁর নারীটি, তাঁর সঙ্গে পুরুষটিরও সখ্য দীর্ঘদিনের। এমনকী তাঁকে ভাই বলেই ডাকতেন প্রিয়তমা নারীটি। হাতে রাখিও বেঁধেছিলেন। তাও কত কী যে জীবনে হতে পারে! তার ইয়ত্তা নেই। যেমন এই আচমকা বিচ্ছেদ সংবাদ। যে বিচ্ছেদে জীবনের দুটি পথ দু’দিকে বেঁকে গিয়েছিল, তা মেনে নিয়েই তিনি ছিলেন। মোটে চারটে সিনেমা একসঙ্গে করেছেন। আর দেখেছেন কী অবলীলায়, কী দাপটে পুরুষ হদয় শাসন করেছেন তাঁর নারীটি। হৃদয় তো শাসন করেছে তাঁরও। এই এতদিনের বিচ্ছেদ, এই এত কষ্টের ভিতরও, এত ব্যস্ততা, এত ভরা সংসারের মধ্যেও প্রতিদিন কি একবার তাঁর কথা মনে পড়েনি? চলে যাওয়ার আগে একবার কি তবে পুরুষটির কথাও মনে পড়েছিল তাঁর? বাথরুমে অচৈতন্য হয়ে পড়ে যাওয়ার আগের মুহূর্তে, চিরঘুমের আবেশ যখন নেমে আসছে দু-চোখে, প্রচণ্ড যন্ত্রণায় যখন বুক চেপে ধরছেন তিনি, তখন কি একবার…। হয়তো তা সম্ভব নয়। সম্ভব হতে পারে না, সত্যি শুধু এই যে, বসন্তের বাতাসটুকুর মতোই তাঁর প্রাণের পরে চলে গেছে সে।

Guru9

আজ অন্তত তাঁকে বলে ফেলা দরকার কিছু কথা। যে কথা হয়নি বলা। যে কথা আর কক্ষণও বলা হবেও না। টেনে নেওয়া কাগজটির উপর আলতো করে পুরুষটি লিখলেন, আমার ভাঙল যা, তা ধন্য হল…।

কার যেন চরণপাতের অপেক্ষা করছেন তিনি। নাকি সবটাই বিভ্রম। তবু সব কি আর মরীচিকা হয়! এ আখ্যানে সব চরিত্রই তাই কাল্পনিক নয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement