সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার জিতে নিয়েছে 'টুয়েনটি ডেজ ইন মারিওপোল'।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুবছর পেরিয়েও জারি রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। হানাহানি, মৃত্যুমিছিল সব কিছুই অব্যাহত। এবার অস্কারের মঞ্চেও ফুটে উঠল রক্তক্ষয়ী এই লড়াইয়ের নির্মম প্রতিচ্ছবি। সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার জিতে নিল ‘টুয়েনটি ডেজ ইন মারিওপোল’। রাশিয়ার সামরিক অভিযানে কার্যত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল ইউক্রেনের এই শহরটি। চারদিকে শুধু লাশের পাহাড়। ধবংসের উদাহরণ। সেই চিত্রই নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই ডকুমেন্টরিতে। পাশাপাশি এই তথ্যচিত্রের হাত ধরেই প্রথম অ্যাকাডেমিক অ্যাওয়ার্ড এল ইউক্রেনের চলচ্চিত্র জগতে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই তথ্যচিত্রের পরিচালক হলেন মস্তিসলাভ চেরনভ।। পেশায় তিনি একজন সাংবাদিক। ২০২২ সালে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করেছিল রুশ ফৌজ। রাশিয়ার মারে বিধ্বস্ত হয়ে যায় ইউক্রেনের দক্ষিণের বন্দর শহর মারিওপোল। সেসময় শহরটির করুণ পরিস্থিতি লেন্সবন্দি করেছিলেন চেরনভ। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি তৈরি করেন ‘টুয়েনটি ডেজ ইন মারিওপোল’। ২০২৩ সালে সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়। তার পরই গোটা বিশ্বজুড়ে জয়গান শুরু হয় তথ্যচিত্রটির। বাফটা এবং আমেরিকার ডিরেক্টরস গিল্ড থেকেও সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার পায় এটি। অস্কারের মঞ্চেও অন্যান্যদের জোড় টক্কর দিয়েছে ইউক্রেনের এই ডকুমেন্টরিটি। ছিনিয়ে নিয়েছে সেরার পুরস্কার।
ইউক্রেনের প্রথম পরিচালক হিসাবে অস্কার জিতে একদিকে যেমন উচ্ছ্বসিত চেরনভ অন্যদিকে হতাশার সুরও শোনা গিয়েছে তাঁর গলায়। পুরস্কার হাতে নিয়ে মঞ্চে দাঁড়িয়ে চেরনভ বলেন, “আমি সম্মানিত বোধ করছি। কিন্তু এই ছবিটি যদি কোনওদিন আমাকে তৈরি করতে না হত তাহলেই ভালো হত। আমার আফসোস এর বিনিময়ে যদি রাশিয়া কোনওদিন ইউক্রেন আক্রমণ না করত, আমাদের শহরগুলোতে অভিযান না চালাত, আমার ১০ হাজার ইউক্রেনীয়দের খুন না করত তার থেকে ভালো আর কিছু হত না। পণবন্দিদের মুক্তি ও সেদেশের জেলে আমাদের যাঁরা বন্দি রয়েছেন তাঁদের বিনিময় আমি এই সম্মান রাশিয়াকে দিয়ে দিতে পারি।”
ইউক্রেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চেরনভ বলেন, “আমি ইতিহাস বদলাতে পারব না। অতীতকেও পরিবর্তন করতে পারব না। কিন্তু আমরা সকলে একসঙ্গে রয়েছি। আমরা নিশ্চিত করতে পারি এই ঘটনা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। সত্যের জয় হবেই। মারিওপোলের যে মানুষরা তাঁদের জীবন দিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। কারণ সিনেমাই স্মৃতি তৈরি করে আর স্মৃতি তৈরি করে ইতিহাস। ধন্যবাদ ইউক্রেন।”
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে রাশিয়া। কিয়েভ, খারকভ, ওডেসা, মারিওপোল, ইরপিন-সহ শহরে ভয়াবহ হামলা চালায় রুশ বাহিনী। মারিওপোলে যুদ্ধ নেমেছিল ইউক্রেনের ৩৬তম মেরিন ব্রিগেড। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অভিযোগ ছিল, এই শহরে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে রাশিয়া। এত মানুষকে মারার পরেও আক্রমণ থামানো হয়নি। ৩৬তম মেরিন ব্রিগেডের বিরুদ্ধে পালটা অভিযোগ ছিল মস্কোরও। তাদের দাবি , এই ফৌজ নাৎসিবাদে বিশ্বাসী। এইভাবেই আক্রমণ পালটা আক্রমণে দুবছর পার করে ফেলেছে এই লড়াই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.