ফাইল ছবি
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লোকসভায় ভাল ফলের পরে ভিড় বেড়েছিল মুরলীধর লেনে। বিভিন্ন পেশার মানুষরা বিজেপিতে নাম লেখানোর জন্য পৌঁছে গিয়েছিলেন সেখানে। হাজির হয়েছিলেন টলিউড ইন্ড্রাস্টির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষরাও। উদ্দেশ্য ছিল রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী ও তাঁর ভাইযের হাত থেকে ক্ষমতার ব্যাটনটা নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া! টলিপাড়ায় গেরুয়া ঝাণ্ডা উড়িয়ে তার অচলাবস্থা কাটানো। কিন্তু, মহৎ সেই উদ্দেশ্য পূরণের আগেই হল ইন্দ্রপতন! দুই ভাইকে রুখতে গিয়ে একই দলের ছত্রছায়ায় তৈরি হল দুটি ভিন্ন সংগঠন! একটির মাথায় বসলেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওযা শঙ্কুদেব পন্ডা আর অন্যটির দায়িত্ব নিলেন রাজনীতিতে নবাগতা ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল।
ব্যস এরপরই শুরু হয়ে গেল বিতর্ক। বিজেপি যেখানে নিজেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের শাখা সংগঠন তখন তারা কী করে শাখা সংগঠন খুলতে পারে তা নিয়ে উঠল প্রশ্ন। সংঘঘনিষ্ঠরা বলছেন, সারা ভারতে সংঘের একটিই শ্রমিক সংগঠন আছে। তা হল ভারতীয় মজদুর সংঘ। যে কোনও পেশার শ্রমিকরাই ওই সংগঠনের সদস্য হতে পারেন। আলাদাভাবে সংগঠন তৈরির কোনও ক্ষমতা বিজেপির নেই। এতদিন কোন রাজ্যে সে চেষ্টা করাই হয়নি। বাংলাতেও তা হবে না। যা করার ভারতীয় মজদুর সংঘের অনুমোদন নিয়ে, তাদের ছত্রছায়া থেকেই করতে হবে। অন্যরকম ভাবনার কোনও অবকাশই নেই। এরপরও কেউ যদি ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করেন, তিনি ভুল করবেন।
বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতেই এর দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করেছে বিজেপিও। এই ধরনের কোনও সংগঠনের দায় তারা নেবে না বলে শনিবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। অগ্নিমিত্রা পালদের সংগঠন ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচারস অ্যান্ড কালচারাল কনফেডারেশনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে হাজির হয়েও একই কথা বললেন দিলীপ ঘোষ। তারপরও অবশ্য এই মিটিং থেকে ‘জয় শ্রীরাম‘ স্লোগান দিতে শোনা যায় অনেককে।
বঙ্গীয় চলচ্চিত্র পরিষদ ও ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচারস অ্যান্ড কালচারাল কনফেডারেশন এই দুটি সংগঠনের জ্বালায় জেরবার হচ্ছে সংঘও। সূত্রের খবর, বঙ্গীয় চলচ্চিত্র পরিষদকে সমর্থন করছে সংঘ। তাই এতে যোগ দিয়েছেন রন্তিদেব সেনগুপ্ত ও স্বপন দাশগুপ্তের মতো বিজেপির থিঙ্কট্যাঙ্কের সদস্যরা। কিন্তু, এই সংগঠনের শীর্ষপদে মুকুলঘনিষ্ঠ শঙ্কুদেব পণ্ডার অস্তিত্ব নাকি মানতে চাইছেন না বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাই বাবান ঘোষ ও অগ্নিমিত্রা পালদের সংগঠনকে সম্পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছেন। তবে প্রকাশ্যে বিতর্ক এড়াতে দলের তরফে নয় ব্যক্তি হিসেবে তাদের সঙ্গে থাকার বার্তা দিচ্ছেন। যা কোনও ভাবেই মানতে পারছে না সংঘ! তাই সোমবার শঙ্কুদেবের ডাকে সাংবাদিক বৈঠকে তাদের শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সংঘের কয়েকজন প্রতিনিধি থাকবেন বলেও জানা গিয়েছে। নাগপুর থেকেও নাকি লক্ষ্য রাখা হচ্ছে পুরো বিষয়টির দিকে।
বিষয়টি দেখে হতাশ হয়ে পড়েছেন টলিউডের পরিবর্তনকামী শিল্পী ও টেকনিশিয়ানরা! লোকসভায় বিজেপি ভাল ফল করতেই আশা বুক বেঁধেছিলেন তাঁরা। ভেবেছিলেন, এবার হয়তো বদলাবে দিন। মুক্তি পাওয়া যাবে দুই ভায়ের হাত থেকে। তাদের মৌরসিপাট্টা ভেঙে গড়ে উঠবে এমন কোনও সংগঠন, যারা ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নের কথা ভাববে। কিন্তু, যেভাবে বিজেপির লোকেরা দুটি সংগঠন গড়ে নিজেদের মধ্যে লড়াই করছেন তাতে আশার প্রদীপ নিভে গেছে। এখন এই বিষয়ে সংঘ কী পদক্ষেপ নেয়, সেইদিকেই লক্ষ্য রেখেছেন তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.