সোহিনী সেন: গল্পটি শবনম ও যশোজিতের। অভিনয়ে মানালি ও সুমন। গল্পে শবনম মেডিক্যাল পড়ছে। যশোজিৎ পড়াশোনার পাট চুকিয়ে প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার। ঘটনাচক্রে সে শবনমের কলেজেরই সিনিয়র। দুই ভিন্নধর্মের তরুণ-তরুণী কীভাবে পাকেচক্রে একে অপরের জীবনে চলে আসে। তা নিয়েই এগোয় কাহিনি। আর তার সঙ্গেই তরতরিয়ে এগোয় শবনমের ডাক্তার হয়ে ওঠার অসম সাহসী লড়াই। এরাই লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ধারাবাহিক ‘নকশিকাঁথা’-র রুপাই-সাজু বলতে পারেন। সোমবার থেকে জি বাংলায় শুরু হয়েছে এই ধারাবাহিক।
চারপাশে ধর্মীয় রাজনীতির জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি, ‘লাভ জেহাদ’ কিংবা ‘ঘরওয়াপসি’-জনিত কারণে নৃশংস হত্যা-কাগজ খুললেই শ্বদন্ত বের করে বসে থাকে এসব খবর। এরকম এক টালমাটাল পরিস্থিতিতে হিন্দু-মুসলিম প্রেম নিয়ে গল্প। আনকোরা তো বটেই, রীতিমতো সাহসীও এক পদক্ষেপ। কী বলছেন লেখক? লীনা জানালেন, এটাই প্রথম নয়, এরকম এক্সপেরিমেন্ট তিনি আগেও করেছেন। সেটাও ছিল ‘জি বাংলা’-তেই প্রফুল্ল রায়ের কাহিনি অবলম্বনে তৈরি ‘কেয়াপাতার নৌকো’। এবং তা চূড়ান্ত হিট হয়। তাঁর মতে, বাংলায় হিন্দু-মুসলিম উভয় শ্রেণির দর্শক থাকলেও ধারাবাহিকে সংখ্যালঘু নিয়ে কাজ কম। তাই এরকম একটা কাজ করার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন। “সিরিয়ালগুলিতে এমন ক’টা নাম, ক’টা চরিত্র বা পার্শ্বচরিত্র রয়েছে যারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করে? অথচ বাংলার মাটিতে দুই সম্প্রদায় পাশাপাশি বাস। দু’পক্ষই সিরিয়াল দেখে। তাই হিন্দুদের মতোই মুসলমানদের কথাও ধারাবাহিকগুলোয় আসা উচিত নয় কি? ব্যাপারটা তো জলের মতো সোজা। অথচ আসে না। কোথাও সংখ্যাগুরুদের ব্যাক অফ মাইন্ডে কাজ করে যে শুধু তাদের নিয়ে কথা বলা হবে ধারাবাহিকগুলোয়।”
[ ভালবাসা, বিরহ ও অপেক্ষার আবেগঘন গাঁথামালা ‘ময়ূরপঙ্খী’ ]
এক লহমায় কয়েকটা সত্যি কথা বলে দেন লীনা। তবে এই পুরো মানসিকতা একদিনে তৈরি হয়নি। তাঁর মতে, মানুষের ইতিহাস চেতনা তাকে হয়তো করাল কিছু অতীত মনে করায়, যা যা ঘটে গিয়েছে বা ধারাবাহিকভাবে যা যা ঘটছে- সেইসব অপ্রিয় ঘটনা থেকেই হয়তো এরকম একটা মনোভাবের জন্ম। লীনা বলেন, “অনেকদিন আগে একটা তৃতীয় শক্তি এসে যে বিভেদ করে যায়, যে দ্বিজাতি তত্ত্ব বানিয়ে রেখে যায় নিজেদের স্বার্থে, সেটা থেকে আদতে আমরা বেরতে পারিনি। অবচেতনে কোথাও যেন ‘আমরা-ওরা’ ব্যাপারখানা রয়েই গিয়েছে। এই বিভেদটা এখন আরও বেড়ে গিয়েছে। রেজিস্ট্যান্স কমে গিয়েছে।” আর ঠিক সেখানেই ‘নকশিকাঁথা’-র প্রাসঙ্গিকতা বলে মনে করছেন লীনা। “এই চ্যালেঞ্জটা এখন যদি অামি না নিতাম আর কখনও নেওয়া হত না। কারণ এটাই ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে দু’জন মানুষের ভালবাসার গল্প শোনানোর সেরা সময়।”- বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলেন লেখক। তবে ‘নকশিকাঁথা’ শুধুই ভালবাসার গল্প নয়, সমান্তরালভাবে তা উওম্যান এস্টাব্লিশমেন্টের বার্তাও দেয়। সংখ্যালঘু পরিবারের একটা মেয়ে তার পারিপার্শ্ব, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অর্থনৈতিক প্রতিকূলতাকে হারিয়ে কীভাবে স্বপ্নের পিছনে ছুটে চলে- সেই উত্তরণের ছবিই বোনার চেষ্টা করেছেন লীনা।
[ উত্তর-পূর্ব ভারতের সংস্কৃতিকে অপমান! সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষমা চাইলেন করণ ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.