Advertisement
Advertisement

কতটা পথ পেরলে তবে ‘সুমন’ হওয়া যায়?

আধুনিক বাঙালির মঙ্গলকাব্যে আধুনিকতার ভাষ্য শেখানো সেই পুরুষ নিঃসন্দেহে কবীর সুমন৷

Touching the chord of bengali hearts, Kabir Suman Turns 67
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 16, 2017 9:59 am
  • Updated:July 13, 2018 4:38 pm  

তিনি নয়ের দশকের বাঙালির ইহজন্ম, পরজন্ম৷ গত জন্মের বিস্মৃত স্মৃতি ভুলে যাওয়া অক্ষরে আজও গান বাঁধেন, সুর দেন অখণ্ড অবসরে৷ তিনি কবীর সুমন৷ আজ তিনি ৬৭৷ তাঁর জন্মদিনে শুধু গোলাপের তোড়া হাতে অভিবাদন জানালেন সরোজ দরবার৷

সময় তো ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায় এগিয়েই যায়৷ কাঁটায় কাঁটা মেলার অপেক্ষা তবু জেগে থাকে৷ সমানে কেন মনে হয় আসেনি সময়! বাংলা সংগীত ও সাহিত্যে সমৃদ্ধির অন্ত নেই৷ আধুনিকতা তবু তার ভাষা খুঁজে মরে৷ কেউ কেউ পারেন, সকলে পারেন না সময়ের সেই কাঁটাটি মিলিয়ে দিতে৷ কেউ কেউই পারেন সময়ে শাসন করে সংস্কৃতির অভিমুখ ঘুরিয়ে দিতে৷

Advertisement

আধুনিক বাঙালির মঙ্গলকাব্যে আধুনিকতার ভাষ্য শেখানো সেই পুরুষ নিঃসন্দেহে কবীর সুমন৷

ছিল মনকেমন করা কোনও বিকেলে দূরের আকাশে জমে ওঠা মেঘ৷ ছিল ভাঙাচোরা শহরের অসমাপ্ত জীবন, রাজনীতির গন্ধে ম-ম বাতাস, চাওয়া আর না-পাওয়ার ভীষণ অসম্ভবে নাগরিক জীবনের শোণিতপ্রবাহে জমে থাকা ক্লান্তি৷  সংস্কৃতির সাজানো অাপ্তবাক্যে তবু ছিল না জীবনের ঘাম-গন্ধ৷ ছিল না বিরক্তি-ঘেন্না-ভালবাসা৷ ছোট সুখ, ছোট দুঃখের খুচ-খুচরো বিরক্তি যেন ব্রাত্য হয়ে পড়েছিল সে আসরে৷ প্রবহমান সময় তো তার গতি খুঁজেই নেবে নিজস্ব আঙ্গিকে ও প্রাসঙ্গিকে৷ আধুনিক বাঙালির কাছে সেই প্রাসঙ্গিকতাই কবীর সুমন৷

imagesছেড়ে আসা সত্তর বাংলা সাহিত্যকে যে গতি দিয়েছিল, যে উত্তরণ ঘটিয়েছিল নাটক ও কবিতার জগতে, তার থেকে যেন দূরে দূরেই ছিল বাংলা গান৷ আলোচনা, সমালোচনা হযেছে৷ কমিটি বসেছে৷ সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে৷ কিন্তু উত্তরণের সোপান মেলেনি৷ এমনকী সলিল চৌধুরীর মতো বৈপ্লবিক যুগপুরুষও গানের কথাতে আক্রান্ত হয়েছেন আগ্রাসী রবীন্দ্রপ্রভাবে৷ এই জঙ্গমতা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে, সংস্কৃতিকে গতি দেওয়ার নামই কবীর সুমন৷

শুধু কি হয়ে ওঠা গান? গানের প্রস্তুতি বোধহয় সময়ের গোপনে শুরু হয়েই ছিল৷ হয়তো আরও কেউ কেউ রত ছিলেন সে চেষ্টায়৷ তবু সার্বিক সার্থকতা আসেনি৷   সুমন সেই সার্থক মেলবন্ধনের নাম৷ সময় তো জাতিস্মর৷ ইতিহাসের সূত্র ধরে সে যে রাস্তায় চলমান হয়ে ওঠে সে সন্ধানের নামই সুমন৷ নব্বইয়ের তোলপাড় করা বাতাসে এ শহরের বাঙালিরা তাই চাওয়ার অর্থ খুঁজে পেয়েছিল নতুন করে৷ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাওয়ার ভিতরেই ছিল জাতিস্মরের সোনার কেল্লার সন্ধান৷ সুরে কথায় বাঙালি পেল তার অতীত সোনার মুহূর্তদের৷ অথচ তা একইসঙ্গে তা কী করে স্মার্ট ও সমসাময়িক হয়ে উঠতে পারে তাও দেখল৷ যে গান আম-বকুলের গন্ধে মাতাল হয়ে বন্য বন্য অরণ্যের ছায়া পেরতে পেরতে ক্লান্ত ক্রমশ ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে উঠছিল, সেই-ই পেয়ে গেল পাড়ার ছোট্ট পার্ককে৷ বোকা পাপড়িকে পেল বাংলা গান, নাকি বাংলা গানকেই পেল বোকা পাপড়িটা, সে প্রশ্ন মুলতুবি থাক৷ বাঙালি পেল তার সংস্কৃতির প্যারাডিম শিফ্ট৷

1011769_665521903491211_1540339390_n

বিনোদনের প্রাথমিক কাজ ছেড়ে ইতিহাসচেতনাকে জাপটে ধরল বাংলা গান৷ তা কি ছিল না৷ ছিল৷ তবে এমন মূলস্রোত বোধহয় হয়ে উঠতে পারেনি৷ ভাষায়-সুরে-গায়নে মেদ ঝরিয়ে এমন আধুনিক হয়ে উঠতে পারেনি৷ সে না-পারাকে সার্থক করে তোলার নামই সুমন৷ কানোরিয়া থেকে নন্দীগ্রাম- বাংলা গানের যে কী ভূমিকা হওয়া উচিত তা দেখা গিয়েছে৷ শুধু গানই বা বলি কেন৷ সংস্কৃতির যে জোরালো কণ্ঠস্বর, যে বাস্তববোধের প্রয়োজন ছিল, তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন৷ শ্লেষ-ব্যঙ্গে-বিদ্রূপে তিনি আমাদের স্বস্তি দেননি৷ এই অস্বস্তিই ভীষণ জরুরি ছিল৷13055335_1016357898453947_5741802626289069711_n বিনোদনের ঠাণ্ডা ঘর যখন বিশ্বায়নের বাজারে ককটেল সংস্কৃতির প্যাকেজ ফিরি করছে, তখন এই চাবুক দরকার ছিল  যা বলে উঠতে পারে, ভদ্রলোকেরা এ গান শুনো না, এ গান অচ্ছুত৷  ভীষণ অসম্ভব ছিল কি সে কাজ৷ হয়তোবা৷ কিন্তু ভীষণ অসম্ভবেও যে তোমাকে চাওয়া যায়-এ স্বপ্ন ফিরি করা গানওয়ালাই তো সুমন৷

জীবন এতদিনে পেরিয়ে গিয়েছে কুড়ি কুড়ি বছরের পার৷ তিনি বৃদ্ধ হলেন৷ বাংলা গানও নানা দিক বদল করে নতুন অভিমুখ খোঁজার চেষ্টা করছে৷ নানা অভিঘাতে বহু ছবি তৈরি হয়, আবার ভেঙেও যায়৷ তবু কোনও কোনও অবসরে জীবনের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় জীবনের মর্মের৷ সে অবসরই হয়তো গানওয়ালার জন্মদিন৷ যেদিন দাঁড়িয়ে বাঙালি বুঝতে পারে তার কোনদিকে যাওয়ার কথা ছিল, আর কোনদিকে সে চলেছে৷ আমরা তাকাই ফিরে আসা সময়ের দিকে. দেখি আজও বিধাতার সঙ্গে সাপলুডো খেলছে পাগলটা. আর আমাদের সামনে বসেই কে যেন সাবধান করে দিয়ে সুরে সুরে বলছেন, ‘যৌবন তুমি মিলিও না তাল, রাষ্ট্রীয় কোনও নাচে.’

গানওয়ালার জন্মদিন শুধু স্মৃতির চর্বিতচবর্ণের নয় তাই৷ বরং যেন হয়ে ওঠে নতুন অঙ্গীকারের প্ল্যাটফর্ম৷

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement