Advertisement
Advertisement

Breaking News

‘মোদি-শাহকে মন থেকে ধন্যবাদ’, ৩৭০ ধারার বিলুপ্তিতে খুশি কাশ্মীরি পণ্ডিত ভরত কল

‘যা কংগ্রেস পারেনি আপনারা করলেন’, মোদি-শাহের ঢালাও প্রশংসা টলি অভিনেতার৷

Tollywood Actor and Kashmiri Pandit Bharat Kaul thanked Modi-Shah
Published by: Tanujit Das
  • Posted:August 6, 2019 10:02 am
  • Updated:August 6, 2019 2:20 pm  

ভরত কল: কংগ্রেস পরিবারের ছেলে আমি। আমার বাবা এমনকী দাদুও কংগ্রেসে ছিলেন। এই প্রথম বিজেপি সরকারের কাজে আমি মন থেকে ধন্যবাদ জানাতে চাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। সত্যি। আপনারা যা করে দেখালেন তা আমাদের কংগ্রেস কোনওদিন পারেনি। আমরা যাঁরা কাশ্মীর থেকে ছিন্নমূল, যাঁরা এক প্রকার নিজেদের কাশ্মীরি সত্ত্বা বাক্সে বন্ধ করে ফেলেছিলাম আরও কোনও দিন না খুলতে পারার হতাশায়। সেই তাঁরাই আজ ধুলো ঝেড়ে সেই বাক্সে বন্দি পুরনো গন্ধ নিচ্ছি। প্রাণ ভরে। বিশ্বাস করুন এত সাহসী একটা পদক্ষেপ, এর আগে করা তো দূর, কেউ ভাবতেও পারেনি। বিজেপি করে দেখাল। আমি তো বলব, গত পাঁচ বছরে বিজেপি সবথেকে ভাল কোনও কাজ যদি করে থাকে, তবে সেটা সার্জিকাল স্ট্রাইক নয়। বরং এই সিদ্ধান্তটি। কারণ, এই সিদ্ধান্ত সবদিক থেকে ‘বিগার দ্যান সার্জিকাল স্ট্রাইক’। কারণ, এখানে তাঁদের কথা ভাবা হয়েছে যাঁরা ‘অল্পসংখ্যক’। মাইনরিটি বা সংখ্যালঘু।

[ আরও পড়ুন: ৩৭০ ধারা বিলুপ্তিতে বলিউডে খুশির হাওয়া, মুখ খুললেন কাশ্মীরি পণ্ডিত অনুপম খের]

Advertisement

হ্যাঁ, এই হিন্দু প্রধান দেশে হিন্দু হয়েও আমরা সংখ্যালঘু। সাধারণভাবে সরকার যখন ভাবে, তখন আগে ভোটের কথা ভাবে। আর ভোট বাড়ায় অবশ্যই সংখ্যাগুরুরা। কিন্তু, এখানে বিজেপি সরকার ভোটের কথা ভাবেনি। তারা সঠিক ভেবেছে। একটা অল্প সংখ্যক সম্প্রদায় যারা দীর্ঘদিন ধরে সুবিচারের আশায় থাকতে থাকতে প্রায় ভুলতে বসেছিল নিজেদের অস্তিত্ব, তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ভেবেছে। আর তাই এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে সার্জিকাল স্ট্রাইকের থেকেও অনেক বড় একটা ঘটনা।
সোমবার সকাল থেকে অসংখ্য ফোন কল আসছিল আমার কাছে। হোয়াটসঅ্যাপে অজস্র মেসেজ। সবই অভিনন্দন জানিয়ে। ওই অভিনন্দন বার্তাগুলোই চাগাড় দিয়ে তুলল আমার ভিতরে চাপা পড়ে থাকা আবেগগুলো। মনে করিয়ে দিল, আমি একজন কাশ্মীরি পণ্ডিত। যাঁকে ভুলতে হয়েছিল নিজের মাতৃভূমির কথা। যে নিজের আত্মীয়দের প্রাণের ভয় বাড়ি ছেড়ে পালাতে দেখেছে। শরণার্থী শিবিরে উদ্ধার হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে প্রাণ হারাতে দেখেছে নিজের দিদাকে।

[ আরও পড়ুন: বিজ্ঞাপন থেকে বলিউড যাত্রা, হরর ছবির নায়িকা দর্শনা বণিক ]

হ্যাঁ, আমি সেই কাশ্মীরি পণ্ডিত। আমার জন্ম কলকাতায় হতে পারে কিন্তু কাশ্মীরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক জোরালো। আমার শিকড়ে লেগে থাকা মাটি সেখানকারই। গ্রীষ্মের ছুটিতে প্রতি বছর কাশ্মীর যেতাম আমরা। ওখানে যেমন আমার বাবার আদি বাড়ি তেমনই আমার মামার বাড়িও। আমার মনে আছে, কাশ্মীরের তৎকালীন রাজ্যপাল জগমোহন যখন হিন্দুদের রাজ্য ছাড়তে বললেন, তখন কতটা অসহায়ত্বের মধ্যে ছিল আমার পরিবার। সেটা ছিল ১৯৮৯ সাল। ১৪ সেপ্টেম্বর কাশ্মীরে হত্যা করা হয়েছিল এক হিন্দু ব্রাহ্মণকে। জেকেএলএফ-এর প্রথম টার্গেট ছিলেন উনিই। নাম পন্ডিত টিকালাল তাপলু। ওঁর হত্যা কাশ্মীরে হিন্দুদের মধ্যে যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল, তার আঁচ কলকাতায় বসেও পেয়েছিলাম আমরা। জগমোহন সেই সময় বলেছিলেন, হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি চিন্তিত। আমার কাকা, মামা–এঁদের সবাইকে চলে আসতে হয়েছিল তাঁদের ভিটেমাটি ছেড়ে। আমার দিদাকে রাখা হয়েছিল শরণার্থী শিবিরে। আমার বাবা-মা কম চেষ্টা করেননি ওঁকে এখানে, কলকাতায় নিয়ে আসার। কিন্তু, উনি শোনেননি। বরং বলেছেন, “ওরা আমাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাবে বলেছে। আমি আমার বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাব না। তোমরা যদি আমাকে তোমাদের সঙ্গে নিয়ে যাও, তবে ওরা আমাকে খুঁজে পাবে কী করে? আমার বাড়িতে পৌঁছে দেবে কী করে?”

[ আরও পড়ুন: নির্ভেজাল বন্ধুত্বের গল্প বলবে ‘ছিছোঁড়ে’, ট্রেলারেই মিলল ইঙ্গিত ]

আগেই বলেছি, দিদার বাড়ি ফেরা হয়নি। আজ ওঁর কথা তাই মনে পড়ছে। নিশ্চয়ই খুশি হতেন দিদা নিজের বাড়িতে, নিজের এলাকায় ফিরতে পেরে। আজ আরেকজনের কথা আমি বলতে চাই। আজ তাঁর কথা বলাটা দরকার। তিনি শের—ই-কাশ্মীর শেখ আবদুল্লা। তিনি ছিলেন এক সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ। উনি সব সময় চেয়েছিলেন কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে থাকুক। হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ মানতেন না তিনি। কিন্তু, ওঁকে নেহরুর আমলে গ্রেপ্তার করা হয়। জেলে পাঠানো হয়েছিল শেখ সাহেবকে। আজ যে রাজনৈতিক পরিবারগুলি ৩৭০ ধারার অপব্যবহার করেছে, তার মধ্যে ওমর আবদুল্লার কথা আমি বলতে পারব না। তবে তাঁর দাদু শেখ আবদুল্লা থাকলে কখনওই এ জিনিস হতে দিতেন না। আর এই কারণেই প্রধানমন্ত্রীকে আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমি। তিনি আমাদের কথা ভেবেছেন। ১৩০ কোটির দেশে সব মিলিয়ে মাত্র সাত লক্ষ যাঁদের সংখ্যা, তাঁদের আবেগকে গুরুত্ব দিয়েছেন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement