Advertisement
Advertisement

কংগ্রেস বা বিজেপি, কাউকেই খুশি করতে পারল না ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’

রান্না তো হল, কিন্তু স্বাদ কই!

'The Accidental Prime minister' movie review
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:January 12, 2019 2:21 pm
  • Updated:January 12, 2019 4:41 pm  

শুভজিৎ মণ্ডল: ইংরেজি প্রবাদে বলে ‘ডোন্ট জাজ এ বুক বাই ইটস কভার’। এ ছবি দেখতে দেখতে মনে হল, ‘ডোন্ট জাজ এ সিনেমা বাই ইটস ট্রেলার’। যে ছবির নাকি কংগ্রেস জমানার পর্দাফাঁস করার কথা ছিল, অন্তত ট্রেলার দেখে সেরকমই মনে হচ্ছিল। যার নাকি লোকসভার হাতে বিজেপির ব্রহ্মাস্ত্র হয়ে ওঠার কথা ছিল.., সে ছবি ব্রহ্মাস্ত্র তো দূরের বিষয়, সামান্য বুড়িমার চকোলেট বোমা ছাড়া বস্তুত আর কিছু নয়। যদি, কেউ ভেবে থাকেন ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ ছবিটি শুধুমাত্র একটি দলকে রাজনৈতিক সুবিধা দেওয়ার জন্য তৈরি। তাহলে তিনি হয়তো ভুল ভাবছেন । ছবিটি তৈরির পিছনে যদি কোনও সুক্ষ্ম রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকেও থাকে, তাও পর্দায় সেভাবে ফুটে ওঠেনি। মূলত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং তাঁর একসময়ের মিডিয়া উপদেষ্টা সঞ্জয় বারুর পারস্পারিক সম্পর্ক এবং ড. মনমোহন সিংয়ের চরিত্রের বিভিন্ন দিক ফুটে উঠেছে এই ছবিতে। ট্রেলার দেখে হয়তো মনে হতে পারে সোনিয়া-মনমোহন দ্বন্দ্ব, তাদের পারস্পরিক বাদানুবাদ ফুটিয়ে তোলাই ছবিটির মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে দেখা দেখা গিয়েছে সোনিয়া ছবিটির তৃতীয় চরিত্র। ছবির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে উঠে এসেছেন সঞ্জয় বারু। তিনিই কথক, আবার পরোক্ষে মনমোহনের পরিচালক।

[পয়সা উশুল ছবি হল কি ‘সিম্বা’?]

ইউপিএ জমানার পর্দার পিছনের গল্প সম্পর্কিত অজানা তথ্য জানার উদ্দেশ্যে হলে গিয়ে থাকলে আপনাকে কিছুটা হলেও হতাশ হতে হবে। কারণ পুরো ছবিটি মূলত মনমোহন কেন্দ্রিক। সোনিয়ার সঙ্গে মনমোহনের বা কংগ্রেস দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের যে বিভেদ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছিল, তা অনেকাংশে সফল হয়নি। তবে, মনমোহন সিংয়ের চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং একই সঙ্গে দুর্বলতা প্রবলভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন পরিচালক বিজয় রত্নাকর গুট্টে। দেখানো হয়েছে গান্ধী পরিবারের প্রতি আনুগত্যের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হচ্ছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর। তবে, কোন কোন ক্ষেত্রে কীভাবে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তা একেবারেই অস্পষ্ট। সোনিয়া এবং মনমোহনের যোগসূত্রটা ঠিক কী তাও পুরোপুরি বোঝা যায়নি।

Advertisement

ছবির প্রথমার্ধে মূলত মনমোহন সিংয়ের দৃঢ় সংকল্প এবং সিদ্ধান্তে অনড় থাকার মানসিকতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ভারত মার্কিন পরমাণু চুক্তি নিয়ে সরকারের অভ্যন্তরের দ্বন্দ্ব এবং জোটসঙ্গী, তথা দলের অভ্যন্তর থেকে প্রবল চাপ সামলে কিভাবে মনমোহন সিং ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, তা ফুটিয়ে তুলে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর দেশের প্রতি দায়বদ্ধতাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তবে, এই একটি ঘটনা ছাড়া ইউপিএ জমানার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়নি ছবিতে। অনেক বিষয় অস্পষ্ট থেকে গিয়েছে, বিশেষ করে মনমোহন জমানায় ওঠা একের পর এক কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে সেভাবে আলোচনাই হয়নি ছবিটিতে। এমনকি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে ‘পাওয়ার টাসেল’-এর জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে যে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে তাও পুরোপুরি ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন পরিচালক। আসলে ছবিটি একটি বইকে কেন্দ্র করে তৈরি, তাই পরিচালকের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। আর তা পর্দায় পরিষ্কার বোঝা গিয়েছে। এছাড়াও দর্শকের অনেক প্রশ্নের জবাব ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রণব মুখোপাধ্যায়কে উপেক্ষা করে মনমোহনকে প্রধানমন্ত্রী করার পর তাঁর কি ভূমিকা? বা অন্য মন্ত্রীদের সঙ্গে মনমোহনের সম্পর্কের রসায়ন কেমন ছিল? সেটিও স্পষ্ট স্পষ্ট নয়। ভারত-পাক সম্পর্ক এবং ২৬/১১ জঙ্গি হামলার বিষয়টি কার্যত পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে ছবিটির বেশ কিছু সংলাপ মিউট করে দেওয়া হয়, যা হয়তো দর্শকের সামনে তৎকালীন পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলতে পারত। শেষদিকে কিছু দৃশ্য সোনিয়া-রাহুল তথা কংগ্রেস সমর্থকদের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ালেও দাঁড়াতে পারে। তবে, তাতে রাজনৈতিকভাবে কংগ্রেস ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে বোধ হয় না।

[বাউয়া সিং মন ভরালেও নম্বর পেল না ‘জিরো’]

এবার আসা যাক চরিত্রায়নের কথায়। ছবিটির মূল দুই চরিত্র অর্থাৎ ড. মনমোহন সিংয়ের চরিত্রে অনুপম খের এবং সঞ্জয় বারুর চরিত্রে অক্ষয় খান্না এককথায় অনবদ্য। তাদের জীবন্ত অভিনয়ের কারণেই ছবিটি নিস্প্রাণ ডকুমেন্টারিতে পরিণত হয়নি। বিশেষ করে বলতে হবে অনুপম খেরের কথা। তিনি নিজেই বলেছেন ড. মনমোহন সিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করা তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা চ্যালেঞ্জ। বাস্তবিক ক্ষেত্রেও নিখুঁতভাবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে অনুকরণ করাটা তাঁর জন্য শক্ত চ্যালেঞ্জ ছিল, এবং তা তিনি অত্যন্ত নৈপুণ্যের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। সোনিয়া গান্ধীর চরিত্রে জার্মান অভিনেত্রী সুজেট বার্নাট যথাযথ এবং পরিমার্জিত। ছবিটিতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র সোনিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব আহমেদ প্যাটেলের ভূমিকায় বিনীত শর্মা, তারও প্রশংসা না করে উপায় নেই। তবে, রাহুল-প্রিয়াঙ্কা তথা কংগ্রেসের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের ভূমিকা এই ছবিতে নেহাতই নগণ্য।

পলিটিক্যাল থ্রিলারটিতে কোনও গান নেই। তবে, গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বেশ কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর অন্য মাত্রা মাত্রা দিয়েছে। সবশেষে, বলা যায় মনমোহন জমানার ১০ বছরের ইতিহাস ঝালিয়ে নিতে এই ছবিটির বিকল্প হতে পারে না। তবে, নেহাত বিনোদনের জন্য ছবিটি আদর্শ নয় । আবার আশ্চর্যজনকভাবে বেশ কিছু জায়গায় হাস্যরসের উদ্রেক হয়। মনমোহন সিং ব্যক্তিগতভাবেও যে রসিক ব্যক্তি ছিলেন, তা বেশ কিছু জায়গায় প্রমাণিত হয়েছে। ছবিটিতে মোটামুটিভাবে মনমোহনকে গৌরবান্বিত করার এবং তাঁর পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিকে খলনায়কের চরিত্রে বসানোর চেষ্টা হয়েছে। পরিচালক বোঝাতে চেয়েছেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশে এই পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি তৈরির পিছনে মূলত গান্ধী পরিবারের ব্যক্তিগত অভিসন্ধি রয়েছে। তবে, অনেক ক্ষেত্রেই সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। তাই সবশেষে বলা যায় যদি ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’-এর যদি কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে থাকে তাহলে তা পুরোপুরি সফল হয়নি, তবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং দেশের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা পুরোপুরি ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন বিজয় রত্নাকর গুট্টে।

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement