রিন্টু ব্রহ্ম, বর্ধমান: ‘সেলেব’ নয়, বর্ধমানের ঘরের মেয়ে হয়েই থাকতে চায় প্রীতি ভট্টাচার্য। সোনি এন্টারটেইনমেন্ট চ্যানেলের নতুন ট্যালেন্ট হান্ট শো ‘সুপারস্টার সিঙ্গার’-এ যে সদ্য সেরার শিরোপা মাথায় তুলে নিয়েছে। মা-ঠাকুমার গায়িকা হওয়ার অধরা স্বপ্নপূরণও করেছে বাংলার এই খুদে।
বর্ধমানের বাদামতলার বাসিন্দা প্রীতি ভট্টাচার্য একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল আয়োজিত এক রিয়ালিটি শোয়ের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গত ৬ অক্টোবর মুম্বই থেকে ওই জাতীয় স্তরের সংগীত প্রতিযোগিতায় ফল ঘোষণা হয়েছে। সুরের মধুতে কয়েক লক্ষ দর্শকদের মন জয় করে ভোটে সেরা হয়েছে সে। তার সুরেলা কণ্ঠে মুগ্ধ হয়েছেন বলিউডের বিখ্যাত গায়ক-গায়িকা অলকা ইয়াগনিক, কুমার শানু, উদিত নারায়ণ, হিমেশ রেশমিয়া। পুজোর মধ্যেই ঘরের মেয়ের জয়ে খুশির জোয়ারে মেতেছে বর্ধমানবাসী।
বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী প্রীতি। বয়স ৯ বছর। বাবা প্রিয়ত ভট্টাচার্য পেশায় ব্যবসায়ী। মা প্রিয়াদেবী গৃহবধূ। বাড়িতে রয়েছেন ঠাকুমা, জেঠু, জেঠিমা, জেঠতুতো দাদা। একেবারে সাধারণ মেয়ের জীবনে যে এমন আমূল পরিবর্তন আসবে তা কল্পনা করতে পারেননি তাঁরাও। চেষ্টা, ইচ্ছাশক্তি, প্রতিভা, সব নিংড়ে দিয়ে লড়ে গিয়েছে প্রীতি। ছোট থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তীব্র ঝোঁক ছিল। প্রীতি যখন ৩-৪ বছরের তখনই টিভিতে কোনও গান চললে বাড়ির কারও কথা বলা পছন্দ করত না। সেই আগ্রহ দেখেই প্রীতির পরিবারের সকলে ওকে গান শেখাতে পাঠায়। বর্ধমানের বাসিন্দা গানের শিক্ষিকা তাপসী ঘোষের কাছে গান শিখত সে। সঙ্গে যেত তার মা-ও। অতঃপর মেয়ের জেদে গান শিখতে থাকেন মা-ও। কিছুদিন আগে তাঁরা জানতে পারেন কলকাতায় ওই প্রতিযোগিতার অডিশন চলছে। সেখানে প্রীতি অনলাইন অডিশন দিতেই সুযোগ পায়। তারপর কলকাতায় তিনটি স্তরে, ও মুম্বইয়ে তিনটি স্তরের অডিশন পাশ করে মুম্বইয়ে মেলে মূল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের টিকিট। ওই রিয়েলিটি শোয়ে একের পর একে গান গেয়ে বিচারক, মেন্টর ও দর্শকদের মন জয় করে ফেলে সে। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। টানা পাঁচ মাস মুম্বইয়ে থেকে এখন সে নিজের বাড়িতে ফিরেছে। নবমী, দশমীতে পুজো কেটেছে বাড়িতেই। ডাক আসছে নানা ক্লাব, মানুষজনদের থেকেও। সংবর্ধনাও পেয়েছে সাংসদ এসএস আলুওয়ালিয়ার কাছ থেকে।
ছোট্ট প্রীতির কথায়, “আমি ভাবতে পারিনি ওখানে গিয়ে আমি চ্যাম্পিয়ান হয়েছি। অন্য প্রতিযোগিদের মধ্যে আমি সব থেকে ছোট ছিলাম। তাই প্রথমে ভেবেছি আমি জিততে পারব না। কিন্তু জিতে খুব ভাল লাগছে।” বুধবার বাড়িতে গেলে সে বলে, “কোথাও গেলে সবাই বলছে সেলিব্রিটি এসেছে। আমি বলছি আমি বর্ধমানের ঘরের মেয়ে। আমি তোমাদের কাছে সেলিব্রিটি নই। সবাই আমায় ভোট করেছে। তাই সবাইকে ধন্যবাদ।” প্রীতির মা প্রিয়াদেবী ও ঠাকুমা রুবিদেবী বলেন, “ছোট বেলায় আমরাও গান শিখেছি। তবে তা পরিস্থিতির চাপে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। এখন ওর জন্য আমাদের স্বপ্নও পূরণ হল।” বাবা প্রিয়তবাবু বলেন, “খুব ভাল লাগছে। পুজোয় ওকে নিয়ে বেশি ঠাকুরও দেখা হয়নি। ওর পড়াশোনাও অনেক দিন বন্ধ ছিল। আমরাই চাই ও আরও এগিয়ে যাক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.