সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভোল বদলাচ্ছে বাংলা ধারাবাহিক। গড়পড়তা শাশুড়ি-বউমার অন্তর্কলহ ছেড়ে এখন অন্য বিষয়ের দিকে ঝুঁকছে টলিউড। তার অন্যতম উদাহরণ ‘ফিরকি’। এক মেয়ে ও তার বৃহন্নলা মায়ের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে ধারাবাহিক। কিন্তু শুরুর আগেই বিতর্ক শুরু হয়েছে ধারাবাহিকটি নিয়ে। বিষয় নয়, সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু বৃহন্নলার চরিত্রটি। প্রতিবাদের মূল মঞ্চে কুসুম সামন্ত। তাঁরই সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন মেঘ সায়ন্তনী।
ব্যাপারটা তাহলে স্পষ্ট করেই বলা যাক। ‘ফিরকি’ ধারাবাহিকের যে প্রোমো ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে ফেসবুকে। সেখানে দেখা গিয়েছে, এক মেয়ে, নাম ফিরকি, তার বিয়ের কথা চলছে। পাত্রপক্ষ বাড়িতে তাকে দেখতে এসেছে। কিন্তু নাম নিয়ে আপত্তি তোলে ফিরকির হবু শাশুড়ি। পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামে ঘটক। সে বলে, মা নেই ফিরকির। তাই নামেরও কোনও ঠিক ঠিকানা নেই। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে মেয়ে। বলে, মা আছে তাঁর। তখনই মায়ের প্রবেশ। দেখা যায় তিনি বৃহন্নলা।
এই বৃহন্নলার চরিত্রে এক মহিলা অভিনয় করেছেন। আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন মেঘ সায়ন্তনী, ওরফে নৃত্যশিল্পী সায়ন্তনী ঘোষ। তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট। একজন বৃহন্নলার চরিত্রে কেন একজন মহিলাকে নেওয়া হবে। চরিত্র অনুযায়ী একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে এখানে কাস্ট করা উচিত ছিল। এই নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন তিনি। লিখেছেন, এই ধারাবাহিক হয়তো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতি জনসাধারণের মনে যে ধারণা রয়েছে, তাকে হয়তো পালটে দেবে। কিন্তু যদি সত্যিই বৃন্নলাদের সম্মানের কথা মাথায় রেখে ধারাবাহিকটি হয়, তবে কেন ফিরকির মায়ের ভূমিকায় কোনও বৃহন্নলাকেই কাস্ট করা হল না? একবার সুযোগ দিয়েও কি দেখা যেত না? তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “আমাদের জীবনী নিয়ে গল্প হচ্ছে, সিরিয়াল হচ্ছে, অভিনয়ের বেলা বাদ যাচ্ছে কেন? আমাদের মধ্যে প্রচুর ভাল অভিনেত্রী ছিল। তাদের সুযোগ দেওয়া হল না কেন? একজন হিজরা তার জীবনী যতটা ফুটাতে পারবে, একজন নারী সেই অভিনয় ফোটাতে পারবে? একজন হিজরাই বোঝে তার জীবনের যন্ত্রণা কতটা।”
এখানেই থামেননি নৃত্যশিল্পী। এরপরই উগরে দিয়েছেন ক্ষোভ। লিখেছেন, “কে বলেছে আমাদের নিয়ে গল্প লিখতে, যদি পেটে ভাত না দেন, গল্প লিখে, সিরিয়াল করে দেখিয়ে, আমাদের পেটের ভাত হবে না, যদি না ওই সুযোগটি পাওয়া যায়। আপনারা আমাদের জীবন নিয়ে ব্যবসা করছেন। যদি না আমাদের মতো মানুষরা সুযোগ পায়, তাহলে দরকার নেই এমন সিরিয়ালের। দরকার নেই আপনাদের করুণা। আমরা যেমন আছি, তেমনই থাকব। মিথ্যে করুণা পাওয়ার দরকার নেই।” আসল পোস্টটি কুসুম সামন্তর। তার পোস্টটিই শেয়ার করেছেন মেঘ সায়ন্তনী।
নেহাত অমূলক প্রশ্ন নয়। ধারাবাহিক বলছে, ‘ফিরকি’ আসলে বৃহন্নলাদের গল্প। তাদের অধিকারের গল্প, তাদের কষ্টের গল্প। অথচ এক অভিনেত্রীকে দিয়ে চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হল। তবে কি সত্যিই বৃহন্নলাদের নিয়ে ‘ব্যবসা’ করছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি? ইমোশন বেচে ঘরে তুলতে চাইছে লাভের কড়ি? মানুষের ধারণা পালটানোর কথা কি নিছক ব্যবসার খাতিরেই? মেঘ সায়ন্তনীর ফেসবুক পোস্ট উসকে দিল সেইসব প্রশ্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.