কর্মজীবনে ২৫ বছর পার করলেন মীর। এককথায় এবছর তাঁর কর্মজীবনের রজত জয়ন্তী বর্ষ। সেই উপলক্ষেই সঞ্চালক-অভিনেতা মীর আফসার আলি ফিরে দেখলেন তাঁর কর্মজীবনের পঁচিশটা বছর। কথা বললেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ
২৫ বছর, ফিরে দেখলে কীভাবে বর্ণনা করবে এই পিরিয়ডটাকে?
এমন একটা সময়ে শুরু করেছি যখন মোবাইল ছিল না। পেজার ছিল যোগাযোগের জন্য। লোক ওতেই ম্যাসেজ পাঠাত। গ্রামোফোনের যুগের পরিবর্তে এল ক্যাসেট-সিডি। তার বাজার উঠে গেল। এই ট্রানজিশন পিরিয়ডটা দেখেছি। আমার খুব অদ্ভূত লাগে ভাবলে যে গত ২৫ বছরে কত কিছু বদলে গিয়েছে। তবে একটা জিনিস এখনও বদলায়নি। এখনও প্যাশনেটলি লোকজন রেডিওতে কাজ করছে। আমি যখন শুরু করেছিলাম তখন সবাই বলল টিভির জন্য রেডিও প্রায় শেষ। আর কেউ শুনবে না। তারপর এফএম চালু হল। নতুন প্রজন্মের অনেকে কথা বলার সুযোগ পেল। ক্রিস্টাল ক্লিয়ার সাউন্ডে আধুনিক গান বাজছে, ঝাঁ চকচকে ব্যাপার আর কী! সব মিলিয়ে ২৫ বছরের জার্নিটা বেশ ইন্টারেস্টিং। মনে হয় যেন একটা জীবনকাল দেখে ফেলেছি। নস্ট্যালজিকও।
আজকের মীর যাকে অনেকেই আদর করে বেতার বাদশা বলে, জীবনের এই পর্যায়ে এসে কীরকম অনুভূতি?
বাদশা আমি নই। আমি বেতারের গোলামই বটে। এখনও আমার অভ্যেসটা রয়ে গিয়েছে একেবারে প্রথমদিনের মতোই। রোজ সকালে রেডিও অন করে আমি কী কী বলব সেটা একটা কাগজে লিখে নেওয়া। এখন অবশ্য মোবাইলেই লিখি। লেখার অভ্যেসটা ২৫ বছরে এখনও বদলায়নি। আমি কনফিডেন্ট থাকি বা না থাকি, শুরুর দিন থেকেই এটা আমার অভ্যেস। মনের শান্তি। মাইকটা প্রথম যখন অন করব তখন কোন কথাগুলি বলব তা লেখা থাকে।
“আত্মবিশ্বাসই আমার গলার ওষুধ। ঠান্ডা, টক-ঝাল খাব না, এসব আমার নেই। শাহরুখের ‘কাল হো না হো’ কনসেপ্টে বিশ্বাসী।”
ব্যাকস্টেজে গিয়ে স্ক্রিপ্ট ঝালিয়ে নেওয়ার অভ্যেস তো তোমার এখনও..
হ্যাঁ। ইভেন্ট সম্পর্কে যাবতীয় ইন্ট্রোডাকশন থাকে, এত বছরের অভিজ্ঞতায় মনে হতেই পারে এগুলোর দরকার নেই। কিন্তু আমি পোক্ত হোমওয়ার্কে বিশ্বাসী। প্রত্যেকটা পারফরমেন্সের সময়ই আমি আমার প্রথমদিন বলে মনে করি আজও। যতদিন কাজ করব এই অ্যাটিটিউডটা ধরে রাখতে চাই। ২৫ বছরে ২ হাজারের বেশি ইভেন্ট সঞ্চালনা করলেও টেকেন ফর গ্র্যান্টেড নিই না। আমার কাছে এগুলো সংখ্যামাত্র। আজও স্টেজে ওঠার আগে নার্ভাস লাগে।
এখনও?
হ্যাঁ, মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য শো শুরু হওয়ার আগে আমি নিজেকে একা রাখতে পছন্দ করি কিছুক্ষণ। এখন যদিও সবার কথা বলা, সেলফি তোলার আবদারে একটু কঠিন হয় সেটা।
বাচিকভঙ্গি প্র্যাকটিস করো এখনও?
হ্যাঁ, আমি নিজের সঙ্গে প্রচুর কথা বলি। অন এয়ার যাতে আমি না তোতলাই। কথা না জড়িয়ে যায়। বছর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার নিজের সঙ্গে কথা বলার পরিমাণও বেড়ে গিয়েছে। কোন শব্দ ব্যবহার করলে অপর প্রান্তের মানুষের শুনতে ভাল লাগবে। সেগুলো নিজের সঙ্গে নিজেই আলোচনা করি।
আচ্ছা যেহেতু কণ্ঠ দিয়েই কারবার.. গলার যত্ন নাও কীভাবে?
কনফিডেন্স। আত্মবিশ্বাসই আমার গলার ওষুধ। বাচিক শিল্পী হিসেবে যেখানে আমাকে রোজ কথা বলতে হয়, সেখানে ঠান্ডা, টক-ঝাল খাব না, এসব আমার নেই। আমি জীবন উপভোগ করি। শাহরুখের ‘কাল হো না হো’ কনসেপ্টে বিশ্বাসী।
লিভ লাইফ টু দ্য ফুলেস্ট, তাই তো?
এক্কেবারে। যখন যেমন তখন তেমন। ঠান্ডা লেগে কিংবা কোনও কারণে গলা খারাপ থাকলেও আমি শোয়ের প্রথমেই বলে দিই যে, দেখুন ঠান্ডা লেগেছে কিছু মনে করবেন না। তোমার গলা ৩৬৫ দিন সমান থাকবে না, এটা সবাই বোঝে। সেই ক্ষেত্রে অ্যাটিটিউডই অস্ত্র।
সঞ্চালনার পাশাপাশি ছবিতেও অভিনয় করছ। এই মুহূর্তে টিভি, রেডিও, বড়পর্দার মধ্যে থেকে বেছে নিতে বললে কোনটা বাছবে?
চোখ বন্ধ করে রেডিও। আমি মাঝেমধ্যেই ঠাট্টা করে বলি, আমার মাথায় বন্দুক ঠেকালে তখনও বলব, আমার সব নিয়ে নাও। শুধু রেডিওটা নিও না। রেডিও আমার জন্য অক্সিজেন।
আচ্ছা..
১৯৯৮-এ এমটিভির একটা অডিশনে উতরে গিয়েছিলাম। তখনই মুম্বই যেতে পারতাম। ২০০৪-এ স্টার ওয়ানে যখন লাফটার চ্যালেঞ্জ শুরু হল আমি তাতেও অংশ নিয়েছিলাম। সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিলাম। চ্যানেলের তরফ থেকে আমাকে অফারও করেছিল ওদের ক্রিয়েটিভ টিমে যোগ দেওয়ার জন্য। এবং তারপর ২০০৬ সাল থেকেই আমি নিজের শো মীরাক্কেল শুরু করলাম। কিন্তু তখনও স্টারের সঙ্গে কাজ করার একটা সুযোগ এল। যাইনি। এই সবকটা কেন ফিরিয়ে ছিলাম জানো? তখন মনে হয়েছিল আমার রেডিওর কেরিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই যাইনি।
তুমি যেভাবে স্ট্রাগল করেছ, আজকের প্রজন্মের ক্ষেত্রে কী মনে হয়, অনেক অনায়াসেই কি তারা প্ল্যাটফর্ম পেয়ে যায়?
এখন কাজের প্রচার অনেক সহজেই করা যায়। সব থেকে বড় অস্ত্র সোশ্যাল মিডিয়া। লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে মুহূর্তের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায়। দেদার শেয়ার-সাবস্ক্রাইব। এটাই সুবিধে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি সবকিছুর সময় রয়েছে। এই প্রজন্মও অনেক পরিশ্রম করছে। দেখেও গর্ববোধ হয়। জেনারেশন গ্যাপ আমি মানি না। সবার কাছ থেকেই শেখার রয়েছে।
‘ওকিয়াগারি’তে অভিনয় করলে তো? এরপর আর কোনও ছবির কাজ রয়েছে কি?
বড় ছবি নেই। তবে নবপ্রজন্মের যারা স্বল্প বাজেটে ছবি বানানোর চেষ্টা করছে, তাদের আরও উৎসাহ জোগানো দরকার। তাই শর্টফিল্মে অভিনয়ের অফার এলেই করি।
‘মীরাক্কেল’ সিজন ১০ কবে আসছে?
খুব সম্ভবত এবছরই। অডিশন প্রক্রিয়া চলছে। চ্যানেলের তরফ থেকে শুটিং ডেট কিংবা যাবতীয় শিডিউল চূড়ান্ত হবে খুব শিগগিরিই।
আচ্ছা, অনেকেরই অভিযোগ গত কটা ‘মীরাক্কেল’-এর সিজনে বেশি করে অ্যাডাল্ট কনটেন্টের জোকস রাখা হচ্ছে। তোমার কী মত?
আমরা লেটনাইট শো হিসেবেই ওটা রাখার চেষ্টা করেছিলাম। এজন্য রাত সাড়ে ৯টার শ্লট পরিবর্তন করে ১০টা করা হয়েছিল। তবে আমাদের টার্গেট অডিয়েন্স কিন্তু পরিবারের লোকদের পাশাপাশি কলেজ পড়ুয়ারাও।
কিন্তু আমাদের দেশে রাত ৯-১০টা লেটনাইট কোথায়! ওই সময়ে ছেলেমেয়েরা তো পরিবারের সঙ্গে ডাইনিং টেবিলে বসে ডিনার সারে!
হ্যাঁ, শো করতে করতে আমরা এটাই আবিষ্কার করলাম যে বাচ্চারাও অনেক রাত অবধি জেগে থাকছে। আমরা এগুলো থেকেই শিক্ষা নিচ্ছি। দর্শকদের যা ভাল লাগে সেরকমই কনটেন্ট রাখার চেষ্টা থাকবে।
২৫ বছরে অনেকবার বিতর্কে জড়িয়েছ.. বিশেষ করে ঋতুপর্ণ ঘোষের কথা বলব। আজ এতবছর পর সেই পর্বটা প্রসঙ্গে কী মনে হয়?
আমাদের মতে মেলেনি। কিন্তু লোকজন এত মাথা ঘামিয়েছিল সেসময়ে। দেড় বছর মান-অভিমানের পালা চলেছে। আমরা কথা বলিনি। বিতর্ক প্রত্যেকটা তারকা, শিল্পীদের জীবনের একটা অঙ্গ। পরে ভাবি ওটা ভুল হয়েছিল। ও ওঁর মতো ছিল আমি আমার মতো।
সম্প্রতি ‘সা রে গা মা পা’ খ্যাত নোবেলের মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তোমার কী মত এপ্রসঙ্গে?
এককথায় অযথা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে নোবেলের মন্তব্যকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.