সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সিনেমার আন্তর্জাতিক আঙিনায় বিশ্ব মিশেছে বাংলায়। কিন্তু উলটোটা যেন হতে হতেও হয়ে উঠতে পারল না। বাধ সাধল যান্ত্রিক ত্রুটি। নাকি সদিচ্ছা! এবছরের কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া একমাত্র বাংলা ছবি পিউপা-র প্রদর্শনের সময়ই বন্ধ হয়ে গেল প্রোজেক্টর। একরকম বিরক্ত হয়েই উঠে গেলেন আন্তর্জাতিক জুরিরা। একরাশ হতাশা দর্শকদের মধ্যেও।
[ ‘পদ্মাবতী’র মুক্তি আটকাতে এবার মোদিকে চিঠি রাজ পরিবারের ]
ঘটনা শনিবারের। রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হচ্ছিল ইন্দ্রাশিস আচার্যের ছবি ‘পিউপা’। পরিচালকের ‘বিলু রাক্ষস’ ইতিমধ্যেই দর্শকদের অন্যরকম ছবির স্বাদ দিয়েছে। ফলে ‘পিউপা’ নিয়েও আলাদা আগ্রহ ছিল। তার উপর ভারতীয় ভাষার প্রতিযোগিতা বিভাগে এটিই ছিল এবারের একমাত্র বাংলা ছবি। কিন্তু ছবি চলাকালীন বারবার বিপত্তি। ছবির সাউন্ড, কালার নিয়ে এমনিতেই অস্বস্তি ছিল দর্শকদের মনে। এরপর প্রোজেক্টরের গণ্ডগোলের কারণে প্রথমে বন্ধ হয়ে যায় ছবির প্রদর্শন। প্রায় মিনিট পঁচিশ অপেক্ষা করার পর শুরু হয় দ্বিতীয়বার প্রদর্শন। কিন্তু আবারও একই বিপত্তি। শেষমেশ উঠে চলে যান আন্তর্জাতিক জুরিরা। আন্তর্জাতিক মানের একটা চলচ্চিত্র উৎসবে কী করে এই ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি বারবার হতে পারে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে।
[ সবচেয়ে বড় পোস্টারের পর গ্রাফিক নভেল, ফের চমক ‘আমাজন অভিযান’-এর ]
ঘটনায় ক্ষুব্ধ দর্শকদের অনেকেই। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরা তা প্রকাশ করেছেন। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এ ধরনের ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয় এবং লজ্জাজনক বলেই মত তাঁদের। অন্যদিকে পুরো ঘটনায় আক্ষেপের সুর ছবির পরিচালক ও কলাকুশলীদের কথাতেও। ছবির অন্যতম অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, “রাগ নয়, তবে খুব বিরক্ত লাগছে। মানুষ মনযোগ দিয়ে একটা সিরিয়াস ছবি দেখছিলেন। আচমকা এরকম ঘটনা। সেকেন্ড ব্রেকটার পর অনেক দর্শকও আর বিরক্ত হয়ে ফিরতে চাননি। তাছাড়া প্রতিযোগিতা থেকেও বাদ হয়ে গেল ছবিটি। তাহলে আর রাখার কী মানে হল! আমি অভিযোগ করছি না। ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়নি। কিন্তু পুরো ঘটনাটাই অত্যন্ত দুঃখজনক।” হতাশা গ্রাস করেছে পরিচালককেও। প্রতিযোগিতার ছবি এভাবে বাদ চলে যাওয়া তো কোনওভাবেই কাম্য নয়। সে কথা জানিয়েই ইন্দ্রাশিস আচার্য বললেন, “ফ্রাস্টেটিং ব্যাপার তো বটেই। জুরিরা উঠে চলে গিয়েছিলেন। হতাশই লেগেছিল। তবে কর্তৃপক্ষ ছবিটি আবার জুরিদের দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আপাতত সেটাই আশাব্যঞ্জক।” আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে পরিচালক। ছবির অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী জানালেন, “ছবি প্রতিযোগিতায় আছে না নেই, সেটা আলাদা ব্যাপার। কোনও ছবিরই প্রদর্শনে এরকম বাধা পড়া উচিত নয়। একজন সিনেমাকর্মী বা সিনেমাপ্রেমী হিসেবে এটা সত্যিই অত্যন্ত হতাশাজনক। আর এই সিনেমার একজন হিসেবে ঘটনায় খুব কষ্টও পেয়েছি। কর্তৃপক্ষ জুরিদের দেখানোর জন্য হয়তো ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু বহু দর্শক গতকাল ফিরে গিয়েছেন। নিজেদের প্রতারিত মনে করেছেন। সেই ক্ষতিটা অপূরণীয়। এখন এই ধরনের যান্ত্রিক গোলোযোগের ব্যাপারগুলো নতুন নয়, এবং তা যে বন্ধ করা যায় না তাও তো নয়। আমি শুধু চাইব, এর পুনরাবৃত্তি যেন না হয়।”
[ নাম ‘ন্যুড’, অজুহাতে গোয়া চলচিত্র উৎসব থেকে বাদ সিনেমা ]
যেহেতু ছবিটি প্রতিযোগিতায় ছিল, তাই জুরিদের তা ফের দেখানোর ব্যবস্থা করা হবে বলেই আশ্বাস কর্তৃপক্ষর। কিন্তু তাতে দর্শকদের ক্ষোভ চাপা থাকছে না। বহু দর্শকই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি না দেখতে পারার হতাশা ব্যক্ত করেছেন। বরাবরই বাংলা সংস্কৃতিকে, বাংলার ছবিকে বিশ্ব আঙিনায় তুলে ধরার ক্ষেত্রে জোর দিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে বাংলারই চলচ্চিত্র উৎসবে, বাংলা ছবিরই এই হোঁচট, বাংলার জন্য ভাল বিজ্ঞাপন হয়ে থাকল না বলেই মত অনেকের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.