সন্দীপ্তা ভঞ্জ: সপ্তাহ গড়িয়ে মাসের পর মাস, মিলছে না বকেয়া পারিশ্রমিক। কারও লাখ খানেক টাকা বাকি তো কারও হাজার হাজার টাকা। পারিশ্রমিক না পাওয়ায় রীতিমতো ফুঁসছে টলিপাড়া। কাজ বন্ধ রেখে প্রতিবাদ করেও হয়নি সমস্যার সুরাহা। রবিবার, ২৩ জুন সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটল ফেডারেশনের মিটিংয়ে। অভিযোগ, দিনের পর দিন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও আজও বকেয়া টাকার মুখ দেখতে পাননি বেশিরভাগ টেকনিশিয়ান তথা শিল্পীরা। আদৌ সেই সমস্যার সমাধান হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান টলিপাড়ার অনেকেই। তবে, চ্যানেল কর্তৃপক্ষের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে আগামী ৭ দিনের মধ্যেই শিল্পী এবং টেকনিশিয়ানদের বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে।
[আরও পড়ুন: জনপ্রিয় রিয়ালিটি শোয়ের প্রযোজকের মৃত্যু ঘিরে দানা বেঁধেছে রহস্য ]
ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া-র সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে এদিন টালিগঞ্জ আইটিআই প্রাঙ্গণে আয়োজিত হয়েছিল এক মিটিং। উপস্থিত ছিলেন ইন্দ্রনীল সেন, অরূপ বিশ্বাস, পিয়া সেনগুপ্ত, প্রযোজক নিসপাল সিং রানে-সহ আরও অনেকেই। মুখ ভার করা আকাশ, মুসলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করেও এদিন সেই মিটিংয়ে যোগ দিতে উপস্থিত ছিলেন টলিপাড়ার হাজার হাজার কলাকুশলী। ২৩ জুনের এই মিটিংয়ের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন তাঁরা। বকেয়া পারিশ্রমিক না মেলা নিয়ে একপক্ষ যখন ক্ষোভে ফুঁসছে, আরেকপক্ষের গলায় তখন শোনা গেল আশাবাদী সুর। তাঁদের মতে, “আজকের মিটিংয়ের জন্যই আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। তৃণমূল নেতা অরূপ বিশ্বাসের আশ্বাসবাণীর পর আমরা আরও ৭ দিন অপেক্ষা করতে প্রস্তুত। তবে, এই ৭ দিনে টাকা না মিললে বড়সড় আন্দোলনের পথে নামব আমরা।” কিন্তু এতদিন ধরে প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরও টাকা না মেলায় ধন্দে রয়েছেন অনেকেই। এই সমস্যা আদৌ মিটবে কি না, তা নিয়ে সন্দিগ্ধ সিংহভাগ টেকনিশিয়ানরা। রবিবারের মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন স্টার জলসা, জি বাংলা এবং কালার্স বাংলা চ্যানেলের আধিকারিকরা। সংশ্লিষ্ট ৩ চ্যানেল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয় আগামী ৭ দিনের মধ্যে সমস্ত টেকনিশিয়ান এবং শিল্পীদের বকেয়া পারিশ্রমিক মিটিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়াও, কলাকুশলীদের সুবিধার্থে এবং তাঁদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বছরে দু’বার ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট তিন চ্যানেলের কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মার্চ মাস থেকেই শিল্পীদের বকেয়া পারিশ্রমিক না মেটার বিষয়টি নজরে আসে। কারণ, সেসময়ে দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার হাত থেকে চারটি ধারাবাহিকের প্রযোজনার দায়িত্ব হস্তান্তরিত হয় স্টার জলসা, জি বাংলা ও কালারস বাংলার কাছে। সেই সময় থেকেই রানা সরকার সবার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলেন। তবে, মে মাসে আর্টিস্ট ফোরামের জরুরি বৈঠকের পর নড়েচড়ে বসেন দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার কর্তা রানা সরকার। তাই ১০ জুন চ্যানেলগুলোকে মেল করে এনওসি জমা দেন তিনি। শেষপর্যন্ত ২১ জুন আর্টিস্ট ফোরামের তরফে ১৭১ জন শিল্পীর বকেয়া টাকা মেটার খবর পাওয়া যায়। তবে, টেকনিশিয়ানদের টাকা এখনও অধরাই রয়ে গিয়েছে। আর সেই জন্যই ধারাবাহিকের শুটিংয়ের সমস্ত কাজ বন্ধ রেখে ২৩ জুন, রবিবারের মিটিংয়ে জড়ো হয়েছিলেন প্রায় হাজার খানেক টেকনিশিয়ান।
[আরও পড়ুন: মিটতে চলেছে শিল্পীদের বকেয়া পারিশ্রমিক, টাকা এল আর্টিস্ট ফোরামের হাতে]
আরও অভিযোগ উঠেছে টলিউডের একাধিক টেকনিশিয়ানদের তরফে। তাঁদের বক্তব্য, যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও, যে কেউ পেয়ে যাচ্ছেন গিল্ডের কার্ড। এক্ষেত্রে কাজের পরিসর কম থাকলেও দিন দিন বেড়েই চলেছে কর্মী সংখ্যা। অতঃপর, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না থাকায় কাজের সময় দেখা দিচ্ছে নানারকম সমস্যা। শুধু বকেয়া পারিশ্রমিক মিটলেই যে ইন্ডাস্ট্রির সব সমস্যার সমাধান হবে এমনটা নয়, কারণ টলিউডের অন্দরে বাসা বেঁধেছে আরও নানারকম সমস্যা। আর তাই নিজেদের রুজিরুটি নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন টেকনিশিয়ান তথা শিল্পীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.