সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাবলু, বিলু, ভোম্বল, বাচ্চু-বিচ্ছু আর পোষ্য পঞ্চু… নিঝুম রাতদুপুর থেকে বাঙালির শৈশবের চিলেকোঠার সঙ্গী এরা। আট কিংবা নয়ের দশকের নস্ট্যালজিয়া উসকে দিতে আসছে টিভির পর্দায়, সম্প্রতি এই খবরেই নেশায় বুঁদ ছিলেন বাঙালি টেলিদর্শকরা। হাজার হোক যাদের ঘিরে শৈশব, তাদের যদি এবার মুভিং মোডে টিভির পর্দায় পাওয়া যায়, এই লকডাউনের গৃহবন্দী জীবনে, তা একেবারে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতোই হবে বিলক্ষণ! এমনটাই ভেবেছিলেন তাঁরা। কিন্তু টিজার মুক্তির পর দেখা গেল এ কী! সব তো ঘেঁটে-ঘ। এই পঞ্চপাণ্ডবের বন্ধুত্বের মধ্যে আবার রোম্যান্সের গন্ধ কোথায় খুঁজে পেলেন নির্মাতারা? প্রশ্ন তুলে একেবারে রে-রে করে উঠেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বইয়ের পাতা থেকে ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’দের (Pandav Goenda ) এবার টেলিপর্দায় দেখতে অনেকেই কৌতূহলী ছিলেন। জনপ্রিয় চ্যানেলের ঘোষণার পর থেকেই তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, উৎসাহও ছিল পাহাড়প্রমাণ। কিন্তু সদ্য মুক্তি পাওয়া টিজার যেন, তাতে একেবারে জল ঢেলে দিল!
দক্ষ পিস্তলবাজ বাবলু। সাহসী-বিচক্ষণ বিলু। ভীতু হলেও দুর্দান্ত সাঁতারু ভোম্বল। ডানপিটে দুই মেয়ে বাচ্চু আর বিচ্ছু। আর এই পঞ্চপাণ্ডবের সঙ্গী পঞ্চু। এক চোখ কানা হলেও প্রয়োজনের সময় পঞ্চুর ক্ষিপ্রতার কাছে কেউ টিকতে পারে না। ছোটবেলায় এই চরিত্রগুলো তো আমূল বদলে ফেলল নির্মাতারা! এমন মন্তব্যই এখন মুখে মুখে।
পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের ভাবনায় বাবলু-সহ পুরো টিমের বয়স একটু বেড়েছে এবার। কাহিনির প্রয়োজনে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারাও এখন কেতাদুরস্থ। কিন্তু এই নতুন পঞ্চপাণ্ডব টিমকে কতটা মেনে নেবেন দর্শকরা? সেই প্রশ্নই এখন উঠেছে।
একটি বাগানবাড়িতে বাবলুর জন্মদিনের আয়োজন করেছে বাচ্চু। সেই সঙ্গে চোখে আলগা প্রেম আর ব্যাকগ্রাউন্ডে জনপ্রিয় বাংলা সিনেমার গান। ব্যস, এতেই চোখ কপালে উঠেছে দর্শকদের! ছোটবেলার পড়া বাচ্চু, বাবলুরা বেমালুম সব বদলে গেল? স্রেফ ৫০ সেকেন্ডের প্রোমোতেই শোরগোল শুরু হয়েছে। এমনকী পঞ্চুকেও তৈরি করা হয়েছে অ্যানিমেশনে! অতঃপর, টিজার আপলোড হতেই ইউটিউবে ডিসলাইকের বন্যা।
বন্ধুত্বের গল্পে প্রেমের ইঙ্গিত কেন? এই প্রশ্নেই তোলপাড় নেটপাড়া। অনেকেই মতে, কালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চরিত্রেরা অবশ্যই আধুনিক হবে, কিন্তু তাই বলে কি ছেলেবেলার নির্যাসটাই হারিয়ে যাবে? এই গল্প কি সত্যি পাঠকরা মেনে নেবেন? প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’ লেখক ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়। এই বয়সে এসে তাঁর সৃষ্টিকে বিকৃত করে দেওয়া হলে, তা কতটা যুক্তিযুক্ত? প্রশ্ন তুলেছেন নিজেই। “আমার লেখক জীবনের দুর্ভাগ্য, যে মরবার বয়সে এসব দেখে যেতে হচ্ছে! আমার লেখা বই যদি খারাপ হয় তাহলে মানুষ বলুক, আমি লেখা বন্ধ করে দেব। কিন্তু টেলিভিশনে যা হচ্ছে, সেটা আমার আয়ত্তের বাইরে”, মত ষষ্ঠীপদবাবুর।
এই বিষয়ে যাবতীয় বিতর্কের জল ঢেলে প্রযোজকের সাফ মন্তব্য, “তাঁরও বেড়ে ওঠা পাণ্ডব গোয়েন্দা পড়েই। তাই সেই আবেগ নিয়ে খেলার প্রশ্নই ওঠে না! একটা বাচ্চা ছেলের হাতে বন্দুক ধরাব কী করে? আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী ২১ বছর বয়সের আগে তো কেউ বন্দুক রাখতে পারেন না। তাহলে বাবলুর হাতে বন্দুক থাকবে কীভাবে? তাছাড়া ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় দশকের পর দশক ধরে পাণ্ডব গোয়েন্দা লিখেছেন। সেখানে তারা ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে। টেলিভিশন ধারাবাহিকে তো সে সুযোগ নেই।”
পাণ্ডব গোয়েন্দায় পঞ্চু কেন অ্যানিমেটেড? এপ্রসঙ্গে প্রযোজকের মত, নিজে একজন পশুপ্রেমী হিসেবে একটা কুকুরকে রোজ রোজ শুটিংয়ের প্রয়োজনে সেটে বেঁধে রাখার বিরোধী তিনি। তাই এমন সিদ্ধান্ত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.