ফাইল ছবি
সন্দীপ্তা ভঞ্জ: ভোট শেষ। ফলাফলের পর নতুন মন্ত্রিসভা গঠনও হয়ে গিয়েছে। তবে ভোটপরবর্তীকালেও বাংলায় দিদি-মোদি তরজার রেশ এখনও কাটেনি। আর ‘ঘাসফুল বনাম পদ্মফুল’ সংঘাতের সেই জল গড়িয়েছে টলিউড ইন্ডাস্ট্রির দুয়ার অবধি। শুধু রাজনীতির ময়দান নয়, গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রিতেও চাই আধিপত্য, দাবি বিজেপির। আর টলিউডে সেই গেরুয়া-সুবজ লড়াইয়ের দুন্দুভি ইতিমধ্যেই বেজে গিয়েছে। ২২ জুন, শনিবার টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়ায় নিজেদের সংগঠনের পথচলার কথা ঘোষণা করে গেরুয়া শিবির। আর তারই পালটা হিসেবে ২৩ জুন, রবিবার ফেডারেশনের মিটিংয়ে সুর চড়ালেন তৃণমূল নেতা অরূপ বিশ্বাস।
[আরও পড়ুন: মিটতে চলেছে শিল্পীদের বকেয়া পারিশ্রমিক, টাকা এল আর্টিস্ট ফোরামের হাতে]
বকেয়া পারিশ্রমিক না পাওয়া নিয়ে গত ৩ মাস ধরেই টলিউডের অন্দরে চলছে এক চাপানউতোর। দীর্ঘ দিন প্রতিবাদ করেও সমস্যার সুরাহা না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন টেকনিশিয়ানরা। আর শিল্পী-কলাকুশলীদের এই সমস্যাগুলোকে হাতিয়ার করেই টলিপাড়ায় ময়দানে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে গেরুয়া শিবির। অন্যদিকে, ইন্ডাস্ট্রিকে ‘রাজনৈতিক রং’-এ না রাঙানোর হুংকার ছেড়েছেন তৃণমূল নেতা অরূপ বিশ্বাস। তাঁর মতে, “আমি ইন্ডাস্ট্রিতে কোনওদিন কোনও রাজনীতি করিনি, করবও না। এটা এতগুলো মানুষের রুজিরুটির ব্যাপার। এটা শিল্প। ক্রিয়েটিভ কাজ। মাথা খাটিয়ে খেতে হয়, এই মানুষগুলোকে। এখানে রাজনৈতিক রং না চড়ানোই ভাল। ফেডারেশন একটা অরাজনৈতিক সংগঠন। এই অরাজনৈতিক সংগঠনে কেউ রাজনীতি চায় না।”
পাশাপাশি তিনি পরোক্ষভাবে শনিবারের বিজেপি কনফারেন্সকেও ঠুকেছেন। তিনি বলেন, “প্রায় ১০ হাজার কলাকুশলীরা আজ জড়ো হয়েছে মিটিংয়ে। জনসমুদ্র। আর সবাই এখানে ইন্ডাস্ট্রির কার্ড হোল্ডার। বাইরের কেউ নেই। হয়তো অনেক প্রলোভনের স্বীকার হবেন কলাকুশলীরা। অনেক ঝঞ্ঝা আসবে। কিন্তু সবাইকে এক থাকতে হবে, টলিউডকে ভারতবর্ষের ১ নম্বর জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।” অন্যদিকে শঙ্কুদেব পন্ডার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত টেকনিশিয়ান ও কলাকুশলীদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া ও সমস্যার সমাধানে রাস্তায় নেমে লড়াই করতেই আমরা বঙ্গীয় চলচ্চিত্র পরিষদ গড়ে তুলেছি।” তাঁর দাবি, “রাজ্যের শাসক দলের মদতপুষ্ট গোষ্ঠী বা সিন্ডিকেটরাজ আর চলতে দেওয়া যাবে না এখানে।”
[আরও পড়ুন: প্রতিশ্রুতিই সার, সাতদিনে বকেয়া মেটানোর আশ্বাস পেয়েও ক্ষুব্ধ টলিপাড়ার টেকনিশিয়ানরা]
প্রসঙ্গত, রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপির প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রভাব পড়েছিল স্টুডিও পাড়াতেও। কিন্তু সমস্যা দাঁড়িয়েছিল বিজেপি প্রভাবিত একাধিক সংগঠন মাথা তোলায়। প্রত্যেকেই নিজেদেরকে ‘বিজেপি অনুমোদিত’ বলে দাবি করায় ধন্দে পড়েছিলেন টলিউডের শিল্পীরা। সেকারণে সব সংগঠনকে মিলিয়ে একটি ছাতার তলায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয় সংঘ নেতৃত্ব। তার ফলশ্রুতিস্বরূপ জন্ম বঙ্গীয় চলচ্চিত্র পরিষদের। তবে, আলাদা করে কলাকুশলীদের নিয়ে টলিউডে শাখা বিস্তার করে তার রাশ শঙ্কুদেবের হাতে দিতে নারাজ সংঘ। শঙ্কুদেবের হুমকি, “কাজ শুরু করে দিয়েছি। সাত দিনের মধ্যে এই বকেয়া না মেটানো হলে ইমপার অফিসের সামনে অনশন শুরু হবে। রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু হবে।” তবে, টলিউডের অন্দরের কেউ বিজেপি সংগঠন বঙ্গীয় চলচ্চিত্র পরিষদে যোগ দিচ্ছেন কি না, তা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ শঙ্কুদেব পন্ডা। ঘাসফুল বনাম পদ্মফুল সংঘাতে টলিউডের টেকনিশিয়ানদের সমস্যার সুরাহা আদৌ কতটা হবে, সেটাই দেখার এখন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.