কল্যাণ চন্দ, বহরমপুর: পাড়ার ‘মিষ্টি’ আর নেই! বিশ্বাস হয় না। বিশ্বাস হচ্ছে না বহরমপুরের মানুষজনের। রবিবার দুপুরে চলে গিয়েছেন টেলি অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা (Aindrila Sharma)। চলে গিয়েছেন ‘না ফেরার দেশে’। সেই খবর পাড়ায় পৌঁছতেই ভেঙে পড়লেন বন্ধুবান্ধব থেকে প্রতিবেশী সকলেই। চোখের জল যেন বাঁধ মানছে না কারও।
বহরমপুরে (Baharampur) ইন্দ্রপ্রস্থে ঐন্দ্রিলা শর্মার বাড়ি। তাঁর ডাক নাম ‘মিষ্টি’। বাবা উত্তম শর্মা পাঁচগ্রামের হাসপাতালের চিকিৎসক, মা শিখা শর্মা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সিনিয়র নার্স। বহরমপুরেই বড় হয়েছেন ঐন্দ্রিলা। এলাকার অনেকেই ‘মিষ্টি’ নামে চিনত টেলি অভিনেত্রীকে। বহরমপুর কাশীশ্বরী বালিকা বিদ্যালয় পড়াশোনার পর অ্যাঙ্কারিং শুরু করেন ঐন্দ্রিলা। এরপরে মডেলিং। সেখান থেকে একেবারে টেলিভিশনের পর্দায়। বাংলা সিরিয়াল ‘জিয়ন কাঠি’ পরিচিতি এনে দেয় ঐন্দ্রিলাকে। বিনোদন জগতে কাজ করার সময়ই ক্যানসার আক্রান্ত হন তিনি। দু’দুবার ক্যানসার জয় করে অভিনয় জগতে ফিরেছিলেন।
দীর্ঘ লড়াইয়ের পর খানিকটা সুস্থ হলেও বেশিদিন তা স্থায়ী হল না। কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে ছিলেন ২৪ বছরের ঐন্দ্রিলা। টানা ২০ দিনের সেই লড়াই শেষ হয়ে গেল রবিবার। ”ছুটির দিনে সবাইকে ছুটি দিয়ে গেল আদরের মিষ্টি, একটানা বলতে বলতে কেঁদেই ফেললেন বহরমপুরের ফিল্ম মেকার অনির্বেদ চট্টপাধ্যায়। অনির্বেদ বলেন, প্রায় আড়াই বছর আগে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় ঐন্দ্রিলার। বেশ কিছু সিরিয়ালে বাঙালির মন কেড়েছিল ঐন্দ্রিলা। জুন মাসে বহরমপুর রবীন্দ্র সদন প্রেক্ষাগৃহে এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে একটি শর্ট ফিল্ম নিয়ে আলোচনা চলছিল ঐন্দ্রিলার সঙ্গে। রাজিও হয়ে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী। কিন্ত সেই শর্টফিল্মের মতই যেন শর্ট লাইফে চলে গেলেন ঐন্দ্রিলা।
পাড়ার ‘মিষ্টি’ মেয়েকে হারিয়ে শোকার্ত এলাকার লোকজন থেকে বন্ধুরা। বহরমপুরের প্রাচীন স্টুডিও মালিক সুজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, ”ছোট থেকেই ভাল ড্যান্স করত ঐন্দ্রিলা। একটি অনুষ্ঠানের ছবি তুলতে গিয়ে পরিচয় হয়।” মাধ্যমিক পাস করার পর ঐন্দ্রিলাকে কলকাতায় নিয়ে যান সুজিতবাবু। ধীরে ধীরে বাংলা সিরিয়ালের জগতে ঐন্দ্রিলা পৌঁছে যায় সুজিত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরেই। ঐন্দ্রিলার মৃত্যু কোনওভাবে মেনে নিতে পারছেন না সুজিতবাবু। তিনি বলেন, ”হাতে ধরে মানুষ করেছি ঐন্দ্রিলাকে। ক্যানসারের সময় মাথার চুল উঠে যাওয়ায় সিরিয়াল জগতে জায়গা পাওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই সমস্যা সমাধানও করেছি।”
ঐন্দ্রিলার বড়পর্দায় অভিনয় করার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠল না বলে চোখের জল মুছলেন তিনি। এদিকে ইন্দ্রপ্রস্থের প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, ছাত্রী হিসেবে খুব মেধাবী ছিলেন মিষ্টি। ভাল ব্যবহার ছিল বলেই সকলে মিষ্টি বলে ডাকতো তাকে। অল্প বয়সেই সেই মিষ্টি ছেড়ে চলে গেল ইন্দ্রপ্রস্থকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.