সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তাঁর ‘ভূতের ভবিষ্যত’ বাঙালির ঝিমিয়ে পড়া রসবোধে ঢেউ তুলেছিল। বাংলা সিনেমার ইতিহাসে তা নিঃসন্দেহে ইতিমধ্যেই নয়া মাইলফলক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। এরপর আশ্চর্য প্রদীপ-এ তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন এই সময়ের সুখের অসুখ। এবার পরিচালক অনীক দত্ত তৈরি তাঁর ‘মেঘনাদবধ রহস্য’ নিয়ে। কিন্তু ছবির প্রথম অফিসিয়াল টিজার মুক্তির পরই তৈরি হল বিতর্ক।
কী নিয়ে বিতর্ক? টিজারে দেখা গিয়েছিল, মেঘনাদবধ কাব্য-এর ‘কাব্য’ কেটে উপরে লেখা আছে ‘রহস্য’। ঠিক সেইমতো মিলিয়ে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বদলে লেখা হয়েছে পরিচালক অনীক দত্তর নাম। রহস্যের বাকিটা ক্রমশ প্রকাশ্য বলেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু এ নিয়ে টুইটারে প্রশ্ন তোলেন প্রযোজক শিবাজী পাঁজা। টুইটারে তিনি জানান, ‘এটা লজ্জাজনক। কী করে মাইকেলের নামের উপর একটা ছবিতে বাজিমাত করা পরিচালকের নাম বসানো হল?’ এ পোস্টার যাঁরা তৈরি করেছেন ও প্রকাশ করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ গোপন রাখেননি তিনি।
অপর এক টুইটে তিনি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি বিসর্জন-এর পোস্টারের সঙ্গে এর তুলনা টেনেছেন। বিসর্জন-এও লেখা ছিল যে সেটি রবীন্দ্রনাথের নয়। এখানেও মাইকেলের নয় বোঝাতেই মাইকেলের নামের উপর ওভ্যারল্যাপ ছিল। পাশাপাশি এই দুই ছবি দিয়ে তাঁর বক্তব্য, এটাই ‘শিক্ষা ও রুচির তফাৎ’।
যাঁর ছবির পোস্টার নিয়ে এত বিতর্ক তাঁর কী বক্তব্য? পরিচালক অনীক দত্ত জানাচ্ছেন, “মাইকেলের নাম কেটে আমার নাম লেখা হয়নি। অল্প একটা ওভারল্যাপ আছে। পুরো বিষয়টিতে হিউমার আছে। কেউ যদি সে রসে বঞ্চিত হন, তাহলে কিছু করার নেই। আমি মাইকেলের সমতুল্য তো নই-ই, আর তাঁর প্রতি আমার কোনও অশ্রদ্ধাও নেই। থাকলে এই ছবিটাই করতাম না। এখানে হালকা একটা হিউমার আছে এই যা। তাছাড়া ‘কাব্য’ থেকে যখন ‘রহস্য’ হয়েছে, তখন তো সেটা আর মাইকেলের থাকছেও না। এটা স্বতন্ত্র বিষয়। যাঁরা এ নিয়ে অভিযোগ করছেন, মাইকেলকে নিয়ে তাঁদের কতটা শ্রদ্ধা ভক্তি, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। মেঘনাদবধ কাব্যের পাঁচ লাইন বলতে পারবেন কি না আমি জানি না। আসলে আমার আগের একটি ছবিতে বলেছিলাম, নেপালিদের যেমন ভোজালি, শিখদের কৃপাণ, বাঙালির অস্ত্র তেমন কাঠি। কোথা থেকে কী হচ্ছে আমি তা বুঝি, এর সঙ্গে মাইকেলের কোনও সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। প্রতি ইন্ডাস্ট্রির কিছু নিজস্ব রাজনীতি থাকে, এও সেরকমই কিছু। যিনি এই অভিযোগ তুলেছেন তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনি না, তবে সংবাদমাধ্যমে খবরের সূত্রে তাঁর ছবি দেখেছি। সংবাদটি কী সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার মতো শিক্ষা বা রুচি আমার সত্যিই নেই। তবে যে কেউ তাঁর ব্যক্তিগত মতামত জানাতেই পারেন। তা নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। আমি মাইকেলকে কোনওভাবেই অশ্রদ্ধা করার কথা ভাবতে পারি না, তা জানিয়ে রাখলাম।”
প্রতিক্রিয়ায় ইন্ডাস্ট্রির রাজনীতির প্রসঙ্গ এনেছেন অনীক। কোনও ইন্ডাস্ট্রিই হয়তো তার বাইরে নয়। তবে আঞ্চলিক সিনেমা হিসেবে বাংলা ছবির ইন্ডাস্ট্রির আরও ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। আঞ্চলিক সিনেমা হিসেবে সারা দেশে অভূতপূর্ব উত্থানের কাহিনী সত্যি করে তুলেছে ‘বাহুবলী’। বিষয়ে ও বৈচিত্রে বাংলা ছবিও যে পিছিয়ে নেই, তা বিসর্জন-এর জাতীয় পুরস্কারেই প্রমাণ মিলেছে। তাই তরজা তুলে রেখে ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে বাংলা ছবির আরও এগিয়ে যাক, এমনটাই আশা সিনেপ্রেমীদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.